Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
stem cell

কোভিড চিকিৎসায় নয়া দিশা স্টেম সেল থেরাপি, কী এই উপায়, কতটা কার্যকর?

এই নয়া পদ্ধতি সার্বিক সাফল্য পেলে কোভিড-চিকিৎসার নয়া পথ খুলে যাবে।

কোভিড প্রতিরোধে নানা চিকিৎসাপদ্ধতির শরণ নিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ফাইল চিত্র।

কোভিড প্রতিরোধে নানা চিকিৎসাপদ্ধতির শরণ নিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ফাইল চিত্র।

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২০ ১৮:১২
Share: Save:

স্টেম সেল থেরাপি প্রয়োগ করতে প্রাণে বাঁচলেন ৭ জন কোভিড রোগী। এদের মধ্যে ৬ জন ইজরায়েলের। এক জন আমেরিকার বাসিন্দা।

কোভিড-১৯ রোগীকে সুস্থ করতে বিশ্ব জুড়ে নানা চিকিৎসাপদ্ধতির শরণ নিচ্ছেন চিকিৎসকরা। কোথাও প্লাজমা প্রতিস্থাপন, কোথাও কিছু অ্যান্টি ভাইরাল ড্রাগের সাহায্য নিয়ে, আবার কোথাও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে আঁকড়ে রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। এই তালিকায় অন্যতম সংযোজন এই স্টেম সেল থেরাপি।

মৃত্যুপথযাত্রী এই ৭ জন কোভিড-আক্রান্তের ফুসফুস থেকে শুরু করে হার্ট, কিডনি, লিভার সবই প্রায় জবাব দিয়ে দিয়েছিল। গতানুগতিক চিকিৎসায় সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ চেষ্টা হিসেবে তাঁদের দেওয়া হয় প্রসূতি মায়ের প্ল্যাসেন্টা থেকে সংগ্রহ করা বিশেষ ধরনের কোষ বা স্টেম সেল। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘প্লুরিস্টেমস অ্যালোজেনিক প্ল্যাসেন্টাল এক্সপ্যান্ডেড সেল’ বা ‘পিএলএক্স সেল’। এ বার কাজ হল ম্যাজিকের মতো।

আরও পড়ুন: অক্সফোর্ড ও ইম্পিরিয়ালের তৈরি করোনা-টিকার ফারাক কোথায়?

স্টেম সেল থেরাপি কী?

সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ও ভায়রোলজিস্ট অমিতাভ নন্দীর মতে, “সন্তান জন্মানোর পর মায়ের শরীর থেকে যে প্ল্যাসেন্টা বেরিয়ে আসে, তার মধ্যে রয়েছে এই সব স্টেম সেল। বিজ্ঞানীরা এখান থেকে কোষ নিয়ে তাকে পরিণত করেন স্মার্ট কোষে। এমন ভাবে প্রোগ্রামিং করা হয় যে, সেই কোষ যে শরীরে যাবে, সেই শরীরের প্রয়োজন বুঝে, ঠিক তার মাপ মতো ওষুধ তথা প্রোটিন নিঃসরণ করবে। স্টেম সেল থেরাপি মূলত এটিই।”

কিন্তু কী ভাবে কাজ করে এটি?

অমিতাভবাবুর কথায়, ভাইরাসের পরিমাণ খুব বেড়ে গেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তাকে ধ্বংস করার চেষ্টায় তা কখনও কখনও অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে প্রচুর পরিমাণে সাইটোকাইন রাসায়নিকের প্রবাহ শুরু হয়, যাকে বলে সাইটোকাইন স্টর্ম। এদের মধ্যে কিছু রাসায়নিক প্রদাহ ঘটিয়ে ফুসফুসের প্রচুর ক্ষতি করে। ফলে অক্সিজেন সরবরাহ কমে গিয়ে অকেজো হতে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সব প্রত্যঙ্গ। দেখা দেয় মাল্টি অরগ্যান ফেলিওর। রোগী মারা যান। প্রোগ্রামিং করে তৈরি করা কোষ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করালে তারা শরীরের ভিতরে প্রোটিন তথা ওষুধ তৈরি করে। ওষুধ বলতে দু’ধরনের প্রোটিন। একটি প্রদাহ কমায়। আরেকটি অতিসক্রিয় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।একে বলে ‘ইমিউন মডিউলেশন’। ফলে অক্সিজেনের পরিমাণ ফের নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রদাহের প্রকোপ কমাতে শুরু করে। অকেজো হতে থাকা প্রত্যঙ্গরা ফিরে পায় তাদের কার্য ক্ষমতা। তবে এই স্টেম সেল পরীক্ষার প্রাথমিক ধাপটুকু সারা হয়েছে। তাতে সাড়া মিলেছে ভাল। আরও অনেক পর্যায় এর বাকি। তবেই কোভিডের বিরুদ্ধে এই স্টেম সেল থেরাপি বিশ্বব্যাপী সমাধান হয়ে উঠতে পারবে কি না বোঝা যাবে।

আরও পড়ুন: হাতে-পায়ে র‌্যাশ, চুলকানি? সাবধান, করোনা নয় তো?

কোভিড-যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী গবেষণাকে কাজে লাগিয়ে চিকিৎসা চালাচ্ছেব চিকিৎসকরা। ছবি: রয়টার্স।

ইজরায়েল ও আমেরিকার এই সাত জন রোগীর বেলায় ইজরায়েলের প্লুরিস্টেম থেরাপিউটিক নামক সেল থেরাপি সংস্থার বিজ্ঞানীরা এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন। সংস্থার ডিরেক্টর ইয়াকি ইয়ানায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “সাধারন ওষুধপত্রে যেমন ডোজ আগে থেকে ঠিক করা থাকে, সেই মাত্রাতেই শরীরের ভিতরে গিয়ে প্রোটিন থেকে ওষুধ তৈরি করতে পারে এই স্টেম সেল বা পিএলএক্স সেলগুলো।

কোভিড ছাড়া আর কোথায় এর সাফল্য?

হার্ট অ্যাটাকে মৃত পেশীতে গিয়ে স্টেম সেলের প্রোটিন নতুন হৃদকোষ তৈরি করতে পারে। পায়ের শিরা পচে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেও তৈরি করতে পারে নতুন শিরা। রক্তের ক্যানসার, কিছু বিশেষ ধরনের রক্তাল্পতা বা রশ্মি চিকিৎসায় অস্থিমজ্জা নষ্ট হয়ে গেলে, নতুন অস্থিমজ্জা তৈরতেও সে সক্ষম।

৬ জন ইজরায়েলের বাসিন্দা ও একজন আমেরিকানের উপর এই স্টেম সেলের সাফল্যের হার ১০০ শতাংশ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, “এখনও পর্যন্ত স্টেম সেল থেরাপিতে যতটুকু কাজ হয়েছে, তা খুবই আশাব্যঞ্জক। ক্লিনিকাল ট্রায়ালের প্রথম ধাপ চলছে। দ্বিতীয় ধাপে আরও অনেক বেশি ও অনেক ধরনের মানুষের উপর পরীক্ষা করে দেখতে হবে ফলাফল কেমন হচ্ছে। এই ধাপে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ, বিভিন্ন রকম অসুখবিসুখ আছে এমন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ, শিশু, টিনএজার প্রত্যেকের শরীরে এই ওষুধ কী ভাবে কাজ করছে, তা দেখতে হবে। নিপারদ কি না তাও বুঝতে হবে। তৃতীয় ধাপে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সেন্টারে কন্ট্রোল ট্রায়াল করে দেখতে হবে দেশ ও জাতিভেদে ওষুধ একই ভাবে কাজ করছে কিনা। যত তাড়াতাড়ি এই সব ধাপ সম্পূর্ণ করা যাবে, তত তাড়াতাড়ি ওষুধ আসবে বাজারে। এই মুহূর্তে যতটুকু কাজ হয়েছে তার ভিত্তিতে কিন্তু বলা যায় না যে বাজারে কোভিডের ওষুধ এসে গিয়েছে।”

তবে ওষুধ না এলেও এই স্টেম সেলকে আঁকড়ে কোভিডের সঙ্গে লড়াইয়ে নতুন করে অস্ত্র শানাচ্ছেন চিকিৎসক-গবেষকরা।

তথ্য: মনীষা মুখোপাধ্যায়

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Covid 19 Coronavirus Stem Cell Stem Cell Therapy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy