E-Paper

জোটবদ্ধ লড়াইয়ে বিনামূল্যে সাড়ে ১৭ কোটির জিন থেরাপি পেল শিশু  

বিরল রোগ নিয়ে সচেতনতার প্রসারে গত কয়েক বছর ধরে ফেব্রুয়ারির শেষ দিনটিকে (চলতি বছরে ২৯ তারিখ) ‘বিশ্ব বিরল রোগ দিবস’ এবং গোটা মাসকে ‘বিরল রোগের সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালন করা হয়।

—প্রতীকী চিত্র।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৩৪
Share
Save

জন্মের ছ’মাস পরেও বসতে পারছিল না ছেলে। মা-বাবার মনে হয়েছিল, ওর কিছু সমস্যা আছে। ছেলেকে এসএসকেএমে নিয়ে যান তাঁরা। পরীক্ষায় জানা যায়, জিনঘটিত বিরল রোগ স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি (এসএমএ) টাইপ টু আক্রান্ত শিশুটি। দ্বিতীয় জন্মদিনের ঠিক এক দিন আগে সেই শিশু পেল এসএমএ-র আধুনিকতম চিকিৎসা জিন থেরাপি। এ দেশে যার খরচ ১৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুটি যদিও এই ওষুধ পেয়েছে নিখরচায়। যা দেখাল, সচেতনতার প্রসার ও জোটবদ্ধ লড়াই করলে শূন্য থেকেও শুরু করা যায়।

বিরল রোগ নিয়ে সচেতনতার প্রসারে গত কয়েক বছর ধরে ফেব্রুয়ারির শেষ দিনটিকে (চলতি বছরে ২৯ তারিখ) ‘বিশ্ব বিরল রোগ দিবস’ এবং গোটা মাসকে ‘বিরল রোগের সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালন করা হয়। যদিও এ দেশে এসএমএ নিয়ে বছরভর কাজ করে যান মুষ্টিমেয় চিকিৎসক ও রোগীর অভিভাবকদের সর্বভারতীয় সংগঠন।

বিশ্বে কয়েকশো ধরনের বিরল রোগের একটি হল স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি। দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালের চিকিৎসক রত্না পুরির করা এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ভারতে ৭৭৪৪ জন জীবিত সদ্যোজাতের মধ্যে এক জন এসএমএ আক্রান্ত। যা বিশ্বের এসএমএ আক্রান্তের নিরিখে বেশি। যদিও গত ১০ বছরে বিশ্বে এসএমএ-র গবেষণায় চিকিৎসার একাধিক পদ্ধতি এসেছে। তবে সে সবই ব্যয়বহুল হওয়ায় থেকে গিয়েছে সাধারণের নাগালের বাইরেই।

এসএমএ-র চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ার মূল কারণ দীর্ঘ গবেষণার খরচ। সেই সঙ্গে রয়েছে বিদেশ থেকে ওষুধ আনতে সরকারি নিয়মের ফাঁসও। এখনও পর্যন্ত এসএমএ চিকিৎসায় তিন ধরনের থেরাপির অনুমোদন মিলেছে। একটি খাওয়ার ওষুধ, যা জীবনভর খেতে হবে। দ্বিতীয়টি শিরদাঁড়ায় ইন্ট্রা-ভেনাস (আইভি) ইনজেকশনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সারা জীবন নিতে হবে। তৃতীয়টি জিন থেরাপি। যেটিকে ২০১৯ সালে মান্যতা দিয়েছে আমেরিকা। জন্মের ঠিক দু’বছরের মধ্যে রোগীর শরীরে জিন থেরাপি আইভি ইনজেকশনের মাধ্যমে এক বারই প্রয়োগ করতে হয়।

শিশুরোগ চিকিৎসক সংযুক্তা দে জানাচ্ছেন, যে নির্দিষ্ট জিনের ত্রুটির কারণে এসএমএ রোগীর শরীরে বিশেষ প্রোটিন তৈরি হয় না, এই থেরাপির এক বার প্রয়োগেই সারা জীবন ধরে সেই স্বাভাবিক প্রোটিন তৈরি হবে।

এ দেশের বাজারে এখনও জিন থেরাপি অমিল। সুইৎজ়ারল্যান্ডের এক ওষুধ সংস্থার তৈরি জিন থেরাপি তাদের ‘গ্লোবাল ম্যানেজড অ্যাক্সেস প্রোগাম’-এর (জিএমএপি) মাধ্যমে দেশের কয়েকটি শিশুর শরীরে নিখরচায় প্রয়োগ হচ্ছে। সেই তালিকায় রয়েছে কলকাতার এই শিশুটি। পিয়ারলেস হাসপাতালে এই থেরাপি দেওয়ার চার মাসের মধ্যে ছেলের উন্নতি লক্ষ করছেন বলে জানালেন তার বাবা। তাঁর কথায়, ‘‘আগে ছেলেটা বসতে পারত না, এখন বসছে। জিনিস হাতে ধরতেও পারছে। শ্বাসের যে কষ্ট হত, সেটাও নেই বললেই চলে।’’

শুধু পিয়ারলেসই নয়, একটি সরকারি হাসপাতালের মাধ্যমে জিন থেরাপি পাওয়ার পথে এগোচ্ছে রাজ্যেরই আরও এক শিশু। রোগীর শারীরিক ও আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে এবং অনলাইনে জটিল প্রক্রিয়া মেনে বিশ্বের মুষ্টিমেয় দেশের মধ্যে চলে এই বিবেচনাভিত্তিক বাছাই প্রক্রিয়া, যা জিএমএপি নামে পরিচিত।

বিদেশি ওই ওষুধ সংস্থা সূত্রের খবর, দুই থেকে আঠারো বছর বয়সি এসএমএ আক্রান্তদের জন্য জিন থেরাপির গবেষণা অন্তিম পর্যায়ে। পরীক্ষামূলক পর্যায়ে থাকা ওই জিন থেরাপি ১২৫টি দেশে ২-১৮ বছর বয়সিদের উপরে প্রয়োগ হচ্ছে। সেটি শিরদাঁড়ার মাধ্যমে জীবনে এক বারই দিতে হবে। যে হেতু এটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে, ফলে জিন থেরাপি প্রয়োগের পরবর্তী দেড় বছর রোগীর অসুখ সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ বহন করবে ওষুধ সংস্থাই। গবেষকদের কড়া নজরদারিতে রাখতে হবে রোগীকে। ওই রোগীর শরীরে জিন থেরাপির প্রভাব কেমন, তা জানতে সংস্থা এর পরেও বেশ কয়েক বছর নজর রাখবে।

সংযুক্তা বলছেন, ‘‘পিয়ারলেস হাসপাতাল থেকে পূর্ব ভারতের দুই বছরের ঊর্ধ্বের চারটি শিশু পরীক্ষামূলক পর্যায়ের এই থেরাপি পেয়েছে। তবে এসএমএ-র মতো যে কোনও বিরল রোগের চিকিৎসায় সরকারি এবং বেসরকারি পরিকাঠামো অনেক বাড়াতে হবে। নতুন নীতি আনতে হবে সরকারকে।’’

‘কিয়োর এসএমএ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া’র সহ প্রতিষ্ঠাতা মৌমিতা ঘোষ জানান, পূর্ব ভারতের একটি বাচ্চার জিন থেরাপি পাওয়া বড় সাফল্য। তবে এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য পরিকাঠামো তৈরি এবং থেরাপি আমদানি করতে শুল্ক মকুবের প্রক্রিয়া সহজ ছিল না। তাঁর অনুরোধ, ‘‘রাজ্য সরকার বিরল রোগীদের নিয়ে ভাবুক।
শুধু পরিষেবা দিলেই হবে না, বাচ্চারা যাতে চিকিৎসা পায়, সে দিকে তৎপর হতে হবে। বিরল রোগীদের জন্য কেরল ও কর্নাটকের মতো রাজ্য-নীতি আনতে হবে। রাজ্যের বিরল রোগের কমিটিতে অভিভাবক-প্রতিনিধি রাখতে হবে, যাঁরা সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত জানেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

gene therapy child treatment

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।