দেশকে মাওবাদী-মুক্ত করার কেন্দ্রীয় অভিযান যখন ‘সাফল্যের’ মুখ দেখছে, তখন একতরফা আক্রমণাত্মক বক্তৃতা থেকে বেরিয়ে ‘নরমে-গরমে’ চলার কৌশল নিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যে নকশালপন্থীদের এত দিন শুধু ‘দেশদ্রোহী’ বলেই চিহ্নিত করেছেন শাহ, এ বার তাঁদের ‘ভাই’ সম্বোধনও করলেন ছত্তীসগঢ়ের সভা থেকে।
শনিবার ছত্তীসগঢ়ের দান্তেওয়াড়া জেলায় এক সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন শাহ। নকশালদের অস্ত্রসমর্পণ করে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করে তিনি বলেন, “আপনারা আমাদের নিজেদের লোক। যখন কোনও নকশাল মারা যান, কেউই খুশি হই না।” সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘নকশাল ভাইদের কাছে আমি অনুরোধ করছি, আপনারা অস্ত্রসমর্পণ করুন এবং মূলস্রোতে ফিরে আসুন।’’ ঘটনাচক্রে, কয়েক দিন আগেই ছত্তীসগঢ়ে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে ১৬ জন মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে। ওই সময়েও অস্ত্রসমর্পণের বার্তা দিয়েছিলেন শাহ। তিনি বলেছিলেন, অস্ত্র কিংবা হিংসা দিয়ে পরিবর্তন আনা যায় না। শুধুমাত্র শান্তি এবং উন্নয়নই দিনবদলের একমাত্র পথ।
২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে দেশ থেকে নকশাল-সমস্যা নির্মূল করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্র। শনিবার শাহের বার্তাতেও সেই লক্ষ্যমাত্রাই আরও একবার প্রতিফলিত হল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করে দেন, অস্ত্র দিয়ে বস্তারে জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় উন্নয়ন ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন না মাওবাদীরা। কোনও নকশাল আত্মসমর্পণ করলে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার তাঁকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেবে বলেও আশ্বাস দেন শাহ। শুধু তা-ই নয়, আত্মসমর্পণ করা নকশালেরা সমাজের উন্নয়নেও শামিল হতে পারবেন। শাহের বক্তব্য, বস্তারে গুলি চলা, বোমা ফাটার দিন শেষ হয়ে এসেছে।
তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরে শাহ সম্প্রতি দাবি করেছেন, কেন্দ্রের বর্তমান সরকারের আমলে দেশে ‘মাওবাদী উপদ্রুত জেলা’র সংখ্যা ১২ থেকে কমে ছয় হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে দেশে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ২০৭ জন মাওবাদী নিহত হয়েছিলেন। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই সেই সংখ্যা ছুঁয়ে ফেলা গিয়েছে। পাশাপাশি আত্মসমর্পণের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। শাহ জানান, গত বছরে ৮৮১ জন মাওবাদী অস্ত্রসমর্পণ করেছেন। এ বছরে এখনও পর্যন্ত ৫২১ জন মাওবাদী অস্ত্রসমর্পণ করে ফেলেছেন।
আরও পড়ুন:
এই মুহূর্তে দেশে মাওবাদী-উপদ্রুত রাজ্যগুলির মধ্যে এক নম্বরে ছত্তীসগঢ়। মাওবাদী কার্যকলাপ রুখতে গত কয়েক মাসে বেশ কিছু বড় অভিযান চলেছে এই রাজ্যে। শনিবার দান্তেওয়াড়ায় শাহ জানান, বস্তারে উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে। গত ৫০ বছর ধরে এই এলাকায় কোনও উন্নয়ন হয়নি। তাঁর দাবি, নরেন্দ্র মোদী সরকার পাঁচ বছরের মধ্যে বস্তারকে সব ধরনের উন্নয়নের মুখ দেখাতে চায়। কিন্তু তা সম্ভব হবে যখন ছোটরা স্কুলে যাবে, যখন প্রত্যেকের আধার কার্ড, রেশন কার্ড থাকবে। বস্তারবাসী যখন নিজেদের বাড়িকে, গ্রামকে ‘নকশালমুক্ত’ করার সিদ্ধান্ত নেবেন, তখনই এই উন্নয়ন সম্ভব বলে জানান তিনি।
বস্তুত, ছত্তীসগঢ়ের বিজেপি সরকার ইতিমধ্যে মাওবাদী কার্যকলাপ নির্মূল করতে গ্রামবাসীদের এগিয়ে আনতে পদক্ষেপ করেছে। যে গ্রাম মাওবাদীদের ধরিয়ে দিতে সাহায্য করবে এবং নিজেদের গ্রামকে মাওবাদ-মুক্ত করতে উদ্যোগী হবে, সেই গ্রামগুলির উন্নয়নের জন্য এক কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা করেছে ছত্তীসগঢ় সরকার। শনিবার শাহ জানান, মাওবাদী-মুক্ত দেশ গড়তে দ্বিমুখী পদক্ষেপে এগোচ্ছে কেন্দ্র। যাঁরা আত্মসমর্পণ করবেন, তাঁরা সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসবেন। আর যাঁরা আত্মসমর্পণ করবেন না, তাঁদের জন্য নিরাপত্তাবাহিনী রয়েছে।