Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Sabyasachi Mukherjee

Vicky-Katrina wedding: বলিউডের কনে না সব্যসাচীর ক্যাটালগ, অনুষ্কা থেকে ক্যাটরিনা— সবাই এক!

প্রতিটা বিয়ে যেন সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের পোর্টফোলিয়ো। লেহঙ্গা থেকে মাথার টিকলি—বলিউডের কনেরা সকলেই একে অন্যের প্রতিচ্ছবি।

ক্যাটরিনা কইফ এবং ভিকি কৌশল।

ক্যাটরিনা কইফ এবং ভিকি কৌশল।

পৃথা বিশ্বাস
পৃথা বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২১ ১৩:০৪
Share: Save:

২০১৭ সালের ডিসেম্বরের এক সকালে সকলকে চমকে দিয়ে হঠাৎই বিয়ে করে ফেলেছিলেন বিরাট কোহলী-অনুষ্কা শর্মা। বিয়ের ছবি দেখে দেখে মুগ্ধ সকলে। ক্রিকেট-বলিউড মিলে যাওয়ার উন্মাদনা তো ছিলই।কিন্তু বর-কনের সাজও মন ভাল করে দিয়েছিল গোটা ভারতের।
গতে বাঁধা লাল শাড়ি বা লেহঙ্গার বাইরে গিয়ে হাল্কা গোলাপি রঙে সেজেছিলেন বিরাট-অনুষ্কা। কী সুন্দর খোঁপার সাজ, কী ঝকঝকে গয়না, নবদম্পতির মুখের নিষ্পাপহাসি—সবই যেন স্বপ্নের মতো! বিয়ের ছবি দেখে সকলেই গদগদ।

তার পর থেকে বলিউডে একের পর এক হাই-প্রোফাইল বিয়ে। প্রত্যেক বারই বিয়ের খবর পাওয়া যায় হাওয়ায়-হাওয়ায়। আর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে বসে থাকেন অনুরাগীরা।কখন বিয়ের ছবি পাওয়া যাবে ইনস্টাগ্রাম-টুইটারে। হবু কনেরা প্রায় খাতা-পেন নিয়ে বসে পড়েন নিত্যনতুন কনে-সাজের হদিশ পাবেন বলে। কিন্তু তা আর হয় না! কারণ, অনুষ্কার পর তো আর নতুন ভাবে কাউকেই সাজাননি বলিউডের প্রিয় পোশাকশিল্পী সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়! সকলেই যেন অনুষ্কার কপি!

অনুষ্কা শর্মা- বিরাট কোহলী।

অনুষ্কা শর্মা- বিরাট কোহলী।

এতে অবশ্য সব্যসাচীর কোনও দোষ নেই। দীপিকা থেকে পত্রলেখা—প্রত্যেকেই যদি অনুষ্কার মতো সাজতে চান, তাতে কারই বা কী বলার থাকে! অনুষ্কার বিয়ের পর নাকি ওই অবিকল একই লেহঙ্গা বানিয়ে দেওয়ার চাহিদা ছিল তুঙ্গে। বহু বহু কনে সব্যসাচীর বুটিকে ভিড় করতেন ওই লেহঙ্গা কেনার জন্য। বিয়ের দিন তাঁরা অনুষ্কার মতো সাজবেন, এই ছিল তাঁদের স্বপ্ন।

সে বছর সব্যসাচী নতুন পোশাকের সম্ভার সাজিয়েছিলেন। প্রত্যেক বছরই যেমন করে থাকেন। কিন্তু অন্য কোনও লেহঙ্গার এত বিক্রি হয়নি। সকলে এসে ওই একই লেহঙ্গার খোঁজ করতেন। কিন্তু তার পর কী হল? কেউ কি এসে বলেন, দীপিকা পাড়ুকোনের লেহঙ্গা চাইবা প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার লেহঙ্গা চাই? আসলে আলাদা করে বলতেও হয় না। সবই যে এক!

রণবীর সিংহ এবং দীপিকা পাড়ুকোন।

রণবীর সিংহ এবং দীপিকা পাড়ুকোন।

সব্যসাচী বহু দিন থেকেই নতুন ধরনের নকশা নিয়ে তেমন মাথা ঘামান না। যা ‘বাজারে’ চলে, তা-ই তৈরি করেন। বার বার তৈরি করেন। নতুন কালেকশন বলে প্রত্যেক বছর যা বার করেন, তা আদপে পুরনো নকশারই এদিক-ওদিক। কেউ প্রশ্ন তুললে বলেন, এটা তাঁর ‘সিগনেচার স্টাইল’। তা ভালই করেন। বেশ করেন। যা বেচে তিনি বেঁচে রয়েছেন, তা-ই তো করবেন। পুরনো জিনিসের আবেদন যখন এত, নতুনের কী প্রয়োজন? তাই প্রিয়ঙ্কার লেহঙ্গাই পরে ফেলেন নেহা কক্কর। দীপিকার মতোই সেজে ওঠেন সাগরিকা ঘাটগে! তাঁদের যখন আপত্তি নেই, তখন পোশাকশিল্পীর আর দায় কোথায়! ‘কুতিওর’ পোশাকেরও যে গণ-উৎপাদন সম্ভব, তা সব্যসাচী ছাড়া আর কেউ বোঝেননি, করে দেখাতেও পারেননি।

কিন্তু বলিউডের কী হল? তাদের সৃজনশীলতা এবং নিজস্বতার এত অভাব হচ্ছে কেন? সব্যসাচী যত বড় শিল্পী, তার চেয়েও বড় ব্যবসায়ী। পাকা বুদ্ধি তাঁর।তাই শুধু লেহঙ্গা কিনলে চলবে না।সঙ্গে গয়না, ওড়না, গলার মালা, খোঁপার ফুল—সব কিনতে হবে। মানে পুরো ‘প্যাকেজ’ নিতে হবে আর কী! মাথায় একইরকম মাথাপট্টি পরতে হবে, একই রকম ওড়না পরতে হবে, একই ভাবে সিঁদুরও পরতে হবে! মানে যত ক্ষণ না অবিকল সব্যসাচীর ক্যাটালগের মডেলদের মতো দেখাবে, তত ক্ষণ নিস্তার নেই।

রাজকুমার রাও এবং পত্রলেখা পল।

রাজকুমার রাও এবং পত্রলেখা পল।

এই চক্করে দীপিকার বিয়ের শাড়ি স্থানীয় দোকান থেকে কেনা হলেও সকলে ‘সব্যসাচী’ ভেবে নিয়েছিলেন। পরে তাঁকে ক্ষমা চেয়ে নেটমাধ্যমে জানাতে হয়, শুধু দীপিকার গয়না আর ওড়নাই তাঁর।শাড়ি নয়। কিন্তু তাতে সব্যসাচীর জনপ্রিয়তার কোনও ভাটা পড়েনি। দীপিকা তাঁর রিসেপশনের দিন সেজেছিলেন একদম অনুষ্কার রিসেপশনের সাজেই! সব্যসাচী তাঁর ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সফলও হচ্ছেন। কিন্তু বলিউডের কনেদের কী হল! তাঁদের সারা বছর এত এত স্টাইলিস্ট! তাঁরাও কি কখনও বলেন না যে, বিয়ের দিন একটু অন্য ভাবে সাজতে? না কি ‘সব্যসাচী ব্রাইড’ না হলে মানসম্মান থাকবে না! এটাই বোধহয় এখন অলিখিত রীতি হয়ে গিয়েছে। একটুও নড়চড় হলে বলি-সমাজে আর মুখ দেখানো যাবে না!

নিক জোনাস এবং প্রিয়ঙ্কা চোপড়া।

নিক জোনাস এবং প্রিয়ঙ্কা চোপড়া।

রাজকুমার রাওয়ের কনে পত্রলেখা দীপিকার মতো সাজতেই পারেন। নেহা কক্কর প্রিয়ঙ্কার লেহঙ্গা পরতেই পারেন। কিন্তু হতাশ করলেন ক্যাটরিনা। বিয়ে নাকি ১০০ কোটির! ভিডিয়ো ফুটেজ বিশাল ওটিটি মাধ্যমকে এই দামেই বিক্রি করেছেন তাঁরা! ফলে কড়া নিরাপত্তা।ফোন, ইন্টারনেট নিষিদ্ধ। বিয়ের ছবি নবদম্পতি যতক্ষণ না নিজেরা নেটমাধ্যমে দিচ্ছেন, তত ক্ষণ অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। কে কেমন সাজল তা দেখার জন্য সারা দিন বসে ছিল গোটা দেশ।

নেহা কক্কর এবং রোহনপ্রীত সিংহ।

নেহা কক্কর এবং রোহনপ্রীত সিংহ।

শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টায় ছবি পোস্ট করলেন যুগল। কিন্তু ছবি দেখে মন ভরল না। সেই একই লেহঙ্গা, একই চোকার, একই মাথাপট্টি, একই ওড়না! সবই যেন আগে দেখা। পত্রলেখা তা-ও ওড়নার পাড়ে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া রেখেছিলেন। তাঁর ওড়নায় লেখা ছিল, ‘আমার পরান ভরা ভালবাসা আমি তোমায় সমর্পণ করিলাম’।

কিন্তু সে টুকু নিজস্বতাও দেখালেন না ক্যাটরিনা। তিনি বলিউডে বরাবরই ‘বহিরাগত’। ১৮ বছর হয়ে গেল তাঁর কেরিয়ারের। কিন্তু এখনও হিন্দিটা ঠিকঠাক বলতে পারেন না। ব্রিটিশছাপ তাঁর বংশগত। তা-ও মাটি কামড়ে পড়ে থেকে তিনি বলিউডের প্রথম সারির নায়িকা। চিরকাল চেষ্টা করেছেন টিনসেল টাউনে খাপ খাইয়ে নিতে।বলিউডের আপন হয়ে উঠতে। বিয়েতেও তাই করলেন।

ভিকির শেরওয়ানিতে পাঞ্জাবি শিকড়ের প্রমাণ ছিল। ক্যাটরিনার পোশাকে তাঁর জন্মসূত্রের কোনও ছাপ দেখা যায়নি। তিনি তাঁর ব্রিটিশ পরিচয় ঝেড়ে ফেলে প্রকৃত ভাবেই ‘সব্যসাচী ব্রাইড’ হয়ে উঠেছিলেন।

ঠিক যেমন বাকি বলিউড-কনেরাও হয়ে ওঠেন।ফোটোকপি!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy