নমিতা দত্ত। নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকে এনআরসি নিয়ে চারদিকে কত কথা, আতঙ্ক! তাঁর নিজের নাম তালিকায় থাকবে কি না, তা নিয়েই তো ছিল সংশয়। অথচ সে সবে আজ তাঁর ভ্রূক্ষেপ-ই ছিল না। স্বামীর শ্রাদ্ধের আয়োজনে ব্যস্ত ছিলেন নমিতা দত্ত। অথচ স্ত্রীর নাম যদি না থাকে, তা ভেবেই আকুল ছিলেন স্বামী প্রীতিভূষণ। বুধবার রাতে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। আর আজ প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায়, নমিতার নাম নেই।
নমিতাকে কী ভাবে তালিকার খবরটা জানানো হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন প্রতিবেশীরা। নমিতা অবশ্য ধীরস্থিরভাবেই বললেন, ‘‘আমাদের সন্তান নেই। স্বামীকে নিয়েই বাঁচতে চেয়েছিলাম। তিনি যখন চলে গেলেন, তখন আমার বাড়িতে থাকা আর ডিটেনশন শিবিরে থাকা একই!’’
নমিতার বাবার বাড়ি ধর্মনগরে। এনআরসি-র জন্য তিনি বাবার নাগরিকত্বের শংসাপত্র জমা দিয়েছিলেন। করিমগঞ্জ থেকে ওই শংসাপত্র পরীক্ষার জন্য ত্রিপুরায় পাঠানো হয়েছিল। ফেরত আসেনি। এর পর অতিরিক্ত নথি দেখাতে বললে বিপাকে পড়েন নমিতারা। করিমগঞ্জ-ধর্মনগরে ছোটাছুটি করেও লাভ হয়নি।
নাগরিকত্বের দাবি জানিয়ে ফরেনার্স ট্রাইবুনালে ছুটতে হবে প্রাক্তন বিধায়ক আতাউর রহমান মাঝারভুঁইয়াকেও। কাটিগড়া থেকে দু’বার জিতেছিলেন তিনি। আতাউরের নাম প্রথম তালিকায় এসেছিল। পরে ছেলে নাজির আহমেদ-সহ বাকিদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল নথি আবার পরীক্ষার জন্য। আজ নথিপত্র দেখিয়ে প্রাক্তন বিধায়ক বলেন, ‘‘আমার লিগাসি ডেটা রয়েছে। ১৯৪৬ সালে বাবার নামে জমির দলিল আছে। আমি যদি বিদেশি, তবে আমার তিন মেয়ে কী করে ভারতীয় হয়? তিন মেয়ে ভারতীয় হলে আর এক মেয়ে কী করে বিদেশি হয়?’’ বাদ পড়াদের তালিকায় রয়েছেন দক্ষিণ অভয়াপুরির এআইইউডিএফ বিধায়ক অনন্তকুমার মালো-ও। পরিবারের অন্যদের নাম থাকলেও সপুত্র বাদ পড়েছেন তিনি।
এনআরসি-র যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিলচর তারাপুরের বাসিন্দা অজিত দেবও। বললেন, ‘‘আমার পরিবারের ৩ জনের নাম রয়েছে তালিকায়। এক মেয়ে কী করে বাদ গেল? আইনজীবী প্রদীপ সিংহও বললেন, ‘‘একই লিগাসি ডেটা দিয়ে আমার পরিবারের ৫ জন আবেদন করেছেন। ৪ জন ভারতীয় বলে স্বীকৃতি পেলেন। বাদ ছোট ভাই প্রবীর।’’ এনআরসি-র তালিকা দেখে হতভম্ব সরকারি গাড়িচালক মাধবকুমার সাহাও। তাঁর নামের পাশে ‘রিজেক্টড’ লেখা দেখে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমার দুই ছেলে-মেয়ে ভারতীয় আর আমি বুঝি বিদেশি!’’ সকলেরই চিন্তা, প্রিয়জনদের কী হবে? পরিবারের কী হবে?
শিলচরের বিজেপি বিধায়ক দিলীপকুমার পাল কিন্তু নিশ্চিন্ত! স্ত্রী অর্চনার নাম নেই। দিলীপবাবু বললেন, ‘‘চিন্তার কিছু নেই। সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy