Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
ICCW

কৈশোরের অদম্য সাহসকে স্বীকৃতি

মুদাসির ও সরতাজের পাশাপাশি গোটা দেশের আরও ১০ জন কিশোর ও ১০ জন কিশোরীকে সাহসিকতার জন্য জাতীয় পুরস্কার দিচ্ছে আইসিসিডব্লিউ।

দিল্লিতে পুরস্কৃত দুই কাশ্মীরি পড়ুয়া। নিজস্ব চিত্র

দিল্লিতে পুরস্কৃত দুই কাশ্মীরি পড়ুয়া। নিজস্ব চিত্র

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২০ ১০:০০
Share: Save:

চোখের সামনে জ্বলছেন হেলিকপ্টারে বসা সেনাকর্মীরা। মাঝ আকাশ থেকে লাট্টুর মতো ঘুরতে ঘুরতে নেমে আসা চপারের ধ্বংসাবশেষ থেকে ততক্ষণে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে কাশ্মীরের প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামটির একাধিক ঘরে। কয়েক জন গ্রামবাসীর দেহেও আগুন লেগেছে। তার মধ্যেই চলছে ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে স্লোগান।

ওই আগুনের মধ্যে নিজের প্রতিবেশীকে দেখে স্থির থাকতে পারেনি বছর ১৭-র মুদাসির। প্রাণ বাজি রেখে অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দেয় সে। যদিও শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচাতে পারেনি। কিন্তু নিজের জীবন তুচ্ছ করে অন্যের প্রাণ বাঁচানোর এই প্রচেষ্টাকেই জাতীয় সাহসিকতা পুরস্কারে সম্মানিত করে তাকে কুর্নিশ জানিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর চাইল্ড ওয়েলফেয়ার (আইসিসিডব্লিউ)।

গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি। কাশ্মীরে জুড়ে তখন উত্তেজনা তুঙ্গে। তার মধ্যেই বায়ুসেনার একটি এম-আই-১৭ হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ে বদগামের কাছে গারিয়েন্দ কালান গ্রামে। মারা যান বায়ুসেনার ছয় কর্মী ও এক গ্রামবাসী। সেই গ্রামবাসী কৈফিয়ত হুসেনকে বাঁচাতে গিয়েই প্রাণ বাজি রেখেছিল মুদাসির আশরফ। মুদাসিরকে জ্বলন্ত চপারের কাছে যেতে বাধা দেন অনেকেই। আটকানো যায়নি এনসিসি ক্যাডেটের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুদাসিরকে। আজ দিল্লিতে আক্ষেপের সুরে মুদাসির বলে, ‘‘কৈফিয়তকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ওঁকে বাঁচানো সম্ভব ছিল না।’’ প্রতিবেশীকে আগুন থেকে উদ্ধারের চেষ্টার পাশাপাশি অগ্নিদগ্ধ চপার থেকে বায়ুসেনার কর্মীদের দেহ উদ্ধারে সেনা ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সঙ্গেও হাত লাগায় সে।

কাশ্মীরের আর এক কিশোর সরতাজ মোহিদান মুগলের বাড়ি কুপওয়ারা জেলায় তুমিনিয়া গ্রামে। পাক-ভারত সীমান্তে মহিদানের বাড়িতে গত ২৪ অক্টোবর পাক রেঞ্জার্সের মর্টার এসে পড়ে। সরতাজের কথায়, ‘‘আমি ছিলাম দো’তলায়। হঠাৎ বিস্ফোরণ। বাড়ির এক দিক পুরো ধসে পড়ে। আতঙ্কে দো’তলা থেকে লাফ মারি।’’ পরক্ষণেই মনে পড়ে, দুই বোন ও বাবা-মা আটকে পড়েছেন বাড়িতে। ততক্ষণে সরতাজের আশেপাশের বাড়ি লক্ষ্য করে ধেয়ে আসছে একের পর এক পাক মর্টার। মুহূর্তে কর্তব্য স্থির করে নেয় ১৬ বছরের কিশোর। ছুটে ভিতরে ঢুকে প্রথমেই দু’বোনকে উদ্ধার করে বাইরে আনে। তার পর ফের ভিতরে ঢুকে উদ্ধার করে বাবা-মাকে। সাহসের সঙ্গে উপস্থিত বুদ্ধি প্রয়োগ করে গোটা পরিবারকে বাঁচানোর জন্য সরতাজকে ‘শ্রবণ পুরস্কার’ দিচ্ছে আইসিসিডব্লিউ।

মুদাসির ও সরতাজের পাশাপাশি গোটা দেশের আরও ১০ জন কিশোর ও ১০ জন কিশোরীকে সাহসিকতার জন্য জাতীয় পুরস্কার দিচ্ছে আইসিসিডব্লিউ। এদের মধ্যে সমুদ্রের গভীর চলে যাওয়া তিন বন্ধুকে বাঁচিয়েও উত্তাল ঢেউয়ের কাছে হার মানা কেরলের মহাম্মদ মুহসিনকে দেওয়া হচ্ছে মরণোত্তর ‘অভিমুন্য পুরস্কার’। নদী থেকে ডুবন্ত বন্ধুকে বাঁচানোর স্বীকৃতি হিসেবে কিশোরদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সি হিসেবে পুরস্কার পাচ্ছে মণিপুরের আট বছরের বালক লৌউরেমবাম মনগঙ্গ। কিশোরীদের মধ্যে বন্য হাতির হাত থেকে বোনকে বাঁচিয়ে এবং ক্ষেপা ষাঁড়ের হাত থেকে ভাইকে বাঁচিয়ে সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে পুরস্কার পাচ্ছে যথাক্রমে ছত্তিসগঢ়ের ৯ বছরের কান্তি পাইক্রা ও কর্নাটকের
আরতি শেট।

অন্য বিষয়গুলি:

ICCW National Bravery Award Kashmir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy