পাটওয়ালিয়া প্রশ্ন তোলেন, কমিশন হাই কোর্টের নির্দেশ না মানলেও কি ঠিক? বিচারপতিরা বলেন, সে ক্ষেত্রে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা যেতে পারে।
ফাইল চিত্র।
কাঁথির পুরভোটে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষার জন্য কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ জারি করল। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছিল। সেই সঙ্গে কঠোর বার্তা দিয়ে আজ শীর্ষ আদালত বলেছে, আদালতের সব কিছুতে নাক গলানো উচিত নয়। তা ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক নজির তৈরি করবে।
কাঁথি পুরসভায় অবাধ নির্বাচন হয়েছে কি না যাচাই করতে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ কাঁথি পুরভোটে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের ফরেন্সিক পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, ভারতের গণতন্ত্র নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
বিজেপি নেতা সৌমেন্দু অধিকারী কাঁথির পুরভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন। সেই মামলাতেই হাই কোর্ট নির্দেশ জারি করেছিল। আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চ হাই কোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ জারি করে জানিয়েছে, ‘শুধুমাত্র নির্বাচন পিটিশনের মাধ্যমেই কোনও নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ করা যায়। কলকাতা হাই কোর্ট জনস্বার্থ মামলায় এ ভাবে নির্দেশ জারি করতে পারে না।’
গত ২৬ এপ্রিল হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে কাঁথি পুরভোটে সিসি ক্যামেরার ফুটেজের ছবি দশ দিনের মধ্যে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল। হাই কোর্টের বক্তব্য ছিল, ভোট প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ না-করলেও রাজ্য নির্বাচন কমিশন অবাধ ও স্বচ্ছ ভোট করিয়েছে কি না, তা যাচাই করা দরকার। হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে।
আজ সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, হাই কোর্ট কোনওভাবেই নির্বাচন নিয়ে জনস্বার্থ মামলায় তথ্যপ্রমাণ জড়ো করতে পারে না। একবার নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে তাকে নির্বাচনী পিটিশনের মাধ্যমেই চ্যালেঞ্জ জানানো যায়। কাঁথির পুরভোটে অধিকাংশ ওয়ার্ডে সিসি ক্যামেরার মুখ ঘুরিয়ে বা অকেজো করে দিয়ে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তুলেছিলেন পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান। জনস্বার্থ মামলায় বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাইয়ের দাবি ছিল, নির্বাচন বাতিল করা হোক। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য, ‘বুথ দখল ইত্যাদি অভিযোগে নির্বাচনী পিটিশন করা যায়। জনস্বার্থ মামলায় নির্বাচন বাতিলের দাবি তোলা যায় না। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে সংবিধানের ২২৬ অনুচ্ছেদের আওতায় জনস্বার্থ মামলায় হাই কোর্টে মামলা করা বিপজ্জনক নজির। আমরা শুধু কাঁথি নিয়ে নই। এর বৃহত্তর প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন।’
হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সিসি ক্যামেরার ফুটেজের ফরেন্সিক তদন্ত করে কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরিকে বন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল। সেখানেও আপত্তি তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা। তাঁদের মতে, ‘‘এই মুখ বন্ধ খামের ব্যাপারটাই সন্দেহজনক।’’ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বলেন, এটা কোনও ফৌজদারি অপরাধের মামলা নয় যে ফরেন্সিক পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হবে। এর পর গোটা দেশেই এর পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিচারপতিরা।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী আজ যুক্তি দেন, একসঙ্গে ৮২টি ওয়ার্ডের সিসিটিভি ফুটেজের পরীক্ষা করতে হাই কোর্টের এই নির্দেশ অভূতপূর্ব। হাই কোর্টের আপাত ভাবে মনে হওয়ার দরকার যে সিসিটিভি ফুটেজে কারচুপি করা হয়েছে। আদালত এমন কোনও তথ্য পায়নি। কোনও নির্বাচনী পিটিশন দায়ের করা হয়নি। কেন ফরেন্সিক অডিটের নির্দেশ দেওয়া হল?
সৌমেন্দুর হয়ে আইনজীবী পি এস পাটওয়ালিয়া যুক্তি দেন, ‘‘হাই কোর্টের নির্দেশ অনেক ঘটনার চূড়ান্ত পরিণতি। কমিশন নির্বাচন করাতেই রাজি ছিল না। আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরে নির্বাচন হয়। নির্বাচনে বুথ দখল, শাসক দলের হিংসা, হামলার অভিযোগ উঠেছে। রাজ্যের পুলিশে আমাদের ভরসা নেই বলে আমরা কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছিলাম। প্রথম দফার ভোটের পরে দ্বিতীয়, তৃতীয় দফার ভোটের পরেও আমরা সিসি ক্যামেরার পরীক্ষা, কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের দাবিতে আদালতে গিয়েছিলাম। হাই কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে বলে, কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন কি না। ফের হিংসা হওয়ার আমরা আবার আদালত যাই। আদালত বলে, নির্বাচন কমিশনকে কেন্দ্রীয় বাহিনী সংক্রান্ত নথি দেখাতে হবে। দেখা যায়, কমিশন কিছুই করেনি। আদালত সিসিটিভি ফুটেজ জমা দিতে বলেছিল। নির্বাচনের সময় সাংবাদিকদের মারধর করা হয়। এক মন্ত্রীর ছেলেকে হুমকি দিতে দেখা গিয়েছে। ৯৭টি ক্যামেরা নষ্ট করা হয়েছে।’’ রাজ্য নির্বাচন কমিশন আসল সত্য বাইরে আসতে দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ তোলেন পাটওয়ালিয়া।
এর পরেও হাই কোর্ট নিজের এক্তিয়ারের সীমা ছাড়িয়েছে বলে অবস্থানে অনড় থাকে সুপ্রিম কোর্ট। পাটওয়ালিয়া যুক্তি দেন, হাই কোর্ট বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তারা দেখছেন, জল বিপজ্জনক সীমা ছাপিয়ে গিয়েছে। বিচারপতিরা বলেন, হাই কোর্ট এমন পদক্ষেপ করতে পারে না। পাটওয়ালিয়া প্রশ্ন তোলেন, কমিশন হাই কোর্টের নির্দেশ না মানলেও কি ঠিক? বিচারপতিরা বলেন, সে ক্ষেত্রে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy