ছবি: সংগৃহীত।
হার হোক বা জয়, তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেই বিজেপির ভোটের হার কমেছে। মঙ্গলবার ৩০টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের সঙ্গে যে তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফল প্রকাশ হয়েছে, তার মধ্যে একটিই জিতেছে বিজেপি। কিন্তু সেখানেও তার ভোটের হার ও জয়ের ব্যবধান বিপুল পরিমাণে কমেছে। আবার তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন ঘিরে উত্তাল হরিয়ানার একটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপি হেরে গেলেও বিজেপির ভোটের হার বেড়েছে।
রবিবার বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। দলের জাতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার নেতৃত্বে এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও হাজির থাকবেন। নড্ডা নতুন করে জাতীয় কর্মসমিতি গঠনের পর এই প্রথম বৈঠক হচ্ছে। তার আগে তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ভোটের হারে পতন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে চিন্তায় ফেলেছে। রবিবারের বৈঠকে ২০২২-এর গোড়ায় উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের রণকৌশলই প্রধান আলোচ্য বিষয়। উপনির্বাচনের ফলের পরে বিজেপির অন্দরমহলে প্রশ্ন উঠেছে, পেট্রল-ডিজ়েল, রান্নার গ্যাসের দামের জন্য কি নির্বাচনে খেসারত দিতে হচ্ছে?
বিজেপি সূত্রের দাবি, হিমাচল ও পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলাফলও বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের অস্বস্তির কারণ। প্রশ্নের তির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দিকেও। কারণ শাহ মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটে বিজেপি ২০০-র বেশি আসন জিতবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। তার ছয় মাসের মধ্যে চারটি আসনের তিনটিতে বিজেপির জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। নড্ডার রাজ্য হিমাচলে ভোটের এক বছর আগে তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র ও একটি লোকসভা আসনে বিজেপি হেরেছে। বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর এর জন্য মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন।
কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের বক্তব্য, ৩০টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলাফল বলছে, বিজেপি ৭টি আসন জিতেছে, কংগ্রেসও ৭টি আসন জিতেছে। নিরপেক্ষ আঞ্চলিক দলগুলি ৭টি আসন জিতেছে। বাকি আসন জিতেছে বিজেপির শরিক দল। ফলে দুই শিবিরই এখন সমান জায়গায়। ২০২২-এ হাওয়া কোন দিকে বইবে?
এত দিন পাঁচ রাজ্যের ভোটে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলনের কাঁটা কী ভাবে সামলানো হবে, সেটাই প্রধান ভাবনার বিষয় ছিল বিজেপি নেতৃত্বের। বিশেষত উত্তরপ্রদেশ ও পঞ্জাবে। কিন্তু হরিয়ানার এলনাবাদ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফল বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে কংগ্রেস ও বিরোধী শিবিরকেও ধন্দে ফেলে দিয়েছে। কৃষি আইন নিয়ে পঞ্জাবের মতোই উত্তাল হরিয়ানা। এলনাবাদের ভোটে কৃষি আইনই প্রধান বিষয় ছিল। কিন্তু সেখানে বিজেপি হারলেও তাদের ভোট বেড়েছে। আইএনএলডি নেতা অভয় সিংহ চৌটালা কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েই বিধায়ক হিসেবে ইস্তফা দিয়েছিলেন। উপনির্বাচনে তিনি আবার প্রার্থী হন। এলনাবাদের ৮৮% ভোটারের বসবাস গ্রামে। অভয়ের কাছে বিজেপি হেরেছে ঠিকই। কিন্তু বিজেপি ২০১৯-এর বিধানসভা ভোটে এই আসনে ৪৫ হাজারের মতো ভোট পেয়েছিল। মোট ভোটের প্রায় ৩০%। এবার বিজেপি কৃষকদের তোপের মুখেও ৫৮ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছে। ভোটের হার ৪০% ছাপিয়ে গিয়েছে। অথচ কংগ্রেসের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠেছে, তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকরা একসঙ্গে লড়লেও ভোটের সময় কি রাজনৈতিক সমর্থন বা জাতপাতের সমীকরণ মেনে ভোট দিচ্ছেন?
অন্য দিকে বিজেপির অন্দরমহলে প্রশ্ন, লোকসভা নির্বাচনের দু’বছরের মধ্যে লোকসভা কেন্দ্রগুলির উপনির্বাচনে বিজেপির ভোটের হার কমছে কেন? হিমাচলের মণ্ডী এবং দাদরা ও নগর হাভেলিতে বিজেপি হেরেছে। কিন্তু তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল, মণ্ডীতে বিজেপির ভোটের হার ৬৯% থেকে ৪৮%-এ নেমে এসেছে। দাদরা ও নগর
হাভেলিতে বিজেপির ভোট ৪১% থেকে কমে ৩৪% হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের খাণ্ডওয়াতে বিজেপি জিতলেও ভোটের হার ৫৭% থেকে ৪৯%-এ নেমে এসেছে। ২০১৯-এ বিজেপির জয়ের ব্যবধান ছিল ২.৭৩ লক্ষ। এ বার তা ৮১ হাজারের ঘরে। শিবরাজ সিংহ চৌহানের রাজ্যে বিজেপি তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে দু’টিতে জিতলেও সেখানে কংগ্রেস, এসপি থেকে আসা নেতারা জিতেছেন।
তবে বিজেপির এক নেতার দাবি, এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের পরেও অনেক উপনির্বাচনে বিজেপির ভোটের হার কমেছিল। কিন্তু ২০১৯-এ বিজেপি আরও বেশি ভোট পেয়ে ক্ষমতায় ফিরেছিল। বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক বি এল সন্তোষ অন্ধ্রপ্রদেশের বাদভেল বিধানসভা উপনির্বাচনে ফলের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। ওই আসনে ওয়াইএসআর কংগ্রেস জিতলেও বিজেপি এবার ২১ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছে। দু’বছর আগের বিধানসভা ভোটে বিজেপি মাত্র ৭৫২ ভোট পেয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy