এক মহাদেশের মশা অন্য মহাদেশে নিয়ে যাচ্ছে ম্যালেরিয়ার জীবাণু? ফাইল চিত্র।
আফ্রিকার মাটিতে এক নতুন ধরনের ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। যা কপালে ভাঁজ ফেলেছে বিশেষজ্ঞদের। তার চেয়েও বড় কথা, সেই মহাদেশে এই নতুন ম্যালেরিয়ার মশার আমদানি হয়েছে ভারত থেকে— দাবি এমনটাই।
বর্তমানে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যাবতীয় নজরের বেশির ভাগটাই পড়ে রয়েছে করোনার দিকে। কিন্তু ম্যালেরিয়ার মতো অসুখে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যা মোটেই কমেনি। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে সারা পৃথিবীতে ৪ লক্ষের বেশি মানুষ প্রাণ হারান ম্যালেরিয়া সংক্রমণে। এর মধ্যে ৯৪ শতাংশই আফ্রিকায়। যদিও ম্যালেরিয়ার যথাযথ ওষুধ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন বিজ্ঞানের হাতে রয়েছে। এত কিছুর পরেও যে মহাদেশে ম্যালেরিয়া সংক্রমণের ছবিটা এত গোলমেলে, সেখানে নতুন ম্যালেরিয়ার উৎপাতে চিন্তিত সকলেই।
কেমন এই নতুন ম্যালেরিয়া? নেদারল্যান্ডস এবং ইথিওপিয়ার যৌথ উদ্যোগে হওয়া পতঙ্গবাহিত অসুখ সংক্রান্ত গবেষণা বলছে, নতুন এই ম্যালেরিয়ার পিছনে রয়েছে অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাই মশার ভূমিকা। বলা হচ্ছে, এই প্রজাতির মশা ভারত থেকেই পৌঁছেছে ওই এলাকায়। ফলে আফ্রিকার বেশ কিছু শহরে নতুন ধরনের ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ শুরু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফ্রিকার শহরাঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ সে ভাবে ছিল না। ম্যালেরিয়া মূলত গ্রামেই দেখা যেত। কিন্তু হালে শহরেও ম্যালেরিয়া হচ্ছে। তার সঙ্গে গ্রামের ম্যালেরিয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। কেন গ্রামের মশা শহরাঞ্চলে ম্যালেরিয়া ছড়াতে পারে না? কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস বলছেন, ‘‘মশাদের এলাকা ভাগাভাগি থাকে। গ্রামের দিকে যে অ্যানোফিলিসের কারণে ম্যালেরিয়া হয়, শহরে তা হয় না। শহরে ম্যালেরিয়ার জন্য অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাই দায়ী।’’
আফ্রিকার গবেষকদের দাবি, ভারতের শহরাঞ্চলের ম্যালেরিয়ার পরজীবী এবং আফ্রিকার এই নতুন ম্যালেরিয়ার পরজীবী হুবহু এক। কী ভাবে ভারতীয় ম্যালেরিয়া আফ্রিকায় পৌঁছতে পারে? দেবাশিসের মতে, ডেঙ্গির ক্ষেত্রে মশার ডিম এক দেশ থেকে অন্য দেশে গেলে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। কিন্তু ম্যালেরিয়ায় তেমন হবে না। ‘‘ম্যালেরিয়া ছড়াতে হলে, হয় আক্রান্ত ব্যক্তির মারফৎ ছড়াতে হবে, নয়তো প্রাপ্তবয়স্ক মশাকে এ দেশ থেকে ও দেশে যেতে হবে’’, বলছেন তিনি।
আফ্রিকাতেও এমন কথাই বলছেন গবেষকরা। তাঁদের ধারণা, বিমান বা জাহাজ যাওয়ার সময় হয়তো মশা তার মধ্যে ঢুকে ও দেশে পৌঁছেছে। তবে অকাট্য প্রমাণ ছাড়া এই তত্ত্ব মানতে নারাজ দেবাশিস। তাঁর কথায়, ‘‘জন্মস্থল থেকে স্টিফেনসাই-এর গতিবিধি ০.৮ থেকে ২.৫ কিলোমিটারের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত থাকে। ফলে প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’ তবে তাঁর মতে, ভারতীয় শহরাঞ্চলের ম্যালেরিয়া যদি আফ্রিকায় পৌঁছে যায়ও, সে ক্ষেত্রেও ভয় পাওয়ার বিশেষ কিছু নেই। কারণ এই ম্যালেরিয়া খুব ভয়াবহ রূপ ধারণ করে না।
তবে মশাভিত্তিক গবেষণা বলছে, এটাই প্রথম বার নয়। এর আগেও এশিয়ার ‘টাইগার’ মশার মহাদেশ বদল করার চরিত্র দেখিয়েছে। উত্তর ইউরোপে তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই মশার কারণে এমন কিছু অসুখ ইউরোপের ওই সব এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে, যার সঙ্গে সেখানকার মানুষের আগে পরিচয় ছিল না। ঠিক যেমন ভাবে, স্টিফেনসাই মশাবাহিত ম্যালেরিয়ার সঙ্গে পরিচয় নেই আফ্রিকার মানুষের। সেখানেই চিন্তায় রয়েছেন ওই মহাদেশের চিকিৎসকরা। নতুন রোগ না বড়সড় সঙ্কট ডেকে আনে সেখানে, সেই চিন্তায় আপাতত এই ম্যালেরিয়ার উপর নজরদারি বাড়াচ্ছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy