Advertisement
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শবরীমালা-প্রসঙ্গ তুলে সরব নির্মলা, পাল্টা সিপিএমের

নির্মলার এ দিনের অভিযোগ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সিপিএম। দলীয় নেতৃত্বের দাবি, মৌলবাদীদের সুরে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
তিরুঅনন্তপুরম শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২১ ০৭:২৩
Share: Save:

যতই দেশের শীর্ষ আদালত রায় দিক, শবরীমালা মন্দিরে সব বয়সের মহিলার প্রবেশাধিকার যে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবার মানবে না, তা তারা বারবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে ফের মামলাও করেছে গেরুয়া শিবির। কেরলে ভোটপ্রচারে গিয়ে দল তথা সঙ্ঘ পরিবারের সেই অবস্থানই আরও একবার ঘুরপথে স্পষ্ট করে দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেই সঙ্গেই কেন কেরলের বাম সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে মহিলাদের শবরীমালায় যেতে দিয়েছিল, সে প্রশ্ন তুলে পিনারাই বিজয়নের সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন নির্মলা। তাঁর বক্তব্য, এ কাজ করে মন্ত্রী ঘোর পাপ করেছেন! পাঁচশো বছর তপস্যা করলেও সেই পাপ ঘুচবে না!

নির্মলার এ দিনের অভিযোগ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সিপিএম। দলীয় নেতৃত্বের দাবি, মৌলবাদীদের সুরে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। উনি দেশের লজ্জা! দেশের অন্যান্য অংশের মতো কেরলেও ধর্মের নামে মধ্যযুগীয় নিয়মকানুন চালু করতে মরিয়া বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার সাম্প্রদায়িকতার তাস খেলছে। বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার গোড়া থেকেই মহিলা-বিদ্বেষী। প্রয়াত আরএসএস-প্রধান এম এস গোলওয়ালকরের একটি বক্তৃতার প্রসঙ্গ তুলে সিপিএম নেতারা
বলেন, ‘‘১৯৬০ সালে গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে গিয়ে প্রয়াত সঙ্ঘ-প্রধান বলেন, যে কোনও জাতের মহিলার প্রথম সন্তানের বাবা হওয়া উচিত নাম্বুদিরি (কেরলের ব্রাহ্মণ) ব্রাহ্মণের! তার পর ওই মহিলা তাঁর স্বামীর থেকে সন্তান নিতে পারেন। গোলওয়ালকরের এই বক্তব্য ছাপাও হয়েছিল সঙ্ঘের মুখপত্রে।’’ নেতাদের বক্তব্য, একা গোলওয়ালকর নন, বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারের বেশির ভাগ নেতাই তীব্র মহিলা-বিদ্বেষী ও মহিলা স্বাধীনতার বিরোধী। বর্তমান সঙ্ঘ-প্রধান মোহন ভাগবত থেকে যোগী আদিত্যনাথ, সকলেই প্রকাশ্যে মহিলাদের স্বাধীনতা দেওয়ার বিরোধিতা করেছেন। ফলে সেই দলের নেত্রী হয়ে নির্মলাও যে একই পথে হাঁটবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

২০১৮ সালে এক ঐতিহাসিক রায়ে কেরলের শবরীমালা মন্দিরে সব বয়সের মহিলার প্রবেশাধিকারে সায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে বিরোধিতায় নামে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করে কেরলের বিজয়ন সরকার মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশের ব্যবস্থা করলে প্রতিবাদের নামে সে সময় মন্দির সংলগ্ন এলাকায় কার্যত তাণ্ডব চালিয়েছিল সঙ্ঘ পরিবারের সমর্থকেরা। খোদ রাহুল গাঁধী সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানালেও বিজয়ন-বিরোধিতা করতে গিয়ে কেরলে কংগ্রেসের বড় অংশ বিজেপির সঙ্গে সেই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু বিজয়ন জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই চলবেন। এ বারে কেরলের বিধানসভা ভোটে শবরীমালাকে ইস্যু করেছে বিজেপি এবং কংগ্রেস দু’পক্ষই। যদিও নরেন্দ্র মোদী বা অমিত শাহ কেরলে এসে শবরীমালা নিয়ে মুখ খোলেননি, কিন্তু শনিবার থেকে রাজ্যে প্রচার চালাতে গিয়ে বিষয়টি উস্কে দিলেন সঙ্ঘ-পরিবারের ঘনিষ্ঠ নির্মলা। এবং বিতর্ক বাড়িয়ে জানালেন, কেরলের বাম সরকার নাকি আয়াপ্পা ভক্ত নন, এমন মহিলাদের গোপনে মন্দিরে পাঠিয়ে ‘লাল সেলাম’ স্লোগান দেওয়ার চক্রান্ত করেছিল! রবিবার নির্মলার এমন অভিযোগ শুনে অস্বস্তিতে পড়ে যান বিজেপির বহু নেতা-কর্মী। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সামনে আপত্তি জানাতে পারেননি তারা। নির্মলার আরও অভিযোগ, সে সময় আয়াপ্পা-ভক্তদের উপরে লাঠি চালিয়েছিল কেরলের পুলিশ। যদিও রাজ্য সরকার এবং পুলিশের দাবি, মহিলাদের প্রবেশাধিকারে বাধা দেওয়ার নাম করে তাণ্ডব চালিয়েছিল বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। তাদের সরাতেই পুলিশ লাঠিচার্জ করেছিল, যাতে মহিলারা নিরাপদে বিগ্রহ দর্শনে যেতে পারেন। নির্মলার সফর প্রসঙ্গে সিপিএম নেতারা বলছেন, ‘‘উনি কেরলে এসে নারী-বিদ্বেষী বক্তব্য রাখছেন। কেরলের মানুষ ভোটেই এর জবাব দেবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE