ভারত-চিন সীমান্তের তিনটি সেক্টরই এখন উত্তপ্ত। ছবি: সংগৃহীত।
চিন লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার (এলএসি) ওপারে সেনা ও যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন বাড়ালে ভারতও পাল্লা দিয়ে সেনা মোতায়েন বাড়াবে। আজ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর শীর্ষকর্তাদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভারতের যে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ নিয়ে চিনা সেনা আপত্তি তুলেছে, তা-ও চালিয়ে যাওয়া হবে।
নয়াদিল্লিতে যখন এই তৎপরতা, তখনই চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং আজ সে দেশের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। ‘যুদ্ধের প্রস্তুতি রাখতে চিনা সেনার প্রশিক্ষণ বাড়ানো’-র উপরে জোর দিয়েছেন তিনি। করোনা বিপর্যয় নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে চিনের উপরে যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে এবং ভারতের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে যে ভাবে নতুন করে টানাপড়েন শুরু হয়েছে, সেই প্রেক্ষিতেই শি-র বক্তব্যের ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ লাদাখের পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়ত ও তিন সামরিক বাহিনীর কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার আগে মোদী ও রাজনাথ সামরিক বাহিনীর কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর কথা হয়েছে। আগামিকাল সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজমুকুন্দ নরবণেও বাহিনীর শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
তিব্বতের গারি গুনশা ঘাঁটিতে বড় মাপের নির্মাণকাজ চালাচ্ছে চিন। তারই প্রমাণ উপগ্রহ চিত্রে। ( বাঁ দিকে, ৬ এপ্রিল, ২০২০, ডান দিকে, ২১ মে, ২০২০)
আরও পড়ুন: করোনার প্রথম ঢেউই কাটেনি, হুঁশিয়ারি ‘হু’ কর্তার
আরও পড়ুন: দৃষ্টি ঘোরাতেই কি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনের আগ্রাসী তৎপরতা, না অন্য কিছু!
ভারত-চিন সীমান্তের তিনটি সেক্টরই এখন উত্তপ্ত। গত ৫ মে থেকেই পশ্চিম ভাগে বা ওয়েস্টার্ন সেক্টরে লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘাত চলছে। ‘ফিঙ্গার থ্রি’ ও ‘ফিঙ্গার ফোর’-এর মধ্যে রাস্তা তৈরির কাজে চিন প্রথম আপত্তি তোলে। একই সঙ্গে গালওয়ান ভ্যালির সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তার কাজেও চিনের আপত্তি। ৫ মে রাতে পূর্ব লাদাখের প্যাঙ্গং লেকের কাছে চিন ভারতীয় সেনার নজরদারি বাহিনীকে বাধা দেয়। তার পর থেকেই ওই দু’টি এলাকায় দু’দেশের সেনা পরস্পরের চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। পূর্ব ভাগে বা ইস্টার্ন সেক্টরের উত্তর সিকিমেও এ মাসের শুরুতে দুই সেনাবাহিনীর সংঘাত বেধেছে। সাধারণত সেন্ট্রাল সেক্টরের উত্তরাখণ্ড ও হিমাচল প্রদেশের অংশ শান্ত থাকে। কিন্তু সেখানেও বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে।
রাজনাথের সঙ্গে সামরিক কর্তাদের বৈঠকে এই পরিস্থিতির পর্যালোচনা হয়। বিপিন রাওয়ত ও তিন সামরিক বাহিনীর প্রধানরা বৈঠকে হাজির ছিলেন। আলোচনা চলে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে। ভারতের সেনাবাহিনী কী ভাবে চিনের সেনার রণমূর্তি সামাল দিচ্ছে, তা নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, এই বিবাদের মীমাংসা একমাত্র আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব। কূটনৈতিক স্তরেই এর সমাধান সম্ভব। কিন্তু যত দিন তা না-হচ্ছে, তত দিন ভারতীয় সেনা নিজের অবস্থান থেকে নড়বে না। চিন যদি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে আরও বেশি সেনা ও যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন করে, ভারতও পাল্লা দিয়ে সেনা-যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন করবে। সেনা সূত্রের খবর, উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে চিন প্রায় হাজার দশেক সেনা মোতায়েন করেছে। তিব্বতের গারি গুনশা ঘাঁটিতে চলছে নির্মাণকাজ। সেখানে হাজির বেশ কিছু যুদ্ধবিমানও। গত কাল ভারত থেকে নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে চিন।
এরই মধ্যে চিনা প্রেসিডেন্টের মন্তব্য পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। আজ চিনফিং বলেন, ‘‘সেনাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে হবে। সে জন্য সামগ্রিক প্রশিক্ষণ জরুরি।’’ চিনের ‘সার্বভৌমত্ব রক্ষা’ এবং ‘দেশের কৌশলগত স্থিতিশীলতার জন্য’ যুদ্ধের প্রস্তুতি রাখতে সেনাকে নির্দেশ দিয়েছেন চিনফিং। চিনা সেনার একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার সময়ে এই মন্তব্য করেছেন চিনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের চেয়ারম্যান শি। কূটনীতিকদের মতে, করোনা নিয়ে মার্কিন দোষারোপ, তাইওয়ান পরিস্থিতি এবং ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতের বাতাবরণে সেনাকে বার্তা দিতে চেয়েছেন তিনি। ক’দিন আগে চিনের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল, করোনা সংক্রমণের দায় চাপিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে আমেরিকা।
তবে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতের বাতাবরণে চিনফিংয়ের বক্তব্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে নয়াদিল্লি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy