সংসদ চত্বরে বিরোধীদের ধর্না। ছবি: পিটিআই।
কৃষি বিল নিয়ে বিক্ষোভের জেরে তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন-সহ রাজ্যসভার আট জন সাংসদকে সোমবার সাসপেন্ড করা হয়। কিন্তু এরপর এ দিন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুর নির্দেশ উপেক্ষা করেই অধিবেশন কক্ষে পৌঁছন সাসপেন্ড সাংসদেরা। এমনকি, সভাকক্ষ ত্যাগ করতেও রাজি হননি তাঁরা। ফলে এ দিনও ফের উত্তেজনা তৈরি হয় সংসদের উচ্চকক্ষে।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য সভা ছেড়ে বেরিয়ে যান ডেরেকরা। এরপর তাঁরা সংসদ ভবন চত্বরে গাঁধী মূর্তির সামনে ধর্নায় বসেন। কংগ্রেসের দিগ্বিজয় সিংহ-সহ বিভিন্ন বিরোধীদলের সাংসদরাও ধর্নায় যোগ দেন। ডেরেকদের হাতে ছিল বাংলা-হিন্দি-ইংরেজিতে লেখা নানা পোস্টার। ‘গণতন্ত্রের খুন’, ‘আমরা কৃষকদের জন্য লড়ব’, ‘সংসদ কি হত্যা’, ‘পার্লামেন্ট অ্য়াসাসিনেটেড’-এর মতো নানা স্লোগান লেখা পোস্টার নিয়ে কেন্দ্র-বিরোধী স্লোগানও দেন তাঁরা।
রবিবার রাজ্যসভায় ওই বিল পেশের পর সাম্প্রতিককালের নজিরবিহীন বিক্ষোভ হয়। সাসপেনশনের তালিকায় তৃণমূলের সাংসদ দোলা সেনও রয়েছেন। তাঁদের অধিবেশনের বাকি সময়ের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। তালিকায় রয়েছেন কংগ্রেসের রাজীব সাতভ, রিপুন বরা-সহ তিন সাংসদ। আম আদমি পার্টির এক জন এবং সিপিএমের কে কে রাগেশ-সহ দুই সাংসদকেও সাসপেন্ড করা হয়েছে। পাশাপাশিই, রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংহের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবটিও খারিজ হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল ওই সিদ্ধান্তকে ‘গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা’ বলে বর্ণনা করেছে।
ডেরেক-দোলার সঙ্গে এ দিন বেঙ্কাইয়ার বাদানুবাদও হয়েছে। সাসপেন্ড সাংসদদের বিরুদ্ধে ডেপুটি চেয়ারম্যানকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহের অভিযোগ করেন বেঙ্কাইয়া। তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনায় আমি গভীর ভাবে মর্মাহত।’’ ধ্বনিভোটে জোড়া কৃষি বিল পাশ এবং আট সাংসদের সাসপেন্ডের ঘটনার জেরে বিরোধীরা রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দের দ্বারস্থ হতে পারেন বলে এদিন জানা গিয়েছে।
এ দিন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া ওই শাস্তির বিষয়টি ঘোষণা করেন। ডেপুটি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবটি খারিজ করার পাশাপাশিই তিনি বলেন, ‘‘ওই সাংসদরা সামগ্রিক ভাবে সভার অসম্মান করেছেন। ডেপুটি চেয়ারম্যানকে লক্ষ্য করে কটু মন্তব্য করেছেন। তাই সংসদের অধিবেশনের বাকি সময়ের জন্য তাঁদের সাসপেন্ড করা হচ্ছে।’’ এর পর আধ ঘণ্টার জন্য রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়।
ওই শাস্তির প্রেক্ষিতে তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘রাজ্যসভা পরিচালনার ১২৫ নম্বর ধারায় স্পষ্ট বলা রয়েছে, কোনও সদস্য কোনও বিল নিয়ে আপত্তি তুললে সেটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠাতে হবে। যদি না আগেই সংশ্লিষ্ট বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হয়ে থাকে। রবিবার রাজ্যসভায় যা হয়েছে, তা এই ধারার স্পষ্ট উল্লঙ্ঘন। ভোট না নিয়ে ধ্বনিভোটে বিলটি পাশ করিয়ে সেটিকে আইনে পরিণত করা হয়েছে। গণতন্ত্রের মন্দির সংসদে যা হয়েছে, তা গোটা দেশের নিন্দার যোগ্য। রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান শাসকদলের মর্জি মতো কাজ করেছেন। তিনি কোনও আইনেরই তোয়াক্কা করেননি। তাঁর আচরণ নজিরবিহীন এবং বেআইনি। যে ভাবে আট সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, তা হল ভবিষ্যতে তাঁদের কণ্ঠরোধ করার প্রয়াস। এই যদি আমাদের দেশের সংসদীয় গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি হয়, তা হলে এই দেশ নিশ্চিত ভাবে সংখ্যাধিক্যতার শিকার হতে চলেছে।’’
আরও পড়ুন:জোড়া কৃষি বিল নিয়ে তুলকালাম বিরোধীদের, রণক্ষেত্র রাজ্যসভা
তৃণমূলের লোকসভার সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘আমি যদিও রাজ্যসভার সাংসদ নই, কিন্তু যে ভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তা সাংসদদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার সামিল। এটি একটি অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। ভোট না করে যে ভাবে স্রেফ ধ্বনি ভোটে রাজ্যসভায় কৃষি বিল পাশ করানো হয়েছে, ওই সাংসদরা তারই প্রতিবাদ করেছিলেন।’’
কৃষি বিল নিয়ে সংসদে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে প্রথম থেকেই চেপে ধরেছিল বিরোধীপক্ষ। সেই প্রতিবাদই চূড়ান্ত রূপ পায় রবিবার রাজ্যসভায় বিলটি পাশ করানো সময়। বিরোধীরা হই হই করে সভার ওয়েলে নেমে প্রতিবাদ করতে থাকেন। তখন সভা পরিচালনা করছিলেন ডেপুটি চেয়ারম্যান। অভিযোগ, প্রতিবাদ করার সময়েই তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ডেপুটি চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে কিছু নথিপত্র ছেঁড়ার চেষ্টা করতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকের মতে, সেটি বিলেরই প্রতিলিপি। আবার অনেকে বলছেন, সেটি রাজ্যসভার রুলবুক।
আরও পড়ুন:উমর কোনও অন্যায় করেনি, বলছেন মা সাবিহা
সভায় ধ্বস্তাধস্তির সময় ডেরেককে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, ‘‘এ হতে পারে না!’’ গোলমালের পর ডেরেক বলেছিলেন, ‘‘সরকার সংসদীয় গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। সংসদের যাবতীয় আইন ভেঙেছে। তারা কি আশা করে এর পরেও বিরোধীরা সেটা বসে বসে দেখবে!’’ বস্তুত, ওই প্রতিবাদের সময় রাজ্যসভায় বিরোধীদের মধ্যে একটা কক্ষ-ঐক্য এবং সমন্বয়ও চোখে পড়েছে। দেখা গিয়েছে, তৃণমূলের সঙ্গেই সুর মিলিয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি এবং সিপিএম। যার প্রেক্ষিতে সোমবার সাসপেন্ড করা হয়েছে তৃণমূলের ডেরেক, দোলাকে। তাঁদের সঙ্গেই তালিকায় আছেন কংগ্রেসের রাজীব শতাভ, রিপুন বরা এবং সৈয়দ নাসির হুসেন। সাসপেন্ড হয়েছেন সিপিএমের কে কে রাগেশ, এলাম আরাম করিম এবং আম আদমি পার্টির সঞ্জয় সিংহও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy