প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে বিস্তারিত হলফনামা চাইল সুপ্রিম কোর্ট। ফাইল চিত্র।
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের মামলায় রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে বিস্তারিত হলফনামা চাইল সুপ্রিম কোর্ট।
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে গত জুনে ২৬৯ জন প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছিল। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ টেট-এ পাশ করতে না পারা ২৭৩ জন প্রার্থীর পরীক্ষায় এক নম্বর বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কারণ, একটি প্রশ্নে ভুল ছিল। তার পরেই ওই ২৭৩ জনের মধ্যে থেকে ২৬৯ জনকে চাকরি দেওয়া হয়। আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ও বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, গোটা বিষয়টি জানিয়ে পর্ষদ সোমবারের মধ্যে কোর্টে হলফনামা জমা দেবে। বুধবার এ বিষয়ে ফের শুনানি হবে।
আজ সুপ্রিম কোর্টে যোগ্য হয়েও চাকরি না পাওয়া প্রার্থীদের হয়ে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য প্রশ্ন তুলেছেন, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কী ভাবে জানল এই ২৭৩ জনই ওই ভুল প্রশ্নে ভুল উত্তর দিয়েছেন! টাকার বিনিময়ে এই সব প্রার্থীদের বেছে বেছে নম্বর বাড়ানো হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। বিকাশের যুক্তি, মাথা পিছু সাড়ে সাত লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে বলে সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে। তা জানতে পেরেই হাই কোর্ট তাঁদের চাকরি খারিজ হয়ে গিয়েছে। কারা প্রশ্নে ভুল থাকার জন্য ভুল উত্তর দিয়েছিলেন, কারা নম্বর বাড়ানোর জন্য আবেদন করতে চান, তা জানতে চেয়ে কোনও বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়নি। পুরোটাই হয়েছে গোপনে।
চাকরিহারাদের আইনজীবী পি এস পাটওয়ালিয়ার অভিযোগ, তাঁদের বক্তব্য না শুনেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় চাকরি খারিজের নির্দেশ দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়ে চাকরিহারাদের বক্তব্য শোনার নির্দেশ দেয়। কিন্তু বিচারপতি প্রার্থীরা কোনও মেসেজ পেয়েছিলেন কি না, তাঁদের কাছে নথি রয়েছে কি না, শুধু এইটুকু জানতে চেয়েই চাকরি খারিজের নির্দেশ বহাল রেখেছেন। পর্ষদের আইনজীবী জয়দীপ গুপ্ত বলেন, ২৭৩ জন প্রশিক্ষিত টেট পরীক্ষার্থী প্রথমে অকৃতকার্য হয়েছিলেন। পরে তাঁরা বাড়তি এক নম্বর পেয়ে যোগ্যতামান অর্জন করেন। তার ভিত্তিতে ২৬৯ জনকে চাকরি দেওয়া হয়। বিকাশের অভিযোগ, ২৩ লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে কী ভাবে ওই ২৬৯ জনকে বাছাই করা হল, হাই কোর্টেও পর্ষদ তার উত্তর দিতে পারেননি।
প্রাথমিক ছাড়াও অন্যান্য শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে যাঁদের হাই কোর্টের রায়ে চাকরি গিয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট সেই সব ক্ষেত্রে হাই কোর্টের রায়ে আপাতত স্থগিতাদেশ জারির নির্দেশ দিয়েছে। আগেই শীর্ষ আদালত অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে হাই কোর্টের রায় ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। হাই কোর্টের রায়ে গত ১০ ফেব্রুয়ারি স্কুলের ১,৯১১ জন গ্রুপ-ডি কর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছিল। তাঁরাও সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। ওই মামলা সোমবার শোনা হবে।
হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরিহারাদের আইনজীবী মুকুল রোহতগি আজ অভিযোগ তোলেন, চাকরি খারিজের নির্দেশে স্থগিতাদেশ জারি হলেও তাঁরা চাকরিতে ফের যোগ দিতে পারছেন না। কারণ জেলা শিক্ষা পর্ষদ তার অনুমতি দিচ্ছে না। স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী কুণাল চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, কিছু আইনজীবী স্থগিতাদেশ জারি হয়নি বলে সাক্ষাৎকার দিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করেছেন। যোগ্য হয়েও চাকরি না পাওয়া প্রার্থীদের হয়ে মামলাকারী বিকাশ চাকরিতে যোগদানে আপত্তি তোলায় বিচারপতি ধুলিয়া বলেন, ছাত্রছাত্রীদের দিকটাও ভাবতে হবে। বিকাশের যুক্তি, এই সব অযোগ্য প্রার্থীরা যা শেখাচ্ছেন, তা শোধরাতে বহু বছর সময় লেগে যাবে। দুর্নীতির ফলে সামাজিক ব্যাধি তৈরি হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy