মিহির দেব। নিজস্ব চিত্র
রেডিয়োয় কান পেতে পাক সেনার খবরাখবর জোগাড় করতেন ওঁরা দু’জন। সবার আগে যা ছাপা হত ত্রিপুরার ‘দৈনিক সংবাদ’-এ। সেই সব খবর থেকে খান সেনার গতিবিধির আঁচ পেয়ে অনেক সময়েই রণকৌশল পাল্টে ফেলতেন মুক্তিযোদ্ধারা। কাজে আসত গোয়েন্দাদেরও। বাংলাদেশের ৫০তম বিজয় দিবসের আগের সকালে কথাগুলি বলছিলেন মিহির দেব। মহারাজা বীরবিক্রম কলেজের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক। রেডিয়োয় আড়ি পাতার কাজে তাঁর সহযোগী ছিলেন স্কুলশিক্ষক, বিপুল মজুমদার।
ভারত ভাগের পরে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভিটেমাটি ছেড়ে বহু মানুষ চলে এসেছিলেন ত্রিপুরায়। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের একটি বড় অংশের সমর্থন ছিল ১৯৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। নানা ভাবে তাঁরা সহায়তা করেছেন তাঁদের। সেই ইতিহাসের সূত্র ধরেই বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় সেনার হাতে খান সেনার পর্যুদস্ত হওয়ার দিনে, কাল নানা অনুষ্ঠান হবে ত্রিপুরায়। তার আগে মিহিরবাবু শোনাচ্ছিলেন তাঁদের রেডিয়ো অভিযানের কথা।
মিহিরবাবুর বয়স তখন বছর ৩১। খবরের কাগজের অফিসে বসে নিয়মিত বসে থাকতেন মারফি রেডিয়োর একটি সেট নিয়ে। কান পাততেন বিভিন্ন স্টেশনে। শেখ মুজিবুর রহমান সবাইকে স্বাধীনতার জন্যে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাক দিলে তা বাংলাদেশের স্বাধীন বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়। সেই খবর পর দিন বড় করে ছাপা হয় মিহিরবাবুদের কাগজে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ২৫ তারিখ মধ্যরাতে শেখ মুজিবুর গ্রেফতার হওয়ার সময় বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ বলে ঘোষণা করেছিলেন। রেডিয়োতেই তাঁরা সেই খবর পেয়ে যান। সেই খবর দিয়ে সন্ধ্যায় বেরোয় বিশেষ বুলেটিন। ঝড়ের চেয়ে দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। আড়ি পেতে অনেক সময় পাক সেনাকর্তাদের ফোনের বার্তালাপও ধরে ফেলতেন মিহিরবাবুরা। সেগুলি পরের দিন তাঁদের পত্রিকায় প্রকাশিত হত। মিহিরবাবু জানান, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে শুরু করে নিয়মিত তিন মাস এই কাজ করেছেন তাঁরা। এই বার্তাগুলি তাঁরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গেও ‘শেয়ার’ করেছেন।
এক বার পাক বাহিনীর গোলা ‘দৈনিক সংবাদ’-এর দফতরের উল্টো দিকে এসে পড়ে। মিহিরবাবুর কথায়, “গোলাটি সম্ভবত আমাদের দফতরকে নিশানা করেই ছোড়া হয়েছিল। তার পরে তো পাক সেনাকে সামনে-পিছনে ঘিরে ফেলল ভারতীয় সেনা। ১৯৭১-এর ১২ এপ্রিল আগরতলাতেই সার্কিট হাউসের ১০ নম্বর ঘরে গঠিত হয় বাংলাদেশের বিপ্লবী সরকারের মন্ত্রিসভা। সে সব এখন ইতিহাসের পাতায়।” ২০১৩ সালে অধ্যাপক মিহির দেবকে বাংলাদেশ সরকার ‘মুক্তিযুদ্ধ সন্মাননা’ জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy