Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

Narendra Modi: মোদী বলছেন, গরিবরাই কেন্দ্রের অগ্রাধিকার, অথচ দেশে গরিবদের সংখ্যাই জানে না কেন্দ্র!

সংসদে অর্থ মন্ত্রক এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছে, ‘‘অতিমারির সময়ে দেশে গরিবদের সংখ্যা কত,  সে বিষয়ে কোনও সরকারি পরিসংখ্যান নেই।’’

প্রধানমন্ত্রী  নরেন্দ্র মোদী

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফাইল চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২১ ০৬:৪৩
Share: Save:

দেশ জোড়া লকডাউনের সময়ে কাজ খুইয়ে বাড়ি ফেরার পথে কত জন পরিযায়ী শ্রমিকের প্রাণ গিয়েছিল, সেই তথ্য কেন্দ্রের ঘরে ছিল না। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে কত জন শুধু অক্সিজেনের অভাবে মারা গিয়েছেন, সংসদকে তা জানাতে পারেনি তারা। অতিমারির এই সঙ্কটের সময়ে দেশে দরিদ্রের সংখ্যা কত, তা-ও তাদের জানা নেই বলে এ বার কবুল করল নরেন্দ্র মোদীর সরকার!

সম্প্রতি সংসদে অর্থ মন্ত্রক এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছে, ‘‘অতিমারির সময়ে দেশে গরিবদের সংখ্যা কত, সে বিষয়ে কোনও সরকারি পরিসংখ্যান নেই।’’

প্রধানমন্ত্রী বহু বার বলেছেন, কোভিড-সঙ্কটের মোকাবিলায় গরিবরাই কেন্দ্রের অগ্রাধিকার। তা সে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা হোক, বা প্রধানমন্ত্রী রোজগার প্রকল্প। অথচ তাঁরই সরকার মেনে নিচ্ছে, করোনা-কালে দেশে গরিবের সংখ্যা তাদের জানা নেই!

কেন নেই? অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি, ‘‘দরিদ্রের সংখ্যার সরকারি হিসেব পারিবারিক খরচের বড় মাপের সমীক্ষার উপরে নির্ভরশীল। পরিসংখ্যান মন্ত্রকের ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অর্গানাইজ়েশন (এনএসএসও) তা করে।’’ ২০১১-১২ সালের পরে এত দিন সেই সমীক্ষার রিপোর্ট সামনে আসেনি। অর্থ মন্ত্রকের দাবি, যথাসময়ে সমীক্ষা হবে। তবে তা নির্ভর করছে প্রয়োজনীয় সব তথ্য কখন পাওয়া যাচ্ছে এবং অতিমারি পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হয়ে আসছে, তার উপরে।

গরিবের সংখ্যা জানা না থাকলেও, দেশে ধনকুবেরের সংখ্যা কেন্দ্রের নখের ডগায়। অর্থ মন্ত্রকই জানিয়েছে, ২০২০-২১ সালে ১৩৬ জনের বার্ষিক আয় ছিল ১০০ কোটি টাকার বেশি। ২০১৯-২০ সালে ১৪১ জনের। ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরের (৭৭ জন) তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরার কটাক্ষ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মুখে গরিবদের কথা বললেও, বাস্তবে যে হাতে গোনা কয়েক জন ধনী শিল্পপতিই তাঁর অগ্রাধিকার, তা সরকারি পরিসংখ্যান দেখেই বোঝা যায়।’’ সরকারি সূত্রের পাল্টা যুক্তি, সংখ্যা জানা না থাকলেও গরিবরা কেউ সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী অন্ন যোজনায় ৮০ কোটি জনকে বিনামূল্যে বাড়তি রেশন দেওয়া হয়েছে।

কোটিপতির সংখ্যা জানা থাকলে, গরিবের সংখ্যা অজানা কেন? পরিসংখ্যান মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, আয়কর রিটার্ন থেকে কোটিপতির সংখ্যা জানা যায়। কিন্তু গরিবের সংখ্যা জানতে প্রয়োজন দেশ জোড়া বড় মাপের সমীক্ষা।

সাধারণত পাঁচ বছর অন্তত দেশের মানুষের মাথা পিছু মাসিক খরচের সমীক্ষা করে এনএসএসও। তার ভিত্তিতেই ঠিক হয়, কারা দারিদ্রসীমার নীচে। ২০১১-১২ সালে এই সমীক্ষা হয়েছিল। এর পরে মোদী সরকারের আমলে ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে ফের তা হওয়ার কথা ছিল। এক বছর পরে সেই সমীক্ষা হয়। কিন্তু রিপোর্ট প্রকাশের আগেই তার একাংশ ফাঁস হয়ে যায় সংবাদমাধ্যমে। দেখা যায়, মোদী জমানায় মানুষ খরচ কমিয়েছেন। অর্থাৎ, আয়ে টান পড়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ঠিক আগে এই রিপোর্টে অস্বস্তিতে পড়ে সরকার তা আর প্রকাশ করেনি। যুক্তি ছিল, সমীক্ষায় ত্রুটি রয়েছে। সব ঠিকঠাক করে ২০২০-২১ বা ২০২১-২২ সালে ফের সমীক্ষা হবে।

এখন পরিসংখ্যান মন্ত্রকের এক কর্তা বলছেন, ‘‘চলতি বছরে এই সমীক্ষা হওয়া কঠিন। আগামী বছর কোভিডের প্রকোপ কমলে, তা হবে। তখনই জানা যাবে, দেশে গরিব মানুষের সংখ্যা কত।’’

মনমোহন সিংহের সরকারের আমলে ২০১১-১২ সালের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, দেশে গরিবের সংখ্যা প্রায় ২৭ কোটিতে নেমে এসেছে। জনসংখ্যার প্রায় ২১.৯ শতাংশ। ২০০৪-০৫ সালে ওই সংখ্যা ছিল ৪০ কোটির বেশি। উল্লেখ্য, ২০১১-১২ সালে গ্রামে কারও মাসিক খরচ ৮১৬ টাকার কম হলে ও শহরে ১০০০ টাকার নীচে হলে, তাঁকে দারিদ্রসীমার নীচে রাখা হয়েছিল। অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, কোভিডের ধাক্কা লাগার পরে দেশে দরিদ্রের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ার সম্ভাবনা।

গত বছর করোনার প্রথম ধাক্কার পরেই বিশ্ব ব্যাঙ্ক আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, ভারতের প্রায় ১.২ কোটি জন চরমতম দারিদ্রের মুখে। পিউ রিসার্চের সমীক্ষা অনুযায়ী, কোভিড-লকডাউনের জেরে আয় কমে যাওয়ায় প্রায় ৭.৫ কোটি মানুষ নতুন করে দারিদ্রসীমার নীচে চলে গিয়েছেন। আজ়িম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট জানিয়েছিল, ২৩ কোটি মানুষকে দারিদ্রের মুখে ঠেলে দিয়েছে অতিমারি-লকডাউন। নীতি আয়োগের এক কর্তা বলেন, ‘‘শ্রমিকদের তথ্য থেকে যা অনুমান, তাতে দেশে দরিদ্রের সংখ্যা এখন বেড়ে অন্তত ৩৫ কোটি হয়েছে। তবে সবটাই অনুমান।’’

সত্যিকারের সংখ্যা কত, ২০১১-১২ সালের পরে তার হদিস নেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE