Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
DIET

ফ্যাট পুড়িয়ে ফেলুন শরীরেই, এই নিয়মে খেলে কিছুতেই বাড়বে না ভুঁড়ি

সহজ কিছু রাস্তা আছে ফ্যাট কমানোর। রইল সে সবের সুলুকসন্ধান।

এই নিয়মেই কমতে থাকবে পেটের মেদ। ছবি: শাটারস্টক।

এই নিয়মেই কমতে থাকবে পেটের মেদ। ছবি: শাটারস্টক।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৭:১৮
Share: Save:

চর্বি সহজে গলে না। সে কথা ভুল নয় একটুও। ডায়েটিং–ব্যায়ামে সারা শরীরের মেদ ঝরলেও ভুঁড়িটির যে খুব বেশি হেরফের হয় না, সে অভিজ্ঞতা কমবেশি অনেকেরই আছে। মানুষ যখন মোটামুটি ঠিকঠাক সময়ে নিয়ম মেনে খান, খাবার ভেঙে শরীরে যে গ্লুকোজ তৈরি হয়, তার জোরে চলে শরীরের ভিতরের–বাইরের যাবতীয় কাজ।

ডায়েটেশিয়ান সুমেধা সিংহের মতে, ‘‘কখনও যদি ঠিক সময়ে শরীরে খাবার না আসে, বিশেষ করে কার্বোহাইড্রেট, প্রথম ১২–১৩ ঘণ্টা লিভারে জমে থাকা গ্লুকোজ দিয়ে শরীর কাজ চালায়৷ তা শেষ হওয়ার পর আসে ফ্যাটের পালা। ফ্যাট ভেঙে ঘণ্টায় ৮–১০ গ্রামের মতো গ্লুকোজ তৈরি হয়। তার অর্ধেক যায় ব্রেনে৷ অর্ধেকে চলে শরীর৷ অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেটের আকাল না হলে চর্বিতে টান পড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, একমাত্র যদি না সাঙ্ঘাতিক রকমের ব্যায়াম করে গ্লুকোজ সব পুড়িয়ে দিতে পারেন।’’

চর্বি জমার মূলেও কিন্তু আছে কার্বোহাইড্রেটের হাত৷ বেশি খেলে ইনসুলিন হরমোনের যোগসাজসে তা ফ্যাট হিসেবে শরীরে জমে যায়। অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট কম খেয়ে শরীরে গ্লুকোজের জোগান কমিয়ে ও ভাল করে ব্যায়াম করে অতিরিক্ত গ্লুকোজ নিঃশেষ করতে না পারলে শরীর কোনও ভাবেই ফ্যাট বার্নিং মেশিন হতে পারবে না। তা বলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সহজ কিছু রাস্তা আছে। রইল সে সবের সুলুকসন্ধান।

আরও পড়ুন: দুধ থেকেও সমস্যা! তা হলে তার পরিবর্তে খান এ সব

পেটের মেদে টান ধরাতে নজর রাখুন খাবার পাতে।

ফ্যাট গলানোর রাস্তা

ফ্যাট গলান ফ্যাট খেয়ে: ফ্যাট খেলে পেট অনেক ক্ষণ ভরা থাকে, তৃপ্তিও বেশি হয়৷ বশে থাকে ওজন ও চর্বি। তবে ভাজা, প্রসেস্ড ফুড বা ফাস্ট ফুড থেকে পাওয়া ফ্যাট নয়। এরা হল ক্ষতিকর ফ্যাট৷ অল্প করে উপকারি ফ্যাটসমৃদ্ধ বাদাম–বীজ, অ্যাভোক্যাডো, গোটা ডিম, তৈলাক্ত মাছ, দুধ, পি-নাট বাটার ও অলিভ অয়েল খান।

কার্বোহাইড্রেট কম: মিষ্টি–ময়দা–নরম পানীয়–ফলের রস বাদ, ভাত–রুটি–পাউরুটি কম৷ ব্রাউন রাইস–ব্রেড, আটার রুটি–পাস্তা–নুডুল, খোসাসমেত আলুতে সমস্যা কম। তাও আগের চেয়ে কম খান৷ ফল খান মাপ মতো। সবুজ শাক–সব্জি পর্যাপ্ত৷ পূর্ণবয়স্ক, সুস্থ ও সচল মানুষ সারা দিনে ১০০ গ্রাম চালের ভাত বা আটার রুটি, ৫০ গ্রাম ডাল, ৫০০ গ্রাম শাক–সব্জি, অন্তত ২০০ গ্রাম ফল ও এক কাপ দুধ খান।

পর্যাপ্ত প্রোটিন: প্রোটিন খেলে খিদে কমে, পেশী তরতাজা থাকে। ক্যালোরি খরচ বাড়ে। পূর্ণবয়স্ক, সুস্থ ও মাঝারি সচল মানুষ এক গ্রাম/কেজি–র হিসেবে খান৷ অর্থাৎ ৬০ কেজি ওজন হওয়ার কথা হলে খাবেন ৬০ গ্রাম। বেশি ব্যায়াম করলে এর দেড়গুণ বা দ্বিগুণ খেতে হতে পারে। ১০০ গ্রাম মাছ–মাংস–ডালে ২০ গ্রাম প্রোটিন থাকে। ৫০ গ্রাম ডিমে থাকে ৬–৬.৫ গ্রাম, ১০০ মিলি দই বা দুধে ৪ গ্রাম। কোনটা কী ভাবে খাবেন তা ঠিক করুন।

ফ্যাট কমানোর যুদ্ধে ফাইবার: পূর্ণবয়ষ্ক, সুস্থ ও মাঝারি কর্মক্ষম মানুষ মাপ মতো শাক–সব্জি–ফল ও হোল গ্রেইন খেলে ১২–১৪ গ্রাম ফাইবার পায় শরীর৷ তাতে পেট বেশি ক্ষণ ভরা থাকে, ১০ শতাংশের মতো ক্যালোরি কম ঢোকে ও ৪ মাসে দু’–এক কেজির মতো ওজন কমে৷ অতটা না খাওয়া হলে দিনে দু’–বার দু’–তিন চামচ করে ইসবগুল খেতে পারেন।

সন্ধের পর স্টার্চ কম: বিকেলের পর থেকে খাটাখাটনি কমে যায় বলে স্টার্চ যত কম খাবেন তত ভাল৷ তার বদলে খান শাক–সব্জি, স্যালাড, ক্লিয়ার স্যুপ, মাছ/চিকেন/পনির।

রাতের খাবার বিকেলে: ডিনার করুন ৬–৭টা, বড়জোর ৮টায়। তার পর ঘরের কাজ সারুন, হাঁটাহাটি করুন৷ ঘণ্টা দুয়েক পর ঘুমতে যান।

আরও পড়ুন: কিডনির যত্ন নিন এখন থেকেই, সচেতন হোন এ সব বিষয়ে

ডায়েট সাজান বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো।

ক্রাশ ডায়েট নয়: খুব কম খেলে পেটে খিদে থাকে৷ বাড়ে ভুলভাল খাওয়া৷ তা ছাড়া দীর্ঘ দিন ক্রাশ ডায়েট করলে বিপাক ক্রিয়ার হার কমে গিয়ে পরে সমস্যা বাড়ে।

ক্যালোরিহীন তরল: চিনি–দুধ ছাড়া চা–কফি কয়েক বার খেতে পারেন৷ জল খান ৮–১০ গ্লাস অন্তত৷ সহ্য করতে পারলে একটু ঠান্ডা জলই ভাল।

খাওয়ার নিয়ম: খাওয়ার সময় ঠিক রাখুন৷ পেট একটু খালি রেখে খান৷ দিনে ৩ বার মূল খাবারের সঙ্গে ইচ্ছে হলে মিড মর্নিং ও বিকেলে হালকা কিছু খেতে পারেন।

নিশ্ছিদ্র ঘুম: খিদে, খাই–খাই ভাব ও চর্বি কমাতে ভাল ঘুম চাই৷ কাজেই সন্ধের পর থেকে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, গম্ভীর আলোচনা, কফি পান ইত্যাদি বন্ধ করুন।

ডায়েট সাজাতে পরিকল্পনা দরকার প্রথম থেকেই।

হাঁটুন খালিপেটে: সকালে দুধ–চিনি ছাড়া কফি/চা খেয়ে ৪০–৬০ মিনিট এমন ভাবে হাঁটুন, যাতে হার্টরেট আপনার বয়স অনুপাতে ঠিক থাকে (বয়স ভেদে কত হার্টরেট ঠিক তা জেনে নিন চিকিৎসকের কাছ থেকে)। ঠান্ডার সময় অল্প ঘাম হয় ও হাঁপিয়ে হলেও দু’–একটা কথা বলতে পারেন।

দিনভর সচল থাকুন: সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে ঘণ্টা চারেক একটানা বসে থাকলে কোলেস্টেরল ও ফ্যাট মেটাবলিজমের সমস্যা হয়৷ তাই সেই দিক রুখে দিতে পারলে অনেকটা ঝরঝরে থাকবেন। অফিসেও একটানা না বসে এক-দু’ ঘণ্টা অন্তর একটু হাঁটাহাঁটি করে আসুন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy