পুরীতে সাইক্লোন ‘ডেনা’ আছড়ে পড়ার আগে নিরাপদ স্থানে নৌকা সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন জেলেরা। ছবি: পিটিআই।
অতীতের ঘূর্ণিঝড়ে এ তল্লাটে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিখ্যাত বাদাবন বা ম্যানগ্রোভ। আড়াই দশক আগে ওড়িশার ‘সুপার সাইক্লোনে’ও ততটা ধাক্কা লাগেনি ভিতরকণিকায় সুবিখ্যাত সাদা কুমির এবং দূর ভারত মহাসাগরের কচ্ছপ, বিরল অলিভ রিডলিদের সংসারে। তবে আজ, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কী ঘটতে চলেছে ভেবে কূল পাচ্ছেন না স্থানীয় পরিবেশপ্রেমী পর্যটক-বন্ধু বিজয়কুমার দাস।
ভদ্রকের ধামরা বন্দর এবং কেন্দ্রাপড়ার ভিতরকণিকার মাঝেই এ বার মহাঘূর্ণিঝড় ডেনার হানাদারির শঙ্কা দানা বাঁধছে। ভিতরকণিকার ন্যাশনাল পার্কের ঠিক বাইরে দাঙ্গামাল গ্রামে অঝোর বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে বাতাসের গতিবেগ মেপে চলেছেন বিজয়। সন্ধ্যায় ফোনে বললেন, ‘‘না এখনও হাওয়ার গতিবেগ তত বেশি নয়। এটা স্বস্তির। তবে ঝড়ে গভীর অরণ্যের পাখির ছানাদের যে কী অবস্থা হবে, ভাবলে ভয়ানক অস্থির লাগছে।’’
এ বারের ঘূর্ণিঝড়ের প্রতাপে এই পাখিরাই সব থেকে বিপন্ন হতে পারে বলে স্থানীয় একটি পর্যটক আবাসের কর্তা বিজয়ের ধারণা। তিনি বলছেন, ‘‘অলিভ রিডলিদের ডিম পাড়তে আসা সবে শুরু হয়েছে। ওরা এখনও সে ভাবে এ তল্লাটে এসে পৌঁছয়নি। কিন্তু অক্টোবরে কিছু দিন আগেই পাখির ছানারা ডিম ফুটে বেরিয়েছে। এখনও সবাই উড়তে সক্ষম নয়। তাই খুব জোরে হাওয়া বইলে পাখিদেরই ক্ষতির শঙ্কা।” বিরল ছোট পাখি ম্যানগ্রোভ পিট ছাড়া বক, শামুকখোল গোছের পাখিদেরও এটা গাছের বাসায় বিশ্রামের সময়। তবে ভিতরকণিকা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মানসকুমার দাস আশ্বাস দিচ্ছেন, “মানুষ বা জীবজন্তু, সবার কথা মাথা রেখেই পরিস্থিতি সামলানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিপদের আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই ভিতরকণিকার জাতীয় পার্কের ভিতরে-বাইরে সব পর্যটকদের বার করাও হয়ে গিয়েছে।”
বুধবারই ভিতরকণিকায় বহিরাগতদের ঢোকার সব রাস্তা বন্ধ করা হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের খবর। আগেই ভিতরকণিকা ন্যাশনাল পার্কের অন্তর্গত এলাকার জনা ৪০ পর্যটক এবং বাইরের হোটেল, পর্যটক আবাসের কয়েক শো পর্যটককে এ তল্লাট ছেড়ে যেতে বলা হয়। স্থানীয় রাজনগর ব্লকে দু’লক্ষাধিক লোকের বাস। এই জনসংখ্যার নিরাপত্তাই প্রশাসনের কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
কেন্দ্রাপড়া জেলার উত্তর-পুবে ভিতরকণিকা এবং নদীর ও পারে কিলোমিটার পাঁচেকের মধ্যে ধামরা বন্দরকেই এখনও পর্যন্ত ডেনার ঝাপটের স্থল হিসাবে চিহ্নিত করেছেন আবহবিদেরা। মাঝে ধামরা নদী। ধামরা বন্দরে মৎস্য বন্দর ছাড়াও আদানি গোষ্ঠীর তৈরি পণ্য আমদানি-রফতানির বন্দর। ওই বন্দরেও ডেনার প্রকোপের শঙ্কা যথেষ্টই।
মানসকুমার দাস বলছিলেন, “সবার আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ রাখা এবং যোগাযোগের সড়ক রক্ষা আমাদের অগ্রাধিকার। এ ছাড়া কোনও বন্যপ্রাণী জলের তোড়ে বিপন্ন হয়ে গ্রামে ঢুকে পড়লে তাদের উদ্ধারের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। বন্যপ্রাণী, পাখিদের শুশ্রূষারও দল তৈরি। সেই সঙ্গে গাছের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে। বেশ কয়েকটি দল গড়ে প্রশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ চলছে।”
কেন্দ্রাপড়া জেলার বিস্তীর্ণ অংশে দেশভাগের পরে উদ্বাস্তু বাঙালিদেরও বাস। খরিনাসি গ্রামের নবশ্যাম মিস্ত্রি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় স্থানীয় মানুষের জীবন, জীবিকা প্রসারের কাজে যুক্ত। সকাল থেকেই বিপদসঙ্কুল এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার কাজ করছেন। নবশ্যাম বললেন, “এখানে বছরে মোটামুটি এক বারই ফসল হয়, শীতের শেষে। ধান রোয়া হয়ে গিয়েছে। চাষবাস ভালই চলছিল। আর যা-ই হোক, চাষের সমূহ ক্ষতি ঠেকানো যাবে না। প্রাণে বাঁচলেও ভাতে মারা যাওয়াই আমাদের ভবিতব্য।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy