লাদাখে জওয়ানদের সঙ্গে আলোচনায় সেনাপ্রধান মনোজ মুকুন্দ নরবণে। শুক্রবার। ছবি: পিটিআই
লাদাখ সীমান্তে চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে দু’দেশের সেনা।
মস্কোর মেট্রোপোল হোটেলে চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফংহ-র সঙ্গে বৈঠকে করলেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সূত্রের খবর, ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট ধরে চলা বৈঠকে সীমান্তে উত্তেজনা কমানোর পথ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে রাজনাথ বলেছেন, বিশ্বাসের আবহ, আগ্রাসী মনোভাব না-নেওয়া এবং আন্তর্জাতিক রীতি মেনে মতবিরোধ দূর করার উপরেই গোটা এলাকার শান্তি এবং নিরাপত্তা নির্ভর করছে। গত মে মাসের গোড়ায় লাদাখের গালওয়ানে ভারতীয় ও চিনা সেনার মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পরে এই প্রথম দু’দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে মুখোমুখি বৈঠক হল। এর আগে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল আলাদা আলাদা ভাবে ফোনে কথা বলেছিলেন চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে। সেনাস্তরে বৈঠক অবশ্য লাগাতারই চলছে।
সাংহাই কর্পোরেশন (এসসিও) সম্মেলন উপলক্ষে তিন দিনের সফরে রাশিয়া গিয়েছেন রাজনাথ। সম্মেলনে হাজির চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীও। তবে সম্মেলনের ফাঁকে তাঁর সঙ্গে রাজনাথের বৈঠকের সম্ভাবনা এর আগে খারিজ করে দিয়েছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু গত কাল রাতে চিনের পক্ষ থেকে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়। সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেয় মস্কো। কারণ, কূটনীতিকদের মতে, এশিয়ার দুই শক্তিশালী দেশ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ুক তা রাশিয়ার কাছে কোনও ভাবেই কাম্য নয়। মস্কোর আগ্রহে শেষ পর্য়ন্ত আলোচনায় রাজি হয় দিল্লি। শুক্রবার ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ফংহ-র সঙ্গে রাজনাথের বৈঠকে প্রতিরক্ষাসচিব অজয় কুমার এবং রাশিয়ায় ভারতের রাষ্ট্রদূত ডি বি ভেঙ্কটেশ বর্মাও উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: পরীক্ষায় বিদেশনীতি, জোড়া কৌশল দিল্লির
মস্কোয় চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফংহের সঙ্গে বৈঠকে রাজনাথ সিংহ। ছবি: টুইটার।
তবে এই বৈঠকের আগেই চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সামনে রাজনাথ বুঝিয়ে দেন যে, লাদাখে চিনা সেনার আগ্রাসন ভারত ভাল ভাবে নেয়নি। এসসিও সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বাসের পরিবেশ, অনাগ্রাসন, পরস্পরের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে মতপার্থক্য নিরসনের উপরেই আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিরতা নির্ভর করে।’’ সাউথ ব্লকের মতে, ভারত যে শান্তির পথে হেঁটে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে প্রস্তুত, সেই অবস্থানই স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাজনাথ। তাই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের রাস্তা খুঁজতে হবে চিনকেও।
আরও পড়ুন: ‘সিংঘমের দাপটে নয়, মন জিতুন ভালবাসায়’
আজ দু’দিনের লাদাখ সফর শেষে সেনাপ্রধান এম এম নরবণে সীমান্ত সমস্যা মেটাতে কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে আলোচনার উপরে জোর দেন। বিদেশ মন্ত্রকও জানিয়েছে, ভারত আলোচনার মাধ্যমেই সীমান্ত সমস্যা সমাধানে আগ্রহী।
আরও পড়ুন: দিল্লি-সংঘর্ষের তদন্তই আসলে ‘ষড়যন্ত্র’, অভিযোগ
লাদাখে অবশ্য ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। ভারতীয় সেনা গত শনিবার প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণে একাধিক পাহাড়ের চূড়ো দখল করে নেওয়ার পরে চুসুল সেক্টরে উল্লেখজনক ভাবে সেনা সমাবেশ বাড়াতে শুরু করেছে চিন। হ্রদের দক্ষিণে মলডোর কাছে অতিরিক্ত ট্যাঙ্কবাহিনী মোতায়েন করেছে তারা। বেড়ে গিয়েছে সাঁজোয়া গাড়ির আনাগোনা, পদাতিক সেনার সংখ্যা। পাল্টা জবাবে রেজাং লা, রেচিন লা-সহ স্প্যানগুর গ্যাপ এলাকায় স্পর্শকাতর উঁচু স্থানগুলি দখল করে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে ভারতও। যাতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা নিজেদের দখলে রাখা সম্ভব হয়। ট্যাঙ্কবাহিনীর অবস্থান বিন্যাসেও পরিবর্তন করা হয়েছে। মিসাইল-যুক্ত টি-৯০ ট্যাঙ্কের পাশাপাশি আনা হয়েছে টি-৭২এম১ ট্যাঙ্ক। যেগুলি লাদাখের মতো ভূপ্রকৃতিতে অনায়াসে চলাফেরায় সক্ষম। বাড়ানো হয়েছে বায়ুসেনার গতিবিধিও।
আজ দু’দিনের সীমান্ত পরিদর্শন শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সেনাপ্রধান নরবণে বলেন, ‘‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা এখন উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে রয়েছে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে সেখানে প্রয়োজনীয় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।’’ দায়িত্ব নেওয়ার পরে অন্তত চার বার লাদাখ সফর করলেন সেনাপ্রধান। বেজিং ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘনের যে অভিযোগ এনেছে, তা খণ্ডন করে তিনি বলেন, ‘‘ভারত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা মোতায়েন করেছে মাত্র।’’ লাদাখে সেনা প্রস্তুতি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ফরোয়ার্ড লোকেশনে গিয়ে সেনাদের সঙ্গে কথা বলেন নরবণে। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতীয় জওয়ানদের মনোবল একেবারে তুঙ্গে। তাঁরা যে কোনও চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy