গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দেশের রাজনৈতিক দলগুলি কোন পথে তহবিল সংগ্রহ করছে তা জানার অধিকার সাধারণ মানুষের নেই বলে সুপ্রিম কোর্টে দাবি করলেন কেন্দ্রের আইনজীবী তথা অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরমানি। সোমবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে নির্বাচনী বন্ডের বৈধতা সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘‘সংবিধানের তিন নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিষয়টি ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে না।’’
শীর্ষ আদালতে নির্বাচনী বন্ডের পক্ষে সওয়াল করে জমা দেওয়া লিখিত জবাবে কেন্দ্রের আইনজীবীর দাবি, নির্বাচনীয় বন্ডে রাডজনৈতিক দলগুলির তহবিলে ‘অনামা দাতা’ সম্পর্কে গোপনীয়তা রয়েছে তা যুক্তিসঙ্গত। সংবিধানের ১৯(১)(এ) ধারা অনুযায়ী এক জন নাগরিকের রাজনৈতিক দলগুলির আয় সম্পর্কে জানার অধিকার রয়েছে। অন্য দিকে, নির্বাচনী বন্ড ১৯(২) ধারার অধীন। তিনি বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে ‘যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ’ বলবতের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের রয়েছে।’’ এমনকি, প্রয়োজনে মৌলিক অধিকারের উপরেও তেমন বিধিনিষেধ প্রয়োগ করা যেচে পারে বলে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চকে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
প্রসঙ্গত, ভোটে কালো টাকার খেলা বন্ধ করার কথা বলে নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিল মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১৮ সালে প্রয়াত অরুণ জেটলি নির্বাচনী বন্ডের কথা ঘোষণা করেছিলেন। ২০১৭-র অর্থ বিলের মাধ্যমে আইনে একগুচ্ছ সংশোধনী এনে মোদী সরকার ২০১৮ থেকে নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিল। এর ফলে কোনও ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দিতে চাইলে, বন্ড কিনে সংশ্লিষ্ট দলকে দিতে হবে। ১ হাজার, ১০ হাজার, ১ লক্ষ, ১০ লক্ষ এবং ১ কোটি টাকা মূল্যের বন্ড পাওয়া যাবে। রাজনৈতিক দলগুলি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে সেই বন্ড ভাঙিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু কে, কত টাকা দিচ্ছেন তা বোঝা যাবে না।
নির্বাচনী বন্ড চালু হওয়ার পর বিষয়টির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। বিরোধী দল এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, এতে অস্বচ্ছতাই বাড়বে। বিশ্বের কোনও দেশেই এমন ব্যবস্থা নেই, বন্ড ভাঙাচ্ছে রাজনৈতিক দল। ফলে কোন কর্পোরেট সংস্থা কাকে ভোটে সাহায্য করছে, তার বিনিময়ে ক্ষমতাসীন দলের থেকে কী সুবিধে আদায় করছে, তা জানার কোনও উপায় নেই।
আর এখানেই প্রশ্ন বন্ড-বিরোধীদের। তাঁদের দাবি, কেন্দ্র এবং অধিকাংশ রাজ্যে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে নির্বিবাদে অর্থ আমদানির কার্যত ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত’ করে ফেলতে চাইছে গেরুয়া শিবির। আর সে কারণেই তারা নির্বাচনী বন্ড চালু রাখতে মরিয়া। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, মূলত ১০ লক্ষ টাকা ও ১ কোটি টাকার বন্ড কেনা হচ্ছে। যা থেকে স্পষ্ট, কর্পোরেট সংস্থাগুলিই রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিয়ে সুবিধা আদায় করতে চাইছে। আর সেই চাঁদা পাওয়ার নিরিখে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি।
অন্য দিকে সরকারের যুক্তি, চাঁদা কারা দিচ্ছেন তা প্রকাশ করতে গেলে এত দিনের মতো নগদে, কালো টাকার লেনদেনই হবে। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি গড়ায় আদালতে। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় সিপিএম এবং ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ডেমোক্র্যাটিক রাইটস’ (এডিআর) নামে একটি সংগঠন। তাদের আর্জি, নির্বাচনী বন্ড বিক্রি নিষিদ্ধ করা হোক, কিংবা বন্ড কারা কিনছে, তাদের নাম জানানো হোক। কিন্তু, দাতার নাম জানানোর দাবিতে সায় দিতেও নারাজ কেন্দ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy