ফাইল ছবি
আচমকা বুকে ব্যথা হওয়ায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে হাজির এক প্রৌঢ়। চিকিৎসকদের জানালেন, আগে তাঁর তেমন কোনও শারীরিক সমস্যা ছিল না। বার বার জিজ্ঞাসা করায় জানা গেল, বেশ কয়েক দিন আগে তীব্র জ্বর, কাশি, সর্দিতে ভুগেছেন তিনি। কিন্তু করোনা পরীক্ষা করাননি। চিকিৎসকদের অনুমান, সংক্রমিত হয়ে সেরেও করোনা-পরবর্তী সমস্যায় ভুগছেন ওই প্রৌঢ়। তাঁদের মতে, আবার এমনও হয় যে, কোনও উপসর্গ নেই। তাই পরীক্ষা করানোর কথা মাথাতেও আসেনি। পরে অন্য সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পরে বোঝা গেল যে, ওই ব্যক্তির কোভিড হয়েছিল।
তবে কি নিঃশব্দে শরীরে ‘ছুরি’ মারছে কোভিড?
বঙ্গে অতিমারির চতুর্থ ঢেউ চললেও তাতে আমল দিচ্ছেন না বেশির ভাগ মানুষ। মাস্ক ছাড়া ঘোরা, ভিড়ে গাদাগাদি— সব কিছুই চলছে স্বাভাবিক নিয়মে। বিস্মিত চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘চতুর্থ ঢেউ চলে গিয়েছে, তা এখনও বলা হয়নি। আসলে কোভিডের মৃদু বা মাঝারি উপসর্গকে উপেক্ষা করছেন ওঁরা। কিন্তু এটা বুঝতে পারছেন না, এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব শরীরে পড়তে পারে। যা করোনা সংক্রমণের থেকেও বড় ক্ষতি করতে পারে।’’
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের শেষ কয়েক দিনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দৈনিক আক্রান্ত এক হাজারের নীচে রয়েছে। চিকিৎসক মহলের দাবি, এর নেপথ্যে করোনার প্রকোপ কমে যাওয়া নয়। বরং বলা যায়, মানুষের পরীক্ষা করানোর প্রবণতা তলানিতে ঠেকেছে। সংক্রামক রোগের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত হলেও কেউ করোনা পরীক্ষা করাতে চাইছেন না। কেউ আবার ওই সব উপসর্গ নিয়েই ঘুরছেন। তাঁরা ভাবছেন, তেমন কিছু হয়নি।’’
শল্য-চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের কথায়, ‘‘যত সময় যাবে, ভাইরাসের উগ্রতা ও অ্যান্টিবডি তৈরির ক্ষমতাও কমবে, তা ঠিক। কিন্তু ডেল্টায় আক্রান্ত হলে ছয় থেকে নয় মাস সুরক্ষিত থাকা যেত। এখন সুরক্ষা-বলয়ের মেয়াদ ছয় সপ্তাহ থেকে মেরেকেটে তিন মাস।’’ ফলে এক জন ব্যক্তির বার বার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন দীপ্তেন্দ্র। তিনি আরও বলেন, ‘‘এক জন দু’-তিন বার আক্রান্ত হলে ভবিষ্যতে কী ধরনের ক্ষতি হবে, সেই সংশয়ও থেকে যাচ্ছে।’’ জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, এখন যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের সকলেরই কোনও উপসর্গ থাকছে না, তেমনটা নয়। জ্বর, কাশি, সর্দি, দুর্বলতার মতো বিভিন্নউপসর্গ নিয়েই সশব্দে হানা দিচ্ছে কোভিড। কিন্তু মানুষ সে সব উপেক্ষা করছেন। সংক্রমণ কেটে গেলেও কাশি, অনিদ্রা, দুর্বলতা, হাঁটু-কোমরে ব্যথা, হজমের গোলমালের মতো কিছু সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। মানুষ ভাবছেন, সে সবের কারণ অন্য। বহু ক্ষেত্রেই সেগুলিই কোভিড-পরবর্তী কারণ।
অনির্বাণের কথায়, ‘‘কারও ক্ষেত্রে আরও বড় সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ দিকে, রোগের অন্য কারণও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন রোগীকে জিজ্ঞাসা করে জানা যাচ্ছে, বিগতদিনে তিনি জ্বর বা করোনার অন্য উপসর্গে ভুগেছিলেন। কিন্তু পরীক্ষা না করানোয় জানা যায়নি কোভিডে আক্রান্ত কি না।’’ তিনি এবং অন্য চিকিৎসকেরাও জানাচ্ছেন,মানুষকে বুঝতে হবে করোনা শুধু হাঁচি, কাশি বা ফ্লুয়ে আটকে নেই। বরং এই সংক্রমণের ফলে শরীরে অন্য সমস্যা তৈরির বড় আশঙ্কা রয়েছে। তাই প্রত্যেককে সতর্ক হতে হবে। বিভিন্ন নির্দেশিকাতেও বার বার বলা হয়েছে, করোনামুক্ত হলেও নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে।
কারণ, স্বাস্থ্য শিবিরের পর্যবেক্ষণ, করোনা থেকে সুস্থ হলেও বিভিন্ন সমস্যা জাঁকিয়ে বসছে শরীরে। ‘লং কোভিড’ বা দীর্ঘস্থায়ী কোভিডে বেগ পেতে হচ্ছে রোগীদের। চিকিৎসকেরা এটাও জানাচ্ছেন, করোনা-পরবর্তী পর্যায়ে অনেকেরই অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন (হার্ট রেট), হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বৃদ্ধি, হৃদ্যন্ত্রের কর্মক্ষমতা কমার সমস্যা দেখা যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার করোনার মৃদু উপসর্গযুক্তদের কাশি সহজে কমছে না কিংবা কফ উঠছে। যাঁরা মাঝারি উপসর্গযুক্ত বা সঙ্কটজনক হয়েছিলেন, তাঁদের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে। একই ভাবে স্নায়ুঘটিত রোগের প্রবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রেন স্ট্রোক এবং ভুলে যাওয়ার মতো সমস্যা বাড়ছে। কিডনির অসুখে যাঁরা আগেই আক্রান্ত ছিলেন, তাঁদের আরও সমস্যা মাথাচাড়া দিচ্ছে।
কিন্তু কোভিড-বিধি উপেক্ষা করে এবং করোনার উপসর্গ সত্ত্বেও পরীক্ষা না-করিয়ে মানুষ বুঝতে পারছেন না তাঁর পরবর্তী শারীরিক সমস্যার উৎস কী? তাই চিকিৎসকদের সতর্ক বার্তা, ‘‘অতিমারি পর্বে করোনা-বিধি মেনে চলা ও শারীরিক সমস্যায় বিশেষ সতর্ক থাকাই একমাত্র পথ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy