উচ্চ রক্তচাপে কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। ছবি-শাটারস্টক থেকে নেওয়া
চিকিৎসক ও গবেষকদের অনেক ধারণাই আর খাটছে না কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪৯ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন এ রাজ্যে। এ নিয়ে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন ১৯ হাজার ৮১৯ জন। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মোট ৬৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজ্যে। এই আবহে চিকিৎসকরা বার বার সতর্ক করছেন আনুষঙ্গিক রোগ অর্থাৎ কো-মর্বিডিটি নিয়ে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ন্যাশনাল হেল্থ প্রোফাইল অনুযায়ী বাংলায় উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দু’লক্ষ ৮৫ হাজার ১৩৪। বিভিন্ন দেশে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে যে সমস্ত মানুষের, তাঁদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই বেশি, এমনই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
দীর্ঘদিন ধরে রক্তচাপজনিত অসুখ বা হাই ব্লাড প্রেসারের সমস্যায় ভুগছেন, এ সমস্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে লিঙ্গ, বয়স নির্বিশেষে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। এই সমস্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কেন বেশি, এই নিয়ে ক্লিনিক্যাল মেডিসিন জার্নালের রিসার্চ বলছে, উচ্চ রক্তচাপ মানেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাই ভাইরাস যুদ্ধে জয়ের সম্ভাবনাও কম। চিনে কোরোনা আক্রান্ত রোগীদের ২০ থেকে ২২ শতাংশ উচ্চ-রক্তচাপের সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন। ইটালির ক্ষেত্রে তা ৭৬ শতাংশ। অর্থাৎ সংক্রমণের সম্ভাবনা মারাত্মক রকম ভাবে বেশি। এর মধ্যে ৬০ পেরিয়ে গিয়েছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দুই তৃতীয়াংশই উচ্চ-রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন বিশ্ব জুড়ে।
উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে যাঁদের, তাঁদের ক্ষেত্রে মাস্ক না পরা মৃত্যুকে ডেকে আনার শামিল, বলছেন চিকিৎসকরা । মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের বক্তব্য, আনুষঙ্গিক রোগ হাই ব্লাড প্রেসার। তাই জীবাণু প্রবেশ করলে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও ক্ষীণ। সেক্ষেত্রে শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া অর্থাৎ স্যানিটাইজ়ার এবং বার বার হাত ধোওয়ার নিয়ম মেনে চলতে হবে। সংক্রমণ তো বটেই, শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে পারে নিয়ম না মেনে চললে। ভাইরাস একবার বংশবৃদ্ধি করলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলিকে নষ্ট করে দিতে পারে সহজেই। অতএব, মাস্ক না পরে বেরলে সংক্রমণের সঙ্গে ফ্যাটালিটি অর্থাৎ মৃত্যুর আশঙ্কাও রয়েছে, এমনই জানান অরিন্দমবাবু।
আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্কে অনিয়মিত ঋতুস্রাব, খিটখিটে মেজাজ? কী করবেন ?
এই প্রসঙ্গে মেডিসিনের চিকিৎসক অভিজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ওষুধের ক্ষেত্রে কোনও অনিয়ম চলবে না। ডায়াবিটিসের সমস্যাও শুরু হতে পারে। সেক্ষেত্রে ডায়াবিটিস রয়েছে কি না, নিয়মিত তা মনিটর করে নেওয়া ভাল।
আরও পড়ুন:খাবারে চিনি, রোজ পাতে মিষ্টি ? হৃদরোগের সম্ভাবনা কতটা ?
অভিজিৎবাবু বলেন, লিঙ্গ নির্বিশেষে বয়সও একটা বড় ফ্যাক্টর উচ্চ-রক্তচাপের ক্ষেত্রে। তিরিশের কোঠায় বা চল্লিশের কোঠায় যাঁদের বয়স, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে করোনা আবহে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে তাঁদেরও। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, বার বার হাত ধোওয়ার সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। ভিড় এড়াতেই হবে। ভিড়ে মাস্কবিহীন ভাবে উচ্চ রক্তচাপের কোনও রোগীর যাওয়ার অর্থ— মৃত্যুকে ডেকে আনা। দিনে দু’বার রক্তচাপ মনিটর করার পরামর্শও দিয়েছেন অভিজিৎবাবু। কারণ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা মানে কিডনির স্বাভাবিক ক্রিয়ায় প্রভাব পড়বেই। নজর রাখতে হবে সেদিকেও। এ ছাড়াও সেরিব্রাল ইনফার্কশন বা স্ট্রোক হতে পারে যে কোনও সময়। অ্যাকিউট ইনফার্কশনও হতে পারে।
দ্য আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজি অ্যান্ড অ্যামেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন জানাচ্ছে, একে করোনা আবহ। তার মধ্যে রক্তচাপের সমস্যায় সময় মতো ওষুধ না খেলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা আগের থেকে অনেকটাই বেশি। কারণ মানসিক উদ্বেগও এই সময়ে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে মাস্ক না পরে সংক্রমণ হলে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুও হতে পারে। তাই বার বার নিয়ম মেনে চলতে বলছেন চিকিৎসকরা। বলছেন, সতর্ক থাকতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy