কুনোয় চিতা। পিটিআই
লোকালয়ে নয়, বাঘ ঢুকেছে বনে!
তবে ওই অরণ্য যে দেশের জাতীয় পশুকে স্বাগত জানাবে, সেই সুযোগ আর নেই। কারণ, মধ্যপ্রদেশের সেই জাতীয় উদ্যান এখন দেশের বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের সাধের চিতা পুনঃস্থাপন কেন্দ্র, কুনো। চিতার ঘরে বাঘের বাসা তাই কপালে ভাঁজ ফেলেছে বন-কর্তাদের!
সপ্তাহ খানেক ধরে কুনোর জঙ্গল থেকে তাই বাঘ-বিদায় করার তোড়জোড় চলছে। স্বেচ্ছায় বন না বদলালে, বাঘকে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করে অন্যত্র পাঠানো হবে বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
একই বনাঞ্চলে বাঘ এবং চিতার সহাবস্থান যে সম্ভব নয়, বিশেষজ্ঞরা তা কবুল করছেন। বাঘ বিশেষজ্ঞ বল্মীক থাপার জানাচ্ছেন, ‘বিগ ক্যাট’ বা ‘প্যান্থেরা’ গোষ্ঠীর বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী বাঘ বা সিংহের তুলনায় ‘নন-প্যান্থেরা’ তালিকাভুক্ত চিতা শুধু দুর্বল বা ক্ষীণজীবীই নয়, বনাঞ্চলের একই পরিধিতে তাদের বনিবনা নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট সংশয়। সেই সূত্র ধরে বিশিষ্ট চিতা-গবেষক রুবেল কেনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘মধ্য-পূর্ব কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন জঙ্গলে বাঘের অস্তিত্ব নেই। সেখানে সিংহ-লেপার্ড (চিতাবাঘ) এবং চিতার সহাবস্থান দেখা গেলেও মনে রাখতে হবে সেই সব বনাঞ্চলের বিস্তার সুবিস্তৃত। কোথাও বা তার বিস্তার ঘটেছে এক দেশ থেকে অন্য দেশে।’’ সেই নিরিখে কুনো জাতীয় উদ্যানের পরিধি সাকুল্যে ৩৪৪ বর্গ কিলোমিটার। কাজেই সেখানে বাঘ-চিতার মুখোমুখি সংঘাত অনিবার্য।
নামিবিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আকাশপথে নিয়ে আসা ২০টি চিতার তিনটি ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছে। দেশের ‘ন্যাশনাল চিতা ট্রান্সলোকেশন প্রজেক্ট’-এর (এনসিটিপি) এক কর্তা জানিয়েছেন, আরও দু’টি চিতার শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। মাস কয়েক আগে একটি চিতা চারটি শাবক প্রসব করেছিল। যার তিনটি ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছে। এই শিরে-সংক্রান্তি আবহে চলতি সপ্তাহে কুনোর বনে অন্তত দু’টি বাঘ আস্তানা গেড়েছে বলে জানা গিয়েছে। পড়শি রাজ্য রাজস্থানের রণথম্ভোর ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে তারা এসে যুগলে ঘর বেঁধেছে কুনোর বনে। যা দেখে বুক কেঁপে উঠেছে এনসিটিপি কর্তাদের।
ফোনের ও পারে মধ্যপ্রদেশের মুখ্য বন-আধিকারিক জে এস চৌহানের গলায় স্পষ্টই উদ্বেগ, ‘‘বাঘ দু’টির ভাবগতিক ভাল নয়। পায়ের ছাপ দেখে সন্দেহ হচ্ছে, ওই দু’টি বাঘের একটি গত নভেম্বরে এক সাংবাদিককে আক্রমণ করেছিল। ফলে চিতার নিরাপত্তার প্রশ্নটি সংশয়ে রেখেছে আমাদের।’’ তিনি জানিয়েছেন, একটি বাঘের নিজস্ব চলাফেরার এলাকা (টেরিটরি) সাধারণত ২০ থেকে ২৫ বর্গ কিলোমিটার। কিন্তু আফ্রিকার চিতা প্রায় ৭০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ঘুরে বেড়ায়। কুনোর জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়ার পরে দু’টি চিতার জঙ্গলের সীমানা ছাড়িয়ে বহু দূরের লোকালয়ে চলে যাওয়ার ঘটনা তারই প্রমাণ। কুনো জাতীয় উদ্যানের ফিল্ড ডিরেক্টর উত্তম শর্মা অবশ্য সাহস জোগাচ্ছেন, ‘‘আমরা চিতাদের উপরে সর্বক্ষণ নজর রাখছি। বাঘ-চিতার সংঘাতের সম্ভাবনা নেই।’’ কিন্তু বাঘ বিশেষজ্ঞ আনিস আন্ধেরিয়া বলেন, ‘‘চিতা খোলা বিচরণভূমিতে ঘুরে বেড়ায়। আর বাঘ নিজেকে লুকিয়ে রাখে ঝোপের আড়ালে। ফলে বাঘের পক্ষে চিতার গতিবিধি লক্ষ্য করে তাকে আক্রমণ করা সহজ। আর সে ঘটনা ঘটতে থাকলে, এনসিটিপি-র গোটা পরিকল্পনাই জলে যাবে!’’
তা হলে উপায়? মধ্যপ্রদেশের এক বনাধিকারিক বলছেন, ‘‘সপ্তাহ খানেক পর্যবেক্ষণ করা হবে। ওই বাঘ দু’টি যদি রণথম্ভোরে তাদের পুরনো ঠিকানায় ফিরে না যায়, তা হলে হয়তো ঘুমপাড়ানি গুলির সাহায্য নিতে হবে। তার পরে তাদের অন্য কোনও বনাঞ্চলে ছেড়ে আসা হবে।’’ যা শুনে দেশের এক পরিচিত বাঘ বিশেষজ্ঞ বলছেন, ‘‘দেশের জাতীয় পশু নাকি (সরকারি উদ্যোগে আনা) আফ্রিকার চিতা— সরকারের কাছে কে যে দামী, তা বোঝা দায়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy