Advertisement
E-Paper

অফিস থেকে নামতেই কোমরজলে, একটু এগোতেই গলাজল! চেন্নাই থেকে লেখা এল আনন্দবাজার অনলাইনে

কর্মসূত্রে আমি থাকি চেন্নাইয়ে। অফিসে যাতে তাড়াতাড়ি পৌঁছনো যায়, তাই কাছাকাছি একটি মেস ভাড়া করেছি। সেখান থেকে অফিস মেরেকেটে দু’কিলোমিটার। হাঁটাপথ।

জলমগ্ন চেন্নাই। কোথাও কোমরসমান, কোথাও গলাসমান জল।

জলমগ্ন চেন্নাই। কোথাও কোমরসমান, কোথাও গলাসমান জল। ছবি: পিটিআই।

জ্যোতির্ময় প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৬:২৬
Share
Save

সকালে অফিস গিয়েছিলাম গোড়ালিসমান জল ভেঙে। তখন বৃষ্টি হচ্ছে। বিকেলে যখন অফিস থেকে রাস্তায় বেরোলাম, তখনও বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তার জল তখন কোমর ছুঁয়েছে। একটু এগোতেই জল বুক ছাড়িয়ে গলা ছুঁল। মোবাইল ফোন-সহ হাত মাথার উপর তুলে জল ভেঙে এগোচ্ছি মেসবাড়ির দিকে। মাত্র দু’কিলোমিটার রাস্তা যেন শেষই হতে চায় না!

কর্মসূত্রে থাকি চেন্নাইয়ে। অফিসে যাতে তাড়াতাড়ি পৌঁছনো যায়, তাই কাছাকাছি একটি মেস ভাড়া নিয়ে থাকি। সেখান থেকে অফিস মেরেকেটে দু’কিলোমিটার। হাঁটাপথ। কিন্তু সে দিন যে ভাবে বাড়ি ফিরলাম, তা কোনও দিন ভুলব না।

খবর পড়ে জেনেছিলাম তামিলনাড়ুর দিকে একটি ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে। রাজ্য প্রশাসনের তৎপরতাও তাই বেড়েছিল গত কয়েক দিন ধরেই। ঘূর্ণিঝড় মানেই একটা আতঙ্ক! কিন্তু আপাত ‘স্বস্তির’ বিষয় এটাই ছিল যে, আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, তামিলনাড়ুর উপকূলীয় এলাকা দিয়ে এই ঝড় বয়ে যাবে। তবে চেন্নাইয়ে ঝড়ের তেমন প্রভাব পড়বে না।

মনে মনে ভাবলাম, ঝড় থেকে না হয় বাঁচা গেল। কিন্তু একেবারেই যে প্রভাব পড়বে না, এমন বিশ্বাস করাটাও ভুল। ঝড় যত উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছিল, ততই তার আঁচ পড়তে শুরু করেছিল চেন্নাইয়ে। রবিবার সকাল থেকে আচমকাই আবহাওয়া বদলে গেল। জানান দিচ্ছিল, প্রায় দোরগোড়ায় ঘূর্ণিঝড়। ওই দিন রাত থেকে শুরু হল বৃষ্টি। সে কী বৃষ্টি!

রবিবার এমনিতেই ছুটির দিন। ফলে সন্ধ্যার দিকটায় মেসেই ছিলাম। তা ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন থেকে সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় নিয়ে। তাই আর ঝুঁকি না নিয়ে সন্ধ্যাটা ঘরেই কাটালাম। ভাগ্যিস! কিছু সময় যেতেই বৃষ্টি শুরু হল। মেসের জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকাতেই দেখি অঝোর বৃষ্টিতে রাস্তা এবং আশপাশের বাড়িগুলির আলো ঝাপসা হয়ে গিয়েছে। রাত বাড়ল, বৃষ্টির তেজও বাড়তে থাকল। সঙ্গে সোঁ সোঁ শব্দে ঝোড়ো হাওয়া।

ছবি: লেখক।

ছবি: লেখক।

রাত পেরিয়ে ভোরের আলোও ফুটল। কিন্তু ঘুম চোখে কান পেতে শুনি তখনও অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে। অফিস যে হেতু হাঁটাপথেই, তাই এই বৃষ্টি নিয়ে খুব একটা উদ্বিগ্ন হইনি। তবে বড় উদ্বেগ যে অপেক্ষা করছিল কে জানত! বৃষ্টি আর তার সঙ্গে আকাশ অন্ধকার থাকায় সময় যে কখন পেরিয়ে গিয়েছে, খেয়াল হয়নি। চটপট অফিসের জন্য প্রস্তুত হলাম। তার পর বেরিয়ে পড়লাম মেস থেকে। রাস্তায় নামতেই দেখি, গোড়ালির উপরে জল জমেছে। যাই হোক, বৃষ্টি মাথায় নিয়েই অফিসের দিকে হাঁটা লাগালাম। অফিসে তো পৌঁছেও গেলাম। কিন্তু বৃষ্টি কমার যেন কোনও লক্ষণই দেখা যাচ্ছিল না। বরং সময় যত এগিয়েছে, বৃষ্টির পরিমাণ আর তেজ আরও বাড়ছিল। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ঝুঁকি নিতে চাইনি। বিকেল হতেই অফিস থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু এ কী! অফিসে আসার সময় যে ছবি দেখেছিলাম, এখন দেখছি ভয়াবহ দৃশ্য! গোড়ালি অবধি জল কোথায়, রাস্তা যেন ফুলেফেঁপে ওঠা খরস্রোতা এক নদী। ‘যা হবে দেখা যাবে’ এই ভেবে আর বিন্দুমাত্র দেরি না করে বেরিয়ে পড়লাম আমরা কয়েক জন। কোনটা রাস্তা বুঝতে পারছিলাম না। যাই হোক, দুরু দুরু বুকে এক পা-দু’পা করে রাস্তা ধরে এগোতে থাকলাম। প্রথমে কোমরসমান জল, একটু এগোতেই জল আরও বাড়ল। বুঝতে পারছিলাম জল মুহূর্তে মুহূর্তে বাড়ছে। আরও একটু এগোতেই প্রায় গলাসমান জল। এ ভাবেই সাহসে ভর করে জলের স্রোতের সঙ্গে লড়াই করতে করতে মেসের দিকে এগোতে থাকলাম।

পৌঁছেও গিয়েছিলাম মেসে। কিন্তু সেই বুকসমান জল, জলের স্রোত পেরিয়ে আসার মুহূর্তটা ভাবলেই শিউরে উঠছি। আমি থাকি চেন্নাইয়ের মায়লাপুরে। চার পাশে জল থই থই। প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় আগেভাগেই অনেক বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল প্রশাসন। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরাও নিরন্তর নজরদারি চালিয়ে গিয়েছেন। সোমবার সারা দিন বৃষ্টি হয়েছে। রাতের দিক থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে শুরু করে। বৃষ্টি যে হেতু কমতে শুরু করেছিল, জলও নামতে শুরু করে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বৃষ্টি হয়নি মায়লাপুরে। তবে জল পুরোপুরি নেমে যায়নি। রবিবার রাত থেকেই বিদ্যুৎ নেই এলাকায়। খাবার জলের সমস্যাও দেখা দিতে শুরু করেছে। তবে পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে তার নিশ্চয়তা নেই। আপাতত আঁধারের মধ্যেই কাটাতে হচ্ছে। জলের সমস্যা এখনও তেমন প্রকট না হলেও, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হলে সেই সমস্যা যে প্রকট হবে, তা অনুমেয়।

Chennai Rain Cyclone

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।