মহানায়কের বাড়ির লক্ষ্মীর সঙ্গে নাতবৌ দেবলীনা কুমার। ছবি: সংগৃহীত।
ভবানীপুরের গিরিশ মুখার্জি রোড, উত্তমকুমারের বাড়ি। সে বাড়ির কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। শোনা যায়, ছেলে গৌতমের জন্মের পর উত্তমকুমার বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো শুরু করেছিলেন। এখন পুজোর জাঁকজমক খানিক ম্লান হয়ে এলেও চট্টোপাধ্যায় বাড়ির তরুণ প্রজন্ম সেই ধারা এখনও বজায় রেখেছে। সম্পর্কে উত্তমকুমারের নাতবৌ, অর্থাৎ অভিনেতা গৌরব চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী দেবলীনা কুমার বলেন, “আমাদের বাড়ির লক্ষ্মী প্রতিমার বিশেষত্ব হল তাঁর মুখ। প্রথম বার আমার দিদিশাশুড়ির মুখের আদলে প্রতিমার মুখের ছাঁচ তৈরি হয়েছিল। সেই ধারা আজও বজায় রয়েছে।”
অনেকেই জানেন, মহানায়কের বাড়ির লক্ষ্মী প্রতিমা তৈরি হয়েছিল তাঁর স্ত্রী গৌরীদেবীর মুখের আদলে। তার নেপথ্যে একটি ইতিহাসও রয়েছে। সে সময়ে ‘যদুভট্ট’ ছবির শুটিংয়ে মূর্তি গড়ছিলেন নিরঞ্জন পাল। শুটিং ফ্লোরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে সেই দৃশ্য চোখে পড়ে উত্তমকুমারের। তিনি শিল্পীকে বাড়িতে ডেকে পাঠান লক্ষ্মী প্রতিমা গড়ার বায়না দেবেন বলে। শিল্পী বাড়িতে পৌঁছে উত্তমকুমারের খোঁজ করতে দেখলেন, গৌরীদেবী ঘর মুছছেন। তিনি ঘোমটার ফাঁক থেকে এক ঝলক তাকিয়ে শিল্পীকে বসতে বললেন আর তার পরে উত্তমকুমারকে ডেকে দিলেন। কিন্তু ওই মুহূর্তেই শিল্পীর চোখে মা লক্ষ্মীর ছবি আঁকা হয়ে গেল। তিনি ছাঁচ ভেঙে গৌরীদেবীর মুখের আদলে লক্ষ্মীমূর্তি গড়লেন। সেই থেকে আজও ভবানীপুরে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির লক্ষ্মী প্রতিমার মুখের গড়ন একই রকম হয়ে আসছে।
পুজোর আগের দিন কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা আনা হয়। তবে সেই মূর্তির পরনে থাকে লাল পাড় সাদা শাড়ি। বাড়িতে আনার পর নতুন করে সেই প্রতিমাকে সাজানো হয়। দেবলীনা বলেন, “প্রতি বার আত্মীয়-পরিজনের কেউ না কেউ শাড়ি দেন। এ বার যেমন আমার মা বেনারসি দিয়েছেন। সেই শাড়িটিই প্রতিমার অঙ্গে উঠবে। সঙ্গে সোনা, সোনার জল করা বেশ কিছু রুপোর গয়নাও থাকবে।” বিসর্জনের সময়ে আবার বেনারসি বদলে বাড়ির লক্ষ্মীকে সেই লাল পাড় সাদা শাড়িটি পরানো হয়। প্রথা মেনে দেবীর পরিহিত বেনারসিটি তুলে দেওয়া হয় বাড়ির বৌয়ের হাতে। দেবলীনা বলেন, “বাড়ির বৌ বলতে এখন আমিই। তাই কয়েক বছর ধরে ওই শাড়িটি আমার ভাগ্যেই থাকে।”
লক্ষ্মী এখানে ঘরের মেয়ে রূপে পূজিতা হন। তা সত্ত্বেও সব বাড়ির পুজোর নিয়ম তো এক নয়। পুজোর নিয়মে এ পার-ও পারের বিভেদও রয়েছে। আর পাঁচটি বাড়িতে যেমন ভোগ হয়, চট্টোপাধ্যায় বাড়িতেও দেবীর জন্য নানা রকম পদের আয়োজন করা হয়। তবে সেই ভোগ রাঁধার অধিকার সকলের নেই। পরিবারের দীক্ষিত সদস্যেরাই সেই ভোগ রাঁধতে পারেন। লুচি, পাঁচ রকম ভাজা, তরকারি, ডাল, চাটনি, মিষ্টিও থাকে। লক্ষ্মীপুজোয় নাড়ু থাকা আবশ্যক। তবে দেবলীনা জানিয়েছেন, মহানায়কের বাড়িতে নারকেল নাড়ু, তিলের নাড়ুর পাশাপাশি আনন্দ নাড়ুও থাকে। তিনি বলেন, “আমরা তো এ দেশীয়। তাই বাড়ির রীতি মেনে তৈরি হয় আনন্দ নাড়ু। নারকেল, তিল বা ক্ষীরের নাড়ুর চেয়েও ওই নাড়ুটির গুরুত্ব এ বাড়িতে বেশি।”
বাড়ির ছেলে-মেয়ে-বৌ সকলে মিলেই পুজোর কাজ ভাগ করে নেন। বাড়ির ছেলেরা সিল্কের জোড় পরে পুজোয় বসেন। পরের দিন আবার বদলে যায় দেবীর সাজ। চট্টোপাধ্যায় বাড়ির লক্ষ্মী প্রতিমা সেজে ওঠেন ফুলের সাজে। ফুলের মুকুট, মালা, বাজুবন্ধে তখন তিনি যেন বাড়ির নতুন বৌ। দেবীর সঙ্গে সঙ্গে ফুলের সাজে সাজানো হয় বাহনটিকেও। দেবলীনা বলেন, “পুজোর পরের দিন, অর্থাৎ বিসর্জনের আগে দেবীকে ফুলের সাজে সাজিয়েই বিদায় জানানো হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy