ফাইল চিত্র
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের হিসেব বলছে, প্রতি ১৬০ জন শিশুর এক জনের অটিজ়ম স্পেকট্রাম ডিজ়অর্ডার (এএসডি) থাকে। সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোলের (সিডিসি) দেওয়া তথ্যও প্রায় এর কাছাকাছি। তবে ২০২০ সালে নতুন করে চিহ্নিত এএসডি-র তথ্য দিতে পারছে না কোনও সংস্থাই। পাশাপাশি এএসডি থাকা মানুষজনের উন্নতি যে কয়েক ধাপ পিছিয়ে গিয়েছে, সে কথা মানছেন বিশেষ প্রশিক্ষক ও মনোবিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, এই ধাক্কা সামলাতে কেটে যাবে কয়েক বছর। আজ, ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজ়ম সচেতনতা দিবস। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই উঠে আসছে এই সব প্রসঙ্গ।
প্রশিক্ষকদের মতে, অটিজ়ম প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের বিশেষ প্রশিক্ষণই আসল। অথচ, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ সেই প্রশিক্ষণ। ওঁদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা এখন অনলাইনে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। যদিও তা যথেষ্ট নয়। এমনই একটি সংস্থার তরফে ঋতুশ্রী মুখোপাধ্যায় জানান, এই মানুষগুলির মোটর অ্যাক্টিভিটির সমস্যা থাকে। তাই গ্রস মোটর এবং ফাইন মোটর অ্যাক্টিভিটির পাশাপাশি হাতের কাজও করানো হচ্ছে। তবে অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি, ডান্স মুভমেন্ট থেরাপি অনলাইনে করানো যথেষ্ট কঠিন বলেই মানছেন তিনি।
অনলাইনে প্রশিক্ষণের সীমাবদ্ধতার আরও কিছু কারণ ব্যাখ্যা করছেন নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজ়েবিলিটি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের প্রাক্তন অধ্যাপিকা মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, অটিজ়ম প্রতিবন্ধকতাযুক্ত বহু ব্যক্তির পরিবারে স্মার্টফোন নেই। অনেক অভিভাবকও এই প্রযুক্তিতে সড়গড় নন। দ্বিতীয়ত, মা-বাবারা কখনওই প্রশিক্ষকের পরিপূরক হয়ে উঠতে পারেন না। তৃতীয়ত, বিশেষ স্কুলে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পরিবারগুলির কাছে থাকে না। মল্লিকাদেবীর কথায়, “যন্ত্রপাতি ছাড়াই অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে অনেকটা জলে না নেমে সাঁতার শেখার মতো।”
অকুপেশনাল থেরাপিস্ট সুমিত সাহা বলছেন, “এএসডি থাকা বিভিন্ন বয়সিদের ক্ষেত্রে কোভিডের প্রভাবটা স্রোতের অনুকূলে সামান্য। স্রোতের প্রতিকূলে সাঁতার কেটে এগিয়ে যাওয়ার মতোই কষ্টকর ওঁদের ভবিষ্যৎ। সেই বাধা পেরোনোর কৌশল জানাতে পরিবারকে পাশে থাকতেই হবে।’’
অটিজ়ম প্রতিবন্ধকতা যাঁদের আছে, তাঁদের কাছে স্কুল মানে ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। যেখানে নির্দিষ্ট থেরাপির সাহায্যে তাঁদের স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা চলে। অতিমারিতে ঘরবন্দি থাকায় এক দিকে যেমন বাবা-মায়ের সঙ্গ বেশি পেয়েছেন এই মানুষেরা, অন্য দিকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকায় তাঁদের চঞ্চলতা এবং রাগ বেড়ে গিয়েছে। অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, এর ফলে বাড়াতে হচ্ছে ওষুধের মাত্রাও।
এই পরিপ্রেক্ষিতে মাস সাতেক আগের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করছে এক প্রশিক্ষণ সংস্থা। স্কুলের পোশাকে, ব্যাগ কাঁধে সকলের অগোচরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিল বছর চোদ্দোর এক কিশোর। পরে তাকে হাইওয়ে থেকে উদ্ধার করা হয়। বছর সাতেকের একটি শিশুও বন্দি জীবনে হাঁফিয়ে উঠে পালিয়ে গিয়েছিল শপিং মলে। দু’ক্ষেত্রেই পুলিশের সাহায্যে তাদের ফেরাতে হয়েছিল। দু’টি ঘটনাই কলকাতার।
এএসডি থাকা মানুষগুলির বিশেষ প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকায় নাজেহাল পরিবারও। ঋতুশ্রীর কথায়, “সন্তানকে বিশেষ প্রশিক্ষণে পাঠিয়ে বাবা-মায়ের যে নিজস্ব সময়টুকু থাকত, সেটা আর নেই। ফলে কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পারিবারিক পরিবেশ।’’
ফের বাড়তে থাকা সংক্রমণের আতঙ্কে এই মুহূর্তে বিশেষ স্কুল খোলাও সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে কী ভাবে পরিস্থিতি সামলানো যায়? মল্লিকাদেবীর পরামর্শ, “যাঁদের আর্থিক বাধা নেই, তাঁরা বাড়িতে স্পেশ্যাল এডুকেটর রাখতে পারেন। তাতে সমস্যা কিছুটা কমবে। তবে এটা ঠিক, সেই সুবিধা পৌঁছবে মুষ্টিমেয় মানুষের কাছে।”
যা শুনে এক অভিভাবকের বক্তব্য, “নিজেরা একজোট হয়ে তিন-চার জন শিশু-পিছু এক জন স্পেশ্যাল এডুকেটর নিয়োগ করা হলে ওরা বন্ধুও পাবে, সুযোগটাও অনেকের নাগালে পৌঁছবে।”
নব্য স্বাভাবিকতায় অটিজ়মের এই সচেতনতার প্রসার জরুরি। কিন্তু সেই উদ্যোগ শুরু হবে কী ভাবে এবং কবে? আপাতত সেই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশিক্ষক এবং অভিভাবকদের মনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy