ছবি সংগৃহীত।
কিছু দিন আগেই নবরাত্রি উপলক্ষে খাবারের উপরে হিন্দুত্ববাদীদের ফরমানের সাক্ষী থেকেছে গোটা দেশ। বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা তো বটেই, দিল্লিতে বিজেপি পরিচালিত পুরসভা গোটা রাজধানীতেই চৈত্র মাসের নবরাত্রি উপলক্ষে বন্ধ রেখেছিল মাছ-মাংসের বিক্রি। গেরুয়া শিবির দেশের মানুষের খাওয়াদাওয়ার উপরে নিজেদের পছন্দ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫ বলছে, দেশের ৩০টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অন্তত ৯০ শতাংশ মানুষ প্রতি দিন, সপ্তাহে বা সুযোগ মতো আমিষ খেয়ে থাকেন। আমিষ খাওয়ার তালিকায় উপরের দিকে উত্তর-পূর্ব, পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি। তুলনায় নিরামিষ খেতে বেশি পছন্দ করেন পশ্চিম ও উত্তর ভারতের মানুষেরা। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পুরুষদের তুলনায় মহিলারা নিরামিষ বেশি পছন্দ করেন। পশ্চিমবঙ্গে ওই প্রবণতা ঠিক উল্টো। রাজ্যের মহিলারা পুরুষদের তুলনায় বেশি আমিষ খেতে ভালবাসেন। গত সমীক্ষার চেয়ে এ বারের সমীক্ষায় গোটা দেশেই পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে ফাস্ট ফুড ও নরম পানীয় খাওয়ার প্রবণতা সামান্য কমেছে।
গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, শিক্ষার মতো তারা নিজেদের পছন্দের খাবারও চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। সেই কারণে গুজরাতের আমদাবাদ, ভাবনগর, জামনগরে আমিষ খাবারের স্টল বন্ধ করে দিয়েছে বিজেপি পরিচালিত পুরসভা। দিল্লিতে দুর্গা পুজোর প্রাঙ্গণে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয় আমিষ খাবারের দোকানে। কিন্তু পরিবার সমীক্ষা বলছে, দেশের তিন জনের মধ্যে দু’জন আমিষ খাওয়ার পক্ষপাতী। তবে ওই জনসংখ্যা গোটা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ প্রতিদিন, কেউ সাপ্তাহিক, আবার কেউ সুযোগ পেলে আমিষ খেয়ে থাকেন। সমীক্ষা বলছে, দেশের মহিলাদের ২৯ শতাংশ আর পুরুষদের ১৭ শতাংশ কোনও দিন আমিষ খাবার চেখে দেখেননি। এঁদের বড় অংশই হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, রাজস্থানের বাসিন্দা। দেশের নিরামিষ খাওয়ার যে জাতীয় গড়, তার দ্বিগুণ সংখ্যক মূলত গো-বলয়ের ওই রাজ্যগুলিতে বাস করেন। নিরামিষ খাওয়ার তালিকায় শীর্ষে হরিয়ানা। ওই রাজ্যের ৮০ শতাংশ মহিলা ও ৫৬ শতাংশ পুরুষ কোনও দিন মাংস খাননি বলে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে। এর পিছনে ধর্মীয় কারণ মুখ্য বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা।
আমিষ খাওয়ার প্রশ্নে এগিয়ে উত্তর-পূর্ব। সেখানকার রাজ্যগুলির ফি দিনের খাদ্যতালিকায় আমিষ পদের উপস্থিতি কার্যত বাধ্যতামূলক বলে দেখা গিয়েছে। ওই রাজ্যগুলির ৯৯ শতাংশ বাসিন্দাই আমিষ খাবারের উপর নির্ভরশীল। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে গড়ে ৮ জন মহিলা এবং ৫ জন পুরুষ কখনই আমিষ খাননি বলে জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে প্রায় ৮৫-৯০ শতাংশ মানুষ আমিষ খাবার খেয়ে থাকেন। সমীক্ষা বলছে, পশ্চিমবঙ্গে সপ্তাহে অন্তত একদিন মাছ, ডিম, মাংস খেয়ে থাকেন যথাক্রমে ৮৭.৬শতাংশ, ৮৪.২ শতাংশ, ৬০ শতাংশ মানুষ। সেখানে মাছ ও মাংস খাওয়ার প্রশ্নে জাতীয় গড় যথাক্রমে ৪৫.৯ শতাংশ ও ৪০.৮ শতাংশ। আর রাজ্যে প্রতিদিন মাছ/চিকেন বা মাংস (রেড মিট) খেয়ে থাকেন ৯০ শতাংশ ব্যক্তি। সেখানে জাতীয় গড় ৫১.২ শতাংশ। তেমনই দুধ-দই বা ফল খাওয়ার প্রশ্নে জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশ পিছিয়ে এ রাজ্যের মানুষ। তুলনায় অনেক বেশি ভাজা খাবার পছন্দ করেন তাঁরা। দেশের প্রায় ৪৪ শতাংশ মানুষ সপ্তাহে এক দিন ফ্রায়েড ফুড খেয়ে থাকেন। পশ্চিমবঙ্গে সেই সংখ্যা ৬১ শতাংশের কাছাকাছি। এ ক্ষেত্রেও এগিয়ে রয়েছেন রাজ্যের মহিলারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy