এক বার নয়, পর পর তিন বার অসুস্থ মাকে দেখতে চেয়ে ভিসার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। তিন বারই কোনও কারণ না দেখিয়ে সিয়াটলের ভারতীয় কনসুলেট সেই আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। ভিসার আবেদন বাতিল করে নরেন্দ্র মোদী সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে বলে আজ সমাজমাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত-আমেরিকান অর্থনীতিবিদ-সমাজকর্মী ক্ষমা সাওয়ন্ত।
সিয়াটল সিটি কাউন্সিলের প্রাক্তন সদস্য ক্ষমার অভিযোগ, বেঙ্গালুরুতে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে গত বছর মে ও জুন মাসে ভিসার জন্য আবেদন জানান তিনি। দু’বারই তা নাকচ হয়ে যায়। এ বছর জানুয়ারিতে মায়ের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এবং সেই সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা করে ফের জরুরি ভিত্তিতে ভিসার আর্জি জানান ক্ষমা এবং তাঁর স্বামী কেলভিন প্রিস্ট। কেলভিনের ভিসা মঞ্জুর হলেও ভিসা পাননি ক্ষমা। আজ এক্স হ্যান্ডলে পর পর পোস্ট করে ক্ষমা বলেন, কনসুলেটের এক আধিকারিক তাঁকে জানিয়েছেন যে তিনি মোদী সরকারের বাতিল-তালিকায় রয়েছেন। কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত তা কেউ খোলসা করেননি। প্রতিবাদে কনসুলেটের বাইরে নিজের সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে দল বেঁধে প্রতিবাদ জানান ক্ষমা। কারও নাম না করলেও বিষয়টি নিয়ে সমাজমাধ্যমে কনসুলেটের তরফে পাল্টা পোস্ট করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘কাজের সময়ের পরে এক দল বিক্ষোভকারী কনসুলেট চত্বরে ঢুকে পড়ে গোলমাল বাধাচ্ছিলেন। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানাতে বাধ্য হই।’ যদিও ক্ষমার দাবি, তাঁরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই আজ প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
কিন্তু ক্ষমার প্রতি এমন বৈষম্যমূলক আচরণ কেন? নরেন্দ্র মোদী সরকারের কড়া সমালোচক ক্ষমা ২০২০ সালে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত সিএএ ও এনআরসি আইনের বিরুদ্ধে সিয়াটলের সিটি কাউন্সিলে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাশ করান। সিএএ এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে জাতির ভিত্তিতে বৈষম্যের অভিযোগ এনেছিলেন ক্ষমা। তাঁর আন্দোলনের জেরে সেই সময় বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজর কাড়ে। তবে ক্ষমার কর্মকাণ্ডে মোটেই খুশি হয়নি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। তার ফলে তিনি মোদী সরকারের কুনজরে পড়েছেন বলে মনে করছেন ক্ষমা। ভিসা বাতিলের প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘আমার উপরে রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।’ ক্ষমার মতে, শুধু তিনি নন, মোদী সরকারের নীতির বিরুদ্ধে যাঁরাই মুখ খুলেছেন, সমাজকর্মী থেকে সাংবাদিক— সকলেই ‘রাজরোষে’ পড়েছেন।
ক্ষমার ভিসা বাতিলের প্রসঙ্গে আজ এক্স হ্যান্ডলে সরব হয়েছেন মহারাষ্ট্রের দলিত নেতা তথা বি আর অম্বেডকরের নাতি প্রকাশ অম্বেডকর। তিনি লিখেছেন, ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে যাঁরা লড়াই করছেন মোদী সরকার কি তাঁদের বিরোধিতা করছেন? উত্তর হল হ্যাঁ। দেশে হোক বা বিদেশে, মোদী সরকার তাঁদের বিরোধী।’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)