আটলান্টিক মহাসাগরের তট ঘেঁষে উত্তর আফ্রিকার ছোট্ট দেশ মরক্কো। এ দেশেই মেলে আর্গন গাছ। এ গাছের ফলের শক্ত খোলস ভাঙলেই পাওয়া যায় বাদামজাতীয় দানা। তারই শাঁস থেকে তেল বার করে যুগ যুগ ধরে রান্না ও রূপচর্চায় ব্যবহার করছেন মরক্কোবাসীরা। বহুগুণসম্পন্ন এই তেলকে কেউ বলেন ম্যাজিক অয়েল, কেউ বলেন তরল সোনা। আর্গন অয়েল ত্বক, চুল, নখের জেল্লা বাড়ানোর উপাদানে ঠাসা। এতে ভিটামিন এ, ভিটামিন ই ও নানা ফ্যাটি অ্যাসিড আছে। অন্য তেলের তুলনায় আর্গন অয়েল বেশ হালকা। লাগানো মাত্র ত্বক শুষে নেয়।
আর্গন অয়েলের গুণবিচার
ভিটামিন ই-র গুণে এই তেল অনেকক্ষণ ত্বকের আর্দ্র ভাব ধরে রাখে। তাই শীতকালে ময়শ্চারাইজ়ার ও বডি লোশনের বিকল্প হতে পারে এই তেল। ফাটা ঠোঁটের যত্নেও তা খুবই কার্যকর।
• অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টযুক্ত এই তেল নিয়মিত লাগালে রোদে পোড়া চেহারায় পুরনো জৌলুস ফিরে আসে। ত্বককে অতিবেগনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে, অতিরিক্ত মেলানিন উৎপাদনেও বাধা দেয় এই তেল। তাই হাইপারপিগমেন্টেশন থেকেও রক্ষা করে।
• আর্গন তেলে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণাগুণ আছে। তাই, এই ধরনের ত্বকের সমস্যা বা সংক্রমণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা ওষুধের পাশাপাশি আর্গন অয়েল লাগানোরও পরামর্শ দেন।
• যাঁদের ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত, তাঁরা সব ধরনের তেল লাগাতে পারেন না। তাঁরা কিন্তু অনায়াসেই আর্গন তেল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এই তেল ত্বকের তেলতেলে ভাব ও সেবাম উৎপাদনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই ব্রণ বা অ্যাকনের সমস্যায় দিনে দু’বার আর্গন অয়েল ব্যবহার করলে ভাল ফল মেলে।
• অ্যান্টিএজিং ট্রিটমেন্টে আর্গন অয়েলের ব্যবহার বহু দিন ধরেই প্রচলিত। এটি ত্বকের টানটান ও মোলায়েম ভাব ধরে রাখতে সহায়তা করে।
• সন্তান জন্মের পর স্ট্রেচ মার্কস চেনা সমস্যা। নিয়মিত আর্গন অয়েল মাসাজের ফলে স্ট্রেচ মার্কগুলি তাড়াতাড়ি মিলিয়ে যায়। এই তেল ব্রণ, পক্সের দাগ মেরামত করে দ্রুত। এটি ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ফেরাতেও পটু।
প্রয়োগের রকমসকম
• ময়শ্চারাইজ়ার, সাবান, স্কিন লোশন ইত্যাদি নানা প্রসাধনীর উপকরণে আর্গন অয়েল ব্যবহার করা হয়। এগুলি কিনতে পারেন, অথবা কোল্ড প্রেসড আর্গন তেল কিনে সরাসরি ব্যবহার করতে পারেন। ত্বক ও চুল, দুইয়ের জন্যই কোল্ড প্রেসড আর্গন তেল ভাল।
• সকালে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়ার পর ময়শ্চারাইজ়ার হিসেবে দু’-এক ফোঁটা আর্গন তেল ব্যবহার করুন। সারা রাত মুখে আর্গন তেল লাগিয়ে রাখলেও ত্বক তরুণ ও প্রাণবন্ত দেখাবে।
• টোনারের সঙ্গে এক ফোঁটা আর্গন তেল মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন।
• ব্রাউন সুগারের সঙ্গে সামান্য এই তেল মিশিয়ে ঠোঁটে ঘষতে পারেন। মৃত কোষ উঠে আসবে।
• সেরামের সঙ্গে আর্গন অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করেন অনেকে। চিনির সঙ্গে দু’ফোঁটা মিশিয়ে চমৎকার স্ক্রাবারও তৈরি হয়।
• বাইরে বেরোনোর আগে, সানস্ক্রিনের সঙ্গে এক ফোঁটা আর্গন তেল মিশিয়ে মুখে লাগালে ত্বক সুরক্ষিত থাকবে।
• রাতে শোয়ার আগে মুখের সঙ্গেই হাত, পা ও নখে আর্গন তেল মাসাজ করে শোয়ার পরামর্শ দেন রূপবিশেষজ্ঞরা। এতে হাতের কনুইয়ের খসখসে ভাব দূর হয়, নখ সুন্দর থাকে ও গোড়ালি ফাটে না।
কয়েকটি সতর্কতা
চটজলদি উপকার পেতে অনেকে আর্গন অয়েলের পিল খান। এ ক্ষেত্রে কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যিক। কারণ অনেকেরই পরিপাকতন্ত্র এই তেল সহ্য করতে পারে না।
আর্গন অয়েল বেশ ঘন। তাই দু’এক ফোঁটাতেই দুর্দান্ত কাজ হয়। তবে যাঁদের বাদামজাতীয় তেলে অ্যালার্জি আছে বা যাঁদের ত্বক অতি সংবেদনশীল, তাঁরা প্রথম বার ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করিয়ে নিন। কনুই বা কব্জির ভিতরের দিকে এক ইঞ্চি জায়গা জুড়ে এই তেলের পরত লাগান। ২৪ ঘণ্টা ওই অংশে জল লাগাবেন না। যদি কোনও সমস্যা না হয়, তবে তেল ব্যবহার করতে পারেন। আর কোনও র্যাশ বেরোলে জলপাই বা হোহোবা অয়েল লাগান। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ত্বকের সমস্যা মিটিয়ে লাবণ্য বাড়িয়েছে আর্গন অয়েল। সাধে কি আজ তার এত নামডাক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy