মুসলিম স্বার্থবিরোধী এই যুক্তিতে ওয়াকফ আইন পশ্চিমবঙ্গে বলবৎ করতে দেবেন না বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর মতো সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তি কী ভাবে সংসদে পাশ হওয়া আইনকে আটকানোর কথা বলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। আজ তিনি ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ পশ্চিমবঙ্গে ওয়াকফ আইন ঘিরে হিংসার পিছনে মুখ্যমন্ত্রী মমতার ‘উস্কানিমূলক’ বক্তব্যকেই দায়ী করেছেন।
এ দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে প্রাথমিক যে রিপোর্ট (মুর্শিদাবাদ) জমা পড়েছে, তাতে খোলা সীমান্ত নিয়ে বাংলাদেশ থেকে আসা দুষ্কৃতীদের এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকেই
সেই দুষ্কৃতীদের মদত দেওয়ার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। যারা পরে দুষ্কৃতীদের উপরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ওই দুষ্কৃতীদের সঙ্গে কারা যোগাযোগ করে এনেছিল, তা এখন খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
ভারতের মতো যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর দেশে সংসদে পাশ হওয়া আইনের প্রয়োগ কোনও রাজ্য আটকাতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রিজিজু। আজ একটি সাংবাদিক বৈঠকে মমতার দাবি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘‘কী করে তিনি (মমতা) বলেন যে তাঁর রাজ্যে আইন প্রয়োগ হতে দেবেন না? উনি সাংবিধানিক পদে রয়েছেন। ওই আইন পাশ হয়েছে সংসদে। এটা কোনও পছন্দের ব্যাপার নয়। সংসদে পাশ হওয়া আইনকে স্বীকৃতি না
দিয়ে এবং জনগণকে প্রতিবাদ করতে বলে মুখ্যমন্ত্রীই হিংসাকে উস্কে দিয়েছেন।’’
বিজেপি নেতৃত্বের মতে, মমতা জেনেবুঝে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের ভুল বোঝাচ্ছেন। অতীতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পশ্চিমবঙ্গে আটকাতে চেয়েছিলেন মমতা, পারেননি। সংসদে পাশ হওয়ার পরে ওয়াকফ আইন রাজ্যে বলবৎ হওয়াও আটকানো সম্ভব নয়। তাঁর দলের যে মুসলিম নেতারা অবৈধ ভাবে ওয়াকফ সম্পত্তি দখল করে রেখেছেন তা মুক্ত করার ব্যবস্থা করুন মমতা, এটাই দাবি তাঁদের।
যোগী আদিত্যনাথও আজ হরদৌই-তে একটি দলীয় অনুষ্ঠানে মমতাকে দুষে বলেন, ‘‘ধর্মনিরপেক্ষতার নামে এরা হিংসা ছড়াতে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে সহিংস আন্দোলন হচ্ছে। মুর্শিদাবাদ গত সাত দিন ধরে জ্বলছে। কিন্তু সরকার নীরব হয়ে বসে রয়েছে। লাথো কি ভূত বাতো সে ক্যায়সে মানেঙ্গে! কিন্তু মমতা নীরব। হামলাকারীদেরই শান্তি ফেরানোর দায়িত্ব দিয়ে বসে আছেন। ’’
তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘ধর্মনিরপেক্ষ দেশে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত কোনও মুখ্যমন্ত্রীর আর এক মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে এমন মন্তব্য অসাংবিধানিক।’’ যোগীর নৈতিক অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় অপরাধ সংক্রান্ত তথ্যে উত্তরপ্রদেশের থেকে বাংলা অনেক ভাল জায়গায়।’’ যোগীর বিরুদ্ধে সরাসরি ‘ঘৃণা-ভাষণে’র অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের মতে, ‘‘উত্তেজনা আরও ছড়ানোর জন্য যোগী এই সব বলছেন। তাঁর নিজের রাজ্যে সব চেয়ে বেশি দলিত অত্যাচার হয়, আরও নানা ঘটনা ঘটে। বিজেপি বা তাঁর নিজের দল তৃণমূলের নেতারা ঘৃণা ছড়ালেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও ব্যবস্থা নেন না। হিম্মত থাকলে যোগীর বিরুদ্ধে ঘৃণা-ভাষণের অভিযোগ দায়ের করুক তৃণমূল বা তাদের সরকার!’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)