Advertisement
E-Paper

‘চাকা ঘুরতেই চালু  চাঙ্গা করার দাওয়াই’

দরিদ্রদের জনধন অ্যাকাউন্টে তখন ৩১ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। তার ৪৩% ব্যাঙ্কেই পড়ে থেকেছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৪৬
Share
Save

ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এ বার বাজেটে জোর সরকারি খরচে। তার দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রকের ব্যয় সচিব টি ভি সোমনাথন-এর কাঁধে। যাঁর অর্থনীতিতে পিএইচডি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বাজেট নিয়ে বুধবার সেই সোমনাথনের মুখোমুখি প্রেমাংশু চৌধুরী

প্রশ্ন: অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেট-বক্তৃতায় বলেছেন, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সরকার বিপুল খরচ করছে। কিন্তু চলতি আর্থিক বছরে ৩৪.৫ লক্ষ কোটি টাকা সরকারি ব্যয়ের তুলনায় আগামী বছরে তা খুব সামান্য বাড়ছে। মাত্র ৩৩ হাজার কোটি টাকা। তা হলে খরচ আর তেমন বাড়ছে কোথায়?

উত্তর: ৩৪.৫ লক্ষ কোটি টাকা এ বছরের সংশোধিত হিসেব। কোভিডের জন্য এ বছর অনেক এককালীন, বিশেষ খরচ হয়েছে। যেমন, লকডাউনের সময়ে দরিদ্রদের সুরাহা দিতে ৮০ কোটি মানুষের জন্য গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় ১.৩৩ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গরিব মানুষের জনধন অ্যাকাউন্টে ৩১ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এ সব খরচ আসছে বছরে থাকবে না। (এই সমস্ত খরচের আগে) এ বছরের জন্য বাজেটে আনুমানিক সরকারি খরচ ছিল ৩০.৪ লক্ষ কোটি। সেই তুলনায় আগামী বছরে ৩৪.৮ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করা হবে। যা অনেকটাই বেশি।

প্রশ্ন: কিন্তু জিডিপি-র তুলনায় তো খরচের বহর কমছে। ২০২০-২১ সালে জিডিপি-র ১৭.৭% খরচ হয়েছে। ২০২১-২২ সালে তা ১৫.৬%। এতে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে?

উত্তর: এ বছর জিডিপি (সঙ্কুচিত হওয়ার দরুন) অনেক কম। খরচও বেশি হয়েছে। তাই খরচের হার বেশি মনে হচ্ছে। কিন্তু আগামী বছরে জিডিপি অনেকটা বাড়বে। তাই তার তুলনায় খরচের হার কম দেখাচ্ছে।

এ বছর রাজকোষ ঘাটতি ৯.৫%। তার মধ্যে খাদ্যে ভর্তুকি বাবদ এত দিন যে খরচ বাজেটের বাইরে ছিল, সেটি বাদ দেওয়ার পরেও বাস্তব ঘাটতি ৮.৭%। সামনের বছরে সম্ভাব্য রাজকোষ ঘাটতি ৬.৮%। সেটাও যথেষ্ট বেশি।

প্রশ্ন: অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে জিডিপির ১৩% ‘স্টিমুলাস’ বা দাওয়াই হিসেবে দেওয়া হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রীর দাবি। কিন্তু বাজেটের হিসেব বলছে, তা মাত্র ৪.৯%। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভারতে দাওয়াই সব থেকে কম বলেই অর্থনীতিতে সঙ্কোচন সব চেয়ে বেশি। মানছেন? আগামী বছরের জন্য চাঙ্গার দাওয়াই কোথায়?

উত্তর: একমত নই। ভারতে আগে থেকেই কড়া লকডাউন জারি হয়েছে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত চাষ-আবাদ ছাড়া (কার্যত) সব বন্ধ ছিল। সেই কারণেই প্রায় ২৪% সঙ্কোচন হয়। তখন স্টিমুলাস হিসেবে মানুষের হাতে টাকা তুলে দিলে কিংবা সরকারি খরচ বাড়িয়েও লাভ হত না। কারণ, মানুষের তো টাকা খরচ করার জায়গাই ছিল না।

দরিদ্রদের জনধন অ্যাকাউন্টে তখন ৩১ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। তার ৪৩% ব্যাঙ্কেই পড়ে থেকেছে। রুজিরুটি নিয়ে অনিশ্চয়তার জন্য কেউ টাকা খরচ করতে চাননি। অক্টোবরের শেষ থেকে যখন স্বাভাবিক গতিবিধি চালু হয়েছে, রেল-সড়ক-বিমান যোগাযোগ (ধীরে ধীরে) খুলতে থেকেছে, তখন থেকে সরকার টাকা খরচ শুরু করেছে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এই খরচ আগামী বছরেও করা হবে। জিডিপির বেশি সঙ্কোচন হয়েছে আগে থেকে কড়া লকডাউনের জন্য। কিন্তু তেমনই তার জন্য কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা, সুস্থ হওয়ার হারে আমরা (তুলনায়) ভাল জায়গায়। উল্টো দিকে, ব্রিটেনে অনেক আগে বিরাট অঙ্কের আর্থিক দাওয়াই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থনীতিতে তেমন উন্নতি হয়নি।

প্রশ্ন: বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে খরচ কি ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো? পানীয় জল, নিকাশি, দেশ জুড়ে পুষ্টি অভিযানের খরচও ওই খাতে ব্যয়ের সঙ্গে যোগ করে দেওয়া হয়েছে। বিরোধীরা তো একে ভাঁওতা বলছেন!

উত্তর: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাই (হু) বলছে, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, টাইফয়েডের মতো রোগ প্রতিরোধে পানীয় জল, নিকাশির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি তাই স্বাস্থ্য খাতেই খরচ। শুধু যদি স্বাস্থ্য মন্ত্রকের খরচও ধরি, তা-ও কিন্তু বাড়ছে।

প্রশ্ন: আপনি পরিকাঠামোয় খরচ ১.১৫ লক্ষ কোটি টাকা বাড়িয়েছেন। কিন্তু রাজস্ব খাতে প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকা খরচ কমেছে। এতে কি অর্থনীতি চাঙ্গা হবে?

উত্তর: রাজস্ব খাতে খরচ কমিয়ে পরিকাঠামোয় ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। (সাধারণত) পরিকাঠামোয় ১ টাকা খরচ করলে, অর্থনীতিতে তার আড়াই থেকে চার গুণের বেশি প্রভাব পড়ে। সেখানে রাজস্ব খাতে ১ টাকা খরচ করলে, তার প্রভাব ১ টাকারও কম। উপরন্তু, সড়ক-সেতু-রেলের মতো পরিকাঠামোয় খরচ করায় অপ্রশিক্ষিত, অর্ধ-প্রশিক্ষিত শ্রমিকদের বিপুল কর্মসংস্থান হয়।

প্রশ্ন: কিন্তু রাজস্ব খাতে খরচ ছাঁটাই করতে গিয়ে তো একশো দিনের কাজের বরাদ্দও কমেছে?

উত্তর: এ বছর একশো দিনের কাজে বিপুল বরাদ্দ বাড়াতে হয়েছিল। কারণ, কোভিডের ফলে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় গ্রামে ফেরা মানুষের ভরসাই ছিল ওই একশো দিনের কাজের প্রকল্প। কিন্তু আগামী বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।

প্রশ্ন: কী ভাবে ধরে নিচ্ছেন যে, সামনের বছরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে?

উত্তর: কাজকর্ম স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। পরিযায়ী শ্রমিকেরা শহরে ফিরছেন। সাম্প্রতিক হিসেব বলছে, একশো দিনের কাজের চাহিদা কমছে। পরে যদি দেখা যায়, ওই প্রকল্পে কাজের চাহিদা বাড়ছে, তা হলে প্রয়োজন মাফিক বরাদ্দও বাড়বে। তবে এ বছর অনেক খরচ কমাতে হয়েছে।

Government Indian Economy Budget 2021 union budget 2021

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।