মণিপুরের প্রেক্ষাপটের মুখোমুখি এ বার অরুণাচল প্রদেশ। আদালতের রায়ের বিরোধিতায় পথে নেমেছে একটি ধর্মীয় জনগোষ্ঠী। উল্টো দিকে, অবিলম্বে আদালতের রায় মেনে পদক্ষেপ করার দাবি তুলে রাস্তায় নামছে আরএসএসের শাখা ‘বনবাসী কল্যাণ আশ্রম’। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, প্রায় এক দশক ধরে অরুণাচলে বিজেপির সরকার চলছে। কিন্তু আরএসএসের জনজাতি সংগঠন সেই সরকারের উপরেই ‘চাপ’ তৈরি করতে পথে নামতে চলেছে।
কলকাতায় ওই সংগঠনের সর্বভারতীয় স্তরের বৈঠক আয়োজিত হয়েছিল। তার ফাঁকেই মঙ্গলবার সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি সত্যেন্দ্র সিংহ এবং সহ-সভাপতি তেচি গুবিন ওই আন্দোলন করার কথা ঘোষণা করেন। ঘটনাচক্রে, গুবিন নিজে অরুণাচলেরই জনজাতি নেতা। মূলত তিনিই অরুণাচলের ‘সমস্যা’র কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘ধর্মান্তরণ রোধ আইন অরুণাচলে অবিলম্বে কার্যকর করতে রাজ্য সরকারকে বাধ্য করতে হবে। তাই বনবাসী কল্যাণ আশ্রম রাস্তায় নামছে।’’
অরুণাচলে ধর্মান্তরণ রোধ আইন পাশ হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। কিন্তু তার পর থেকে কোনও সরকারই সেই আইনের ‘বিধি’ তৈরি করেনি। ২০১৬ সাল থেকে সেখানে লাগাতার পেমা খান্ডুর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার চলছে। অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়েও সেখানে গেগং আপাঙের নেতৃত্বে বিজেপি সরকার ছিল। কিন্তু কোনও আমলেই ধর্মান্তরণ রোধ আইনের ‘বিধি’ তৈরি করা যায়নি। জনজাতি সম্প্রদায়ের এক আইনজীবীর দায়ের করা জনস্বার্থ মামলায় সম্প্রতি গুয়াহাটি হাই কোর্টের ইটানগর বেঞ্চ ওই আইনের ‘বিধি’ প্রণয়ন করে তা কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছে। ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের সেই রায়ে হাই কোর্টের নির্দেশ, ছ’মাসের মধ্যে অরুণাচল সরকারকে ১৯৭৮ সালে পাশ হওয়া আইনটির ‘বিধি’ প্রণয়ন করতে হবে।
হাই কোর্টের রায়ের পর থেকেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। মণিপুরে যেমন আদালতের রায়ের বিরোধিতা করে কুকি জনগোষ্ঠী পথে নেমেছিল, অরুণাচলেও প্রায় সেই ধাঁচেই বিরোধিতা শুরু হয়ে গিয়েছে। বনবাসী কল্যাণ আশ্রমের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি গুবিনের দাবি, ‘‘এই আইন কার্যকর হলে আর জনজাতিদের ধর্মান্তরিত করা যাবে না বলে গির্জার নির্দেশে আন্দোলন শুরু হয়েছে। সরকারের উপরে তারা চাপ তৈরি করতে চাইছে। তাই আমরাও পাল্টা পথে নামছি। সরকারকে আমরা বাধ্য করব এই আইন কার্যকর করতে।’’
বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আরএসএসের সহযোগী সংগঠন পথে নামছে, এমন দৃষ্টান্ত বিরল। কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল, তা নিয়ে সঙ্ঘের জবাব খুব স্পষ্ট নয়। বনবাসী কল্যাণ আশ্রমের নেতারা যখন ওই ঘোষণা করছেন, তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণবঙ্গ আরএসএসের প্রচার প্রমুখ বিপ্লব রায়। আরএসএস সমর্থিত একটি আইন কেন অরুণাচলের বিজেপি সরকার এত দিনে কার্যকর করতে পারল না, সে প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান বিপ্লব। বলেন, ‘‘সরকার যারই হোক, আন্দোলনে নামার প্রয়োজন হলে নামতেই হবে।’’