E-Paper

সময়ের চাকাটা থামাও

সৌন্দর্য চিকিৎসায় হাইফু ট্রিটমেন্টের কদর বাড়ছে। এতে সার্জারির প্রয়োজন নেই, তবুও যৌবন থেমে থাকে।

চিরশ্রী মজুমদার 

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৫ ১০:০৯
Share
Save

ইদানীং বলিউডের অনেক তারকাই তারুণ্য আর জৌলুস ধরে রাখতে কসমেটিক সার্জারিকেই প্রথম পছন্দ বলে মনে করছেন না। কারণ, প্রথমেই সার্জারির রাস্তা নিলে চেহারায় একটা কৃত্রিমতা চলে আসার সম্ভাবনা থাকে, মুখের বদলটাও সহজেই অন্যের চোখে ধরা পড়ে যায়। তাই অনেকেই ঝুঁকছেন নন ইনভেসিভ ট্রিটমেন্টের দিকে, অর্থাৎ যে ক্ষেত্রে সুচ না ফুটিয়েই, ছুরি-কাঁচির সাহায্য ছাড়াই বয়সের দাগ মুছে ফেলা যায়। অনেকেই পছন্দ করছেন হাই ইনটেন্সিটি ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড (হাইফু) ট্রিটমেন্ট। কারণ এ ক্ষেত্রে শল্যচিকিৎসা ছাড়াই খুব সূক্ষ্ম ভাবে ত্বকের যৌবন ধরে রাখা যায়, মুখটাও আচমকা পাল্টে যায় না। তাই অ্যাস্থেটিক ক্লিনিকগুলোতে হাইফু-র চাহিদা বাড়ছে। তারকাবৃত্ত তো বটেই, সাধারণ মানুষও ত্বক টানটান রাখতে এই পদ্ধতির সাহায্য নিচ্ছেন। হাইফু ত্বকের ‘এজিং’ প্রক্রিয়াকে শ্লথ করে দেয়। এই চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করলেন ত্বকবিশেষজ্ঞরা।

পদ্ধতি বিষয়ে

হাইফু-র ক্ষেত্রে আলট্রাসাউন্ড রে-কে ফোকাসড অর্থাৎ একমুখী রেখে ত্বকের মধ্যে চালনা করা হয়। ফলে সেখানে ত্বকের উপরিভাগে ক্ষত তৈরি হয়, যখন সেই স্তরটা সেরে ওঠে, তার সঙ্গে নতুন কোলাজেন তৈরি হয়ে যায়। এতে কিছু মেদও ঝরতে পারে। অ্যাস্থেটিক ডার্মাটোলজিস্ট ডা. ইশাদ আগরওয়াল বললেন, “এই অ্যান্টি-এজিং ট্রিটমেন্টটিতে চামড়া টানটান হয়, মুখটা একটু সরুও লাগে। মোটামুটি এক ঘণ্টার মধ্যেই হাইফু হয়ে যায়। তবে প্রক্রিয়ায় অল্প ব্যথা হতে পারে, তাই মুখে অবশ করার ক্রিম লাগিয়ে হাইফু করা হয়। এর পর মুখটা দু’-এক দিন লাল দেখাতে পারে। কুলিং ক্রিম, ময়শ্চারাইজ়ার ও রোজকার ত্বক পরিচর্যার রুটিন অনুসরণ করুন। ট্রিটমেন্টের এক মাস পর থেকে ত্বক টানটান ও ঝকঝকে দেখাবে।”

‘মাইক্রো-এজিং’ শব্দটি এখন ইনস্টাগ্রামে বহুল প্রচলিত। এই ধারণা অনুযায়ী, ২৫ বছর বয়স হলেই চোখের চারপাশে, কপালে হালকা বলিরেখা দেখা দিতে শুরু করে, যা ক্যামেরায় ঠিক ধরা পড়ে যায়। তাই এই বয়স থেকেই অ্যান্টি-এজিং নিয়ে সচেতনতা প্রয়োজন। ত্বকচিকিৎসক ডা. পুনম নেগি বলছেন, “কুড়ির কোঠা থেকেই বছরে এক শতাংশ হারে ত্বকের কোলাজেন ক্ষয় হয়। মেনোপজ়ের পর এই ক্ষতির মাত্রা বাড়ে। ক্ষতি আটকাতে বিজ্ঞান নানা উপায় বার করেছে। ইঞ্জেকশন, ফিলার্স, আলথেরাপি হাইফু (আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুমোদিত) সব কিছুরই বিশেষ কার্যকারিতা রয়েছে। বলা হয়, ৪০ বছর বয়সের পর বছরে এক বার হাইফু করালে শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন পড়বে না।”

কিন্তু এই হাইফুর অনেক জাপানি বা কোরীয় অনুকৃতি রয়েছে। সেগুলি থেকে সাবধান থাকা ভাল। বিউটি পার্লারে কোনও মেকওভার করালে তা সাধারণত ক্ষণস্থায়ী হয়। কিন্তু চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে করা প্রকৃত হাইফু-তে দীর্ঘ দিন ধরে মাংসপেশি শক্তপোক্ত থাকবে, ঝুলে যাবে না। আসল যন্ত্রের মাধ্যমে এক জন ডাক্তারই বুঝতে পারেন, কোন পেশিতে ‘রে’ চালিত হবে, সেই পেশি হাড়ের থেকে কতটা উপরে আছে ইত্যাদি। মুখ ছাড়াও গলা, হাত, বুক, উরু ইত্যাদি জায়গায় হাইফু করা যায়।

একটি অ্যাস্থেটিক ক্লিনিকের কর্ণধার ডা. দেবশ্রী বণিক বললেন “পেট, নিতম্ব বা হাত মোটা দেখালে সেখানেও হাইফু করানো হয়। এ ক্ষেত্রে আলট্রাসাউন্ড এনার্জি ত্বকের গভীর স্তরে প্রবেশ করে কোলাজেন, ইলাস্টিসিটি তৈরিতে জোর দেয়। ফলে, ভিতর থেকে টানটান হয়। ত্বক হাইড্রেটেড হয়ে ওঠে, ঝকঝকে, নিটোল দেখায়।”

কবে থেকে শুরু করবেন?

হাইফু একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধক চিকিৎসা। ৩০ বছর হলেই মুখে বয়সের আঁচড় স্পষ্ট হতে শুরু করে। ইশাদের মতে, তখনই হাইফু শুরু করলে ‘এজিং’ প্রক্রিয়া শ্লথ হয়ে যাবে। বয়সের ছাপ ঠেকিয়ে রাখা যাবে।

হাইফু যন্ত্রগুলির ‘প্রোব’ (শলাকা) তিন-চার রকমের হয়। মুখের চামড়া একটু বেশি ঝুলে গেলে, ৪-৫ মিলিমিটার গভীরতা পর্যন্ত যায় এমন প্রোব ব্যবহৃত হয়। সামান্য কিছু বয়সের রেখা থাকলে ৩ মিলিমিটার ‘প্রোব’-এই কাজ হয়। কপালের চামড়া পাতলা হয়ে গেলে ২ মিলিমিটার ‘প্রোব’ ব্যবহার করা হয়।

হাইফু প্রধানত চামড়া টানটান করে। চেহারাকে ‘টোনড’ দেখাতে চাইলে শুধু হাইফু করালে কাঙ্ক্ষিত ফল পাবেন না। সে ক্ষেত্রে ফ্যাট ডিসলভিং মেশিন ব্যবহারের সঙ্গে ‘স্কিন টাইটনিং’-এর জন্য ১৩ মিলিমিটার প্রোব দিয়ে হাইফু করাতে হবে। ভাল যন্ত্রের সহায়তা নিলে বছরে দু’-এক বার হাইফু করালেই যথেষ্ট। প্রতি সেশনে খরচ তিরিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকা। পুনম জানালেন, বছরে কত বার হাইফু করাতে হবে, তা ত্বকের ইলাস্টিসিটির উপরেও নির্ভর করে। বয়স পঞ্চাশের উপরে হলে ছ’মাস বা ক্ষেত্রবিশেষে তিন মাস অন্তর হাইফু করাতে হয়। কোনও অসুখ বা স্ট্রেসের সমস্যা থাকলেও ‘এজিং’ ত্বরান্বিত হয়। চিকিৎসক এই সমস্যাগুলোকে সামলে হাইফু-র পরামর্শ দেন।

সতর্কবার্তা

ইশাদ বারবার বললেন, “হাইফু ফেশিয়াল নয়, এটি সৌন্দর্য-চিকিৎসা। দন্তচিকিৎসকের কাছে বা বিউটি পার্লার-এ হাইফু করালেও স্নায়ু আহত হওয়া, পার্মানেন্ট ফ্যাট লস, মুখের গঠন বদলানোর মতো সমস্যা হতে পারে।” খুব সরু মুখে বা মুখে একদম ফ্যাট না থাকলে হাইফু করা যায় না। বয়সের কারণে মুখ অতিরিক্ত কুঁচকে ছোট হয়ে গেলেও হাইফুতে কাজ হওয়া মুশকিল। বেশি বয়সে কোলাজেনও সে ভাবে তৈরি হবে না। আর কোথাও অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে চিকিৎসককে অবশ্যই জানাতে হবে।

হাইফু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন চিকিৎসা। বিশ্বস্ত ক্লিনিকের অভিজ্ঞ ত্বকবিশেষজ্ঞ বলে দেবেন, কোথায় হাইফু করা সম্ভব, কোন অংশে করানো যাবে না। তবে ভুল জায়গা থেকে ত্বকের ভুল অংশে হাইফু করালে কোনও সমস্যা হলেও সেটা শুধরে দেওয়া যায়। আশ্বাস দিচ্ছেন রূপচিকিৎসকেরা। কারণ এ ক্ষেত্রে কোনও ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় না। এই জন্যই বোটক্স, ফিলার ইত্যাদির বদলে অনেকেরই আস্থা এখন হাইফু-তে। কারণ এতে রাতারাতি বয়স কমে যায় না ঠিকই, তবে যৌবন থেমে থাকে।


ছবি: অমিত দাস (সৈরীতি), জয়দীপ মণ্ডল (সুস্মিতা); মডেল: সৈরীতি বন্দ্যোপাধ্যায় ঝা, সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়; মেকআপ: সৌরভ সাহা; স্টাইলিং: প্রিয়াঙ্কা পরিদা ও শ্রেষ্ঠা রায়; শুটিং স্পট:ইমেজ ক্লিনিক, ল্যান্সডাউন টেরেস

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Skincare healthy skin

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।