টিটোস্টারওয়েল চাইনে
ভোট দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে, তা-ই অনেক। এর পরে আবার একেবারে প্রধান পদ দখল করতে চান মহিলা? নৈব নৈব চ! মেঘালয়ের ‘তথাকথিত মাতৃতান্ত্রিক’ সমাজেও এই স্পষ্ট বার্তা খাসি স্বশাসিত পরিষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য টিটোস্টারওয়েল চাইনে-র। এ বিষয়ে নারীদের অধিকার অস্বীকার কিংবা লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘এ ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যের প্রশ্ন নেই। কারণ, এটাই প্রথা, এমনটাই ঐতিহ্য!’’
খাসি পাহাড় আগে বহু স্থানীয় রাজার অধীনে ছিল। সেই সব ‘ছোট’ রাজাদের বলা হত সিয়েম। তাঁদের অধীনে থাকত একটি করে জমিদারি বা হিমা। রাজতন্ত্র না থাকলেও, সেই কাঠামো এখনও রয়েছে। সিয়েমদের ক্ষমতা ও অধিকারে এখনও মান্যতা দেওয়া হয় এবং তা আইনসিদ্ধ। এর পরে মেঘালয়ের প্রথাগত প্রশাসনিক কাঠামোয় অনেকটা পঞ্চায়েতের মতো প্রতিষ্ঠান: দরবার স্নং। শহর এলাকাও তার অধীনে। দরবারের নির্বাচিত প্রধানকে বলা হয় রংবাহ্ স্নং।
সম্প্রতি মাওলাই টাউন দরবার, সেং কিনথেই মাওলাই পাইলুন ও সেং সামলা মাওলাই পাইলুন যৌথ ভাবে খাসি স্বশাসিত পরিষদের প্রধানের কাছে স্মারকপত্র জমা দিয়ে দাবি করেছে, বদলে যাওয়া সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আইনে পরিবর্তন এনে মহিলাদেরও রংবাহ্ স্নং হওয়ার নির্বাচনে লড়ার অধিকার দিতে হবে। এ নিয়েই নতুন করে দানা বেঁধেছে বিতর্ক। পরিষদও মহিলাদের অধিকার দেওয়ার পক্ষে নয়।
চাইনে বলেন, “শিলং-সহ বেশ কিছু দরবার স্নংয়ের মহিলারা রংবাহ্ স্নং নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার পেয়েছেন। এমনকী স্থানীয় হিমার অনুমতি সাপেক্ষে দরবারের সদস্য হিসেবেও মহিলাদের স্থান দেওয়ার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু তা বলে দরবারের প্রধান বা রংবাহ্ স্নং হিসেবে মহিলাদের মানবে না সমাজ। এটি মহিলাদের অধিকারের বিষয় নয়, বরং সামাজিক রীতির প্রশ্ন।”
কিন্তু দেশে যখন প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বত্র উঁচু পদে মহিলাদের অংশীদারি বাড়ছে, তখন ‘মাতৃতান্ত্রিক’ মেঘালয়ে এই মানসিকতা কি সমানাধিকারের পরিপন্থী নয়? চাইনে বলেন, “রংবাহ্ স্নংয়ের অনেক কাজ ও দায়িত্ব। তা সামলানো মুখের কথা নয়। সকলে প্রধানকে না মানলে, কাজ চালাতে সমস্যা হবে।”
মহিলা সংগঠনগুলির প্রশ্ন, একই সমাজ যেখানে গণতান্ত্রিক কাঠামোয় মহিলাদের মন্ত্রী-বিধায়ক হিসেবে মেনে নিতে পারছে, সেখানে সামাজিক ধারা বা ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে কোন কোন যুক্তিতে দরবারে প্রধানের পদে ব্রাত্য করে রাখা হচ্ছে তাঁদের?
অবশ্য প্রায় সব দরবারেই প্রধানদের নির্বাচন করতে মহিলাদের ভোটাধিকারের বিষয়টি নিয়ে জনমত ক্রমশ পোক্ত হচ্ছে। শিলংয়ের হিমা মিলিয়েমের সিয়েম আইনাম মানিক সিয়েম এ নিয়ে বিশদ আলোচনার সুপারিশ করেছেন। তাঁর মতে, কয়েকটি এলাকা থেকে দাবি উঠলেই তা মানা যায় না। সব দরবারের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে।
মানবাধিকার কর্মী অ্যাগনেস খারসিং বলেন, “ভোটাধিকার তো বটেই, মহিলাদের প্রধান হিসেবে নির্বাচনও যে স্বাভাবিক, তা সমাজকে বুঝিয়ে দিতে হবে। যাঁরা প্রথাগত সামাজিক কাঠামোর মাথায় রয়েছেন, তাঁরা মহিলাদের হাতে ক্ষমতা না দিয়ে বিভাজন বজায় রাখতে চান। তাই তাঁদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy