নিরপেক্ষ বিচার বিভাগের জন্য স্বাধীন সংবাদমাধ্যম প্রয়োজন বলে মন্তব্য করলেন ওড়িশা হাই কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এস মুরলীধর। নরেন্দ্র মোদী জমানায় তাঁর রাতারাতি দিল্লি হাই কোর্ট থেকে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্টে বদলির সমালোচনা করেছিল নানা শিবির।
সম্প্রতি ‘সংবাদমাধ্যম, আদালত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক এক বক্তৃতায় মুরলীধর বলেন, “গণতান্ত্রিক দেশে প্রকৃতপক্ষে নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যমের জন্য প্রয়োজন নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ। আবার বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য স্বাধীন সংবাদমাধ্যম প্রয়োজন।” ব্রিটেনের বিখ্যাত আইনজ্ঞ লর্ড ডেনিংকে উদ্ধৃত করে মুরলীধর বলেন, “আমরা সমালোচনাকে ভয় করি না। তা অপছন্দও করি না। কারণ এর সঙ্গে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িত। সেটা হল মতপ্রকাশের স্বাধীনতা।” তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালে ভারত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫৯তম স্থানে রয়েছে। ২০২৩ সালে ছিল ১৬১তম স্থানে।
মুরলীধরের মতে, যে বিষয়গুলির জন্য ভারতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ধাক্কা খাচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে সরকারি নির্দেশে বারবার ইন্টারনেট বন্ধ, সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও কিছু ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের ভূমিকা। তাঁর কথায়, “কাশ্মীরের এক সংবাদপত্রের সম্পাদক অনুরাধা ভাসিনের সঙ্গে কেন্দ্রের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে হবে। কিন্তু সেই রায় খুব কমই কার্যকর করা হয়েছে। কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও জম্মু-কাশ্মীরের মতো সংঘর্ষপ্রবণ এলাকায় বারবার ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দেয় সরকার। ফলে সাংবাদিকদের খবর সংগ্রহ ও পরিবেশনের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।” এরই পাশাপাশি, সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিয়েও সরব হয়েছেন তিনি।
মুরলীধর বলেন, “কৃষক বিক্ষোভ, মণিপুর হিংসা এমনকি পরীক্ষার সময়েও ইন্টারনেট বন্ধ করা হচ্ছে। এ সব নির্দেশ জনসমক্ষে আসে না। ফলে কোর্টে চ্যালেঞ্জও করা যায় না। ২০২২-২৩ সালে ইরান, মায়ানমার, ইউক্রেন ও ভারতে সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে।” তাঁর মতে, গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে বিবিসি-র তথ্যচিত্রের প্রতিক্রিয়া ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করায় একটি তামিল পত্রিকার ওয়েবসাইট ব্লক করাতেই সরকারের অসহিষ্ণুতার চরিত্র বোঝা যায়। কোর্টও সব ক্ষেত্রে সঠিক ভূমিকা নেয়নি। মাদ্রাজ হাই কোর্ট মোদীর ব্যঙ্গচিত্র সরাতে তামিল পত্রিকাটিকে নির্দেশ দিয়েছিল।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)