Advertisement
E-Paper

রং, বাজির শব্দেই মিশে যাচ্ছে রাতভর সাইরেন

এক দিকে বিজয়ী শিবিরের উল্লাস চলছে বিরোধীদের প্রতি তীব্র কটাক্ষের গান বাজিয়ে। আর তার পাশাপাশি অভিযোগ আসছে প্রতিহিংসার। সরাসরি প্রাণহানির ঘটনা এখনও নেই ঠিকই।

CPM leader\'s house was burned down In tripura

ত্রিপুরার উদয়পুর রাজারবাগ মুসলিম পাড়ায় পোড়ানো হয়েছে সিপিএম নেত্রী রোশনা বিবির বাড়ি। ছবি: বাপী রায়চৌধুরী।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৩ ০৫:৪৭
Share
Save

লায় পুরনো ছড়া ছিল, ‘আজ আমাদের ন্যাড়াপোড়া, কাল আমাদের দোল’। ত্রিপুরায় কয়েক দিন ধরে এক দিকে আতস বাজি এবং আগাম দোলের রং। আর অন্য দিকে আগুন। ন্যাড়াপোড়া নয়। পুড়ছে ঘর, জ্বলছে দোকান।

দোলের আগের সন্ধ্যায় রাজভবনে গিয়ে ত্রিপুরায় দ্বিতীয় বার সরকার গড়ার দাবি জানিয়ে এসেছেন মানিক সাহা। কিন্তু ফলপ্রকাশ এবং নতুন মন্ত্রিসভা দায়িত্ব নেওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যের পরিস্থিতি উত্তপ্ত। এক দিকে বিজয়ী শিবিরের উল্লাস চলছে বিরোধীদের প্রতি তীব্র কটাক্ষের গান বাজিয়ে। আর তার পাশাপাশি অভিযোগ আসছে প্রতিহিংসার। সরাসরি প্রাণহানির ঘটনা এখনও নেই ঠিকই। তবে ঘরে আগুন, দোকান ভাঙচুর, ঋণ নিয়ে কেনা অটো বা অন্য গাড়ি রাস্তায় বার করতে না দেওয়া এবং গণ-হারে জরিমানা আদায়ের অভিযোগ ভূরি ভূরি। অভিযোগের তির বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শাসক বিজেপির দিকে। তদারকি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই মানিক হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, হিংসা-অশান্তি যে দলেরই লোকজন করুক, কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে প্রশাসনকে। কিন্তু বিরোধী এবং ভুক্তভোগী মানুষের অভিজ্ঞতা সেই আশ্বাসের সঙ্গে মিলছে না।

রাজধানী শহরের প্রাণকেন্দ্রেই বেশি রাতে দেখা মিলেছে সেই মহিলার, বাড়িতে হামলা হওয়ায় আতঙ্কে রাত-পোশাকেই যিনি ছুটে এসেছিলেন পশ্চিম আগরতলা মহিলা থানার সাহায্য চাইতে। বিলোনিয়া, সোনামুড়া, বিশালগড়-সহ একাধিক জায়গায় বাড়ির মহিলারা বিবরণ দিয়েছেন, কী ভাবে কাঠ, শাবল, দা হাতে দুষ্কৃতী বাহিনী বাড়িতে চড়াও হয়েছে। শিশুদের দুধের বোতলও দায়ের কোপে টুকরো করে ফেলে দেওয়া হয়েছে। আতঙ্কিত মানুষ হাতজোড় করে সাংবাদিকদের কাছেও আর্জি জানাচ্ছেন, ‘‘কিছু করুন। দেখুন, কী করেছে! অমানুষের অত্যাচার চলছে!’’

আগরতলা হোক বা অন্যত্র, রাতভর এখন শুধু রকমারি সাইরেনের শব্দ। কোনওটা দমকলের, কোনওটা অ্যাম্বুল্যান্স, কোনওটা আবার পুলিশের গাড়ির। সন্ধ্যার পর থেকেই রাস্তায় কমতে শুরু করে লোকের আনাগোনা। হামলা বা আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটলেই মানুষ এখানে জরুরি পরিষেবা হিসেবে দমকলে ফোন করেন। শুধু আগুন নেভানো নয়, আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসাও দমকলের কাজ। আগরতলার দু’টি বড় হাসপাতালের কাছে রাতে দাঁড়ালে মুর্হূমুর্হূ দমকলের গাড়ির ঢোকা-বেরোনো চোখে পড়ছে। গাড়ির জলের ট্যাঙ্কের পাশের খালি জায়গায় শোয়ানো আহত মানুষ।

সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এবং বিদায়ী বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারের কথায়, ‘‘গন্ডগোলের খবর পেলে পুলিশ সাইরেন বাজিয়েই এলাকায় যাচ্ছে। তাতে দুর্বৃত্তেরা সচেতন হয়ে সরে যাচ্ছে। পুলিশ চলে গেলে আবার হামলা হচ্ছে।’’ বিরোধী বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব মহকুমা ধরে ধরে আক্রান্তদের নাম এবং ঘটনার তথ্য দিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং পুলিশের ডিজি-র কাছে। হিংসা থামাতে রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছে তিপ্রা মথা। বিরোধীদের অভিযোগ, জয়ের পরেই প্রতিহিংসা নিতে নেমে পড়েছে শাসক দল। আবার বিজেপির অভিযোগ, তাদের কর্মী-সমর্থকদের উপরে বহু এলাকায় মথা হামলা করছে। যেখানে শক্তি আছে, সিপিএম এবং কংগ্রেসও হামলায় নেমেছে। বাজি ফাটানো ঘিরে অশান্তির জেরে কমলপুরে বিদায়ী সরকারের এক মন্ত্রীর ভাই কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে মার খেয়েছেন, এমন ঘটনাও ঘটেছে।

খোয়াই, সোনামুড়া, আগরতলা-সহ একাধিক এলাকায় হামলার খবর পেয়ে সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘ভোট সুন্দর শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়েছে। তার পরে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না। যে দলেরই হোক, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ বিরোধী নেতারা তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেছেন, ‘‘কোথায় ব্যবস্থা? ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ যাদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের পরে আবার ছেড়ে দিচ্ছে। তারা ফের হামলা করছে। এটা কি কোনও সমাধান?’’ পুলিশের ডিজি-র কাছে গিয়ে সোমবার একই কথা বলেছেন বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়ে পরাজিত কংগ্রেস প্রার্থী আশিস সাহার বক্তব্য, ‘‘কার্যকরী কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে না। অ-বিজেপি রাজ্যে কিছু হলে বিজেপি কেন্দ্রীয় দল পাঠায়। এখানে কী ব্যবস্থা হচ্ছে?’’

উত্তর আপাতত নেই। বাতাসে দোলের রং, রাতের আকাশে বাজি এবং হিংসার আগুন মিলেমিশে একাকার!

Tripura Assembly Election 2023 Post Poll Violence

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।