ত্রিপুরা সিপিএমের নতুন রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র।
আড়াই মাস আগের হামলার ক্ষত এখনও লেগে আছে বাড়িটার গায়ে। সামনের এক ফালি উঠোনে দশরথ দেবের ক্ষতিগ্রস্ত মূর্তির মাথা প্লাস্টিকে মোড়া। তারই পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন কুড়ি বছর রাজ্য শাসন করা এক মুখ্যমন্ত্রী। রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়া অটোর চালক তাঁকে দেখে মুখ বাড়িয়ে বলে গেলেন, ‘‘ঠিক হচ্ছে না এ সব। আমরা আছি কিন্তু। আপনারা লড়ে যান!’’
অটো চলে যেতেই চিলতে হাসি ঝুলিয়ে মানিক সরকারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটাই হচ্ছে সাধারণ মানুষের মনোভাব।’’ পুরভোটে এই মনোভাবের ফায়দা নিয়ে সিপিএম কি পারবে ঘুরে দাঁড়াতে? মানিকবাবুর মত, ‘‘বামপন্থীরাই লড়াই করছে, করবে। এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে হবে। কলকাতা থেকে তো ভোটার আসবে না! এখানকার মানুষ যা দেখছেন, সেই অভিজ্ঞতায় বুঝে নেবেন।’’
তথ্যের খাতিরে মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে, রাত পোহালে ত্রিপুরার যত পুর এলাকায় ভোট, তার প্রায় সবই পাঁচ বছর আগে দখলে ছিল বামেদের। আগরতলা পুরসভাতেই যেমন ৫১টি ওয়ার্ডের মধ্যে চারটি জিতেছিল কংগ্রেস, বাকি সব বাম। কিন্তু রাজ্যে বিজেপির সরকার আসার পরের ৪৪ মাসে অনেক কিছুই ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। এ বারের পুরভোট এখন বামেদের কাছে জমি ফিরে পাওয়ার এবং নিজেদের ফের প্রমাণ করার লড়াই।
ত্রিপুরা সিপিএমের নতুন রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরীও মনে করছেন, এই পুরভোটে তাঁরা খানিকটা ঘর গোছাতে পারবেন। সরকার পরিবর্তনের অভিঘাতে দল এলোমেলো হয়েছিল, লাগাতার হামলার মুখে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল সংগঠন। এখন? জিতেন্দ্রের কথায়, ‘‘আগরতলা হোক, ধর্মনগর বা সাব্রুম— পুরভোটের প্রচারে আমরা সাড়া পেয়েছি ভাল। লোকজন বেরিয়েছে। একটা কোনও দল নয়, এটা আসলে গণতন্ত্র বাঁচানোর লড়াই। মানুষ বুঝছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে মানুষ বিজেপিকে শিক্ষা দেবেন।’’
দশরথ দেব ভবনের দো’তলার যে ঘরে বসে জিতেন্দ্র কথা বলছেন, কয়েক মাস আগেও সে ঘর ছিল গৌতম দাশের। নিয়মিত থাকতেন বিজন ধর। কোভিড পরবর্তী জটিলতার ধাক্কা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক এবং বামফ্রন্টের আহ্বায়ককে আকস্মিক ভাবে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে। তার সঙ্গে আছে পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্পর্কে অনভিজ্ঞতার কাঁটা। জিতেন্দ্র মানছেন, ‘‘আমাদের দলের ৯৩% কর্মীই দলে এসেছেন কংগ্রেস জোট সরকারের সেই সন্ত্রাস-আমলের পরে। এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি তাঁরা আগে হননি। তাই সরকার বদল এবং হামলার মুখে একটু গুটিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। এখন আবার একটু একটু করে জোর ফিরে পাচ্ছি।’’ রাজ্য সম্পাদক জানাচ্ছেন, পার্টি অফিস ভাঙা পড়েছে ৪৭টা। কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলা অগুনতি, সঙ্গে মামলার ফাঁস। এ সবের সঙ্গে লড়াই খুব সহজ নয়।
ত্রিপুরার সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেসকে নিয়ে খুব ভাবিত নন। তাঁদের যুক্তি, বাম-বিরোধী দলগুলির ভাগে অ-বাম ভোটের পরিমাণ বদলালেও ত্রিপুরা রাজনীতির অঙ্ক বদলায়নি। তবু বিজেপির মোকাবিলায় তাঁরা কি তৃণমূলের সঙ্গে যাওয়ার কথা ভাবছেন? বিজেপি এখনই প্রচার করছে, সিপিএম, তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে আসলে ‘নিশ্চুপ জোট’ আছে! জিতেন্দ্রের জবাব, ‘‘একটা দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক ফ্রন্ট হয়, আবার এক ধরনের নির্বাচনী সমঝোতা হয়। তার কোনওটাই করতে হলে কর্মসূচি, আন্দোলন দরকার। এখানে তৃণমূলের তরফে তেমন কিছুই এখনও দেখা যায়নি। শুধু ‘আমরাই বিজেপিকে হারাতে পারি’ ভাষণ চলছে! তাতে কি কোনও সিদ্ধান্ত হয়?’’
অন্য কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে আপাতত বিজেপি সম্পর্কে মানুষের ‘মোহভঙ্গে’ই নজর রাখছেন মানিক-জিতেন্দ্রেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy