পাক গোলা সীমান্তের গ্রামে। ছবি: এএফপি
দীপাবলির ঠিক আগে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল নিয়ন্ত্রণরেখা। ভারতীয় সেনার দাবি, বিনা প্ররোচনায় আজ জম্মুর পুঞ্চ এবং উত্তর কাশ্মীরের গুরেজ় থেকে উরি পর্যন্ত এলাকায় হামলা চালায় পাকিস্তানি সেনা। তাতে চার সেনা ও এক বিএসএফ সাব ইনস্পেক্টর-সহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। বাকি ৬ জন গ্রামবাসী। নিহত সেনাদের মধ্যে সুবোধ ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। নিহত আর এক সেনার নাম হরধনচন্দ্র রায়। তবে তিনি কোন রাজ্যের বাসিন্দা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বাকি দুই সেনার পরিচয় এখনও প্রকাশ করেনি সেনা। গুরুতর আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন জওয়ান ও স্থানীয় বাসিন্দা। ভারতীয় সেনার দাবি, পাল্টা হামলায় ৮ জন পাক সেনা নিহত হয়েছেন। প্রভূত ক্ষতি হয়েছে পাক সেনাবাহিনীর। পাকিস্তানের অবশ্য দাবি, বিনা প্ররোচনায় হামলা চালিয়েছে ভারতই। রাখচিকরি ও তারি বান্দ সেক্টরে সেই হামলায় এক পাক সেনা ও চার জন গ্রামবাসী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২ জন গ্রামবাসী।
কাশ্মীরে তুষারপাতের আগে উপত্য়কায় জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঘটাতে নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকিস্তানের তৎপরতা অনেকটাই বেড়েছে। এ দিনের ঘটনাও তারই অংশ বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, উত্তর কাশ্মীরের বারামুলা, কুপওয়ারা জেলায় বারবার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে পাকিস্তান। সেনাবাহিনী সূত্রের খবর, বারামুলার নাম্বলা সেক্টরে মর্টার ছোড়ে পাক সেনা। হামলায় দু’জন ভারতীয় জওয়ান নিহত হন। হাজি পীর সেক্টরে নিহত হয়েছেন সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর ৩৯ বছর বয়সি সাব-ইনস্পেক্টর রাকেশ ডোভাল। বিএসএফের তরফে জানানো হয়েছে, দুপুর ১টা ১৫ মিনিট নাগাদ যখন পাক সেনা হামলা শুরু করে, তখনই রাকেশ আহত হন। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। শ্রীনগরে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রাজেশ কালিয়া বলেন, ‘‘তিন জন সেনা জওয়ান নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই পাক সেনা নিরীহ গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে।’’ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, আজ কামালকোট সেক্টরের চুরান্দা, সিলিকোট, গরকোট, হাতলাঙ্গা, নাম্বলা ও রুস্তম মহল্লায় গোলাবর্ষণ শুরু করে পাক বাহিনী। জম্মুতে সেনাবাহিনীর এক অফিসার বলেন, ‘‘পুঞ্চেও আজ দুপুর পৌনে ২টো ও পৌনে ৩টে নাগাদ মর্টার ছোড়ে পাক সেনা।’’
ভারতীয় সেনার তরফে জানানো হয়েছে, পাকিস্তানকেও উপযুক্ত জবাব দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় সেনার পাল্টা হামলায় ৮ জন পাক সেনা নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে ২ জন স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের কমান্ডো। ১০-১২ জন পাক সেনা আহত। রাজেশ কালিয়া বলেন, ‘‘পাক সেনার প্রচুর বাঙ্কার, অস্ত্রশস্ত্র, জ্বালানি ঘাঁটি ও লঞ্চপ্যাড ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।’’ ভারতীয় সেনার প্রকাশ করা ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেটে ধ্বংস হচ্ছে পাক বাঙ্কার।
আরও পড়ুন: দীপাবলিতে যোগীর রাজনীতি অযোধ্যায়
পাক সেনাবাহিনীর গুলিতে যে ছ’জন গ্রামবাসী নিহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৮ বছরের এক বালক ও ৪০ বছর বয়সি এক মহিলা রয়েছেন। পাক বাহিনীর গোলাগুলির জেরে নিয়ন্ত্রণরেখার ধারে থাকা গ্রামগুলির বাসিন্দারা নিরাপদ জায়গায় সরে গিয়েছেন। গুরেজ় সেক্টরের গ্রামবাসী আইজাজ় আহমেদ রেহ বলেন, ‘‘নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই ছিল যে আমরা দূর থেকেও শব্দ শুনতে পেয়েছি। আতঙ্কে অনেকেই গ্রাম ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছেন।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে দেশবাসীর কাছে আবেদন করেছেন, দীপাবলিতে সেনা জওয়ানদের অভিবাদন জানাতে প্রদীপ জ্বালান। পাকিস্তানের সমালোচনা করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর টুইট, ‘‘পাকিস্তান যখনই সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে, তখনই তাদের আতঙ্কিত চেহারা ও দুর্বলতা প্রকাশিত হয়।’’ পাকিস্তানের পাল্টা অভিযোগ, ভারতই সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এক গ্রামবাসী নিহত হয়েছেন। আহত তিন। ইসলামাবাদে নিযুক্ত উচ্চপদস্থ ভারতীয় কূটনীতিককে ডেকে এই হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে পাক বিদেশ মন্ত্রক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy