Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Hathras Stampede Incident

মৃত শিশুর পাশে কাঁদছেন বাবা, ট্রাকে ভরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে লাশ! হাথরস জুড়ে শোক আর হাহাকার

মঙ্গলবার হাথরসে সৎসঙ্গের ডাক দিয়েছিলেন নারায়ণ সাকার হরি ওরফে সাকার বিশ্ব হরি ওরফে ভোলে বাবা। তার শেষেই হুড়োহুড়ি পড়ে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

Father mourns death of 3-year-old, boys saw video of mother lying on ground

সৎসঙ্গে পদপিষ্ট হয়ে পুণ্যার্থীদের মৃত্যু। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪ ০৯:২৪
Share: Save:

হাসপাতালের বাইরে থরে থরে শোয়ানো একাধিক মৃতদেহ। তার পাশে বসে প্রলাপ বকছেন অনেকে। সেই লাশের ভিড়ে এক মহিলার ভিডিয়ো হোয়াটস্অ্যাপে দেখে চমকে উঠল দুই কিশোর। ওই মহিলা তো তাদের মা। একটু এগোলেই সাদা কাপড়ে ঢাকা একটি শিশু। বয়স মেরেকেটে তিন। তার পাশে বসে নিথর হয়ে বসে তার বাবা। চোখ বেয়ে জল পড়ছে তাঁর। মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের হাথরসের সৎসঙ্গের দুর্ঘটনার পর এমন নানান হৃদয়বিদারক ছবি উঠে আসছে।

হাসপাতালগুলির বাইরে শুধুই কান্নার রোল। স্বজন হারানো কান্না। কেউ কেউ আবার হাসপাতালের চারপাশ ছুটে বেড়াচ্ছেন পরিজনের খোঁজে। আদৌ বেঁচে আছেন কি না, জানেন না তাঁরা। পুলিশ, হাসপাতাল কর্মীদের জিজ্ঞাসা করেও লাভ নেই। তাঁদের কাছেও কোনও উত্তর নেই। মঙ্গলবার হাথরসের ঘটনা আবারও এক বার নাড়িয়ে দিল গোটা দেশকে।

মঙ্গলবার হাথরসে সৎসঙ্গের ডাক দিয়েছিলেন নারায়ণ সাকার হরি ওরফে সাকার বিশ্ব হরি ওরফে ভোলে বাবা। তার শেষেই হুড়োহুড়ি পড়ে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মারা গিয়েছেন অন্তত ১২১ জন পুণ্যার্থী। মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। কী ভাবে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল, তা অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের মতে, সৎসঙ্গের জন্য যে প্যান্ডেল বাঁধা হয়েছিল, তা ঘেরা ছিল। পাখার ব্যবস্থা করা হয়নি। প্যান্ডেল খোলামেলা থাকলেও আর্দ্রতা এবং গরমের কারণে সকলেই হাঁসফাঁস করছিলেন। ফলে সৎসঙ্গ শেষ হওয়ার পরেই মানুষ হুড়মুড়িয়ে মাঠের বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আসা-যাওয়ার জন্য যে গেট তৈরি হয়েছিল, সেটিও অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ হওয়ার কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

ঘটনাস্থলে থাকা এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘সৎসঙ্গ শেষ হওয়ার পর বাইরে বার হওয়ার জন্য মানুষের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। বাইরে যাওয়ার পথে একটি বড় ড্রেন ছিল। তার উপর কাঠের পাটাতন দেওয়া হয়েছিল মাত্র। ভিড়ে চাপে সেই পাটাতন ভেঙে যায়। অনেকেই ড্রেনের মধ্যে পড়ে যান।’’ কেউ কেউ এই দুর্ঘটনার জন্য আয়োজকদের কাঠগড়ায় তুলছেন, কেউ আবার পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করছেন। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘এই দুর্ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পুলিশের গাফিলতির কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানত এই সৎসঙ্গে এত ভিড় হবে। তার পরও ঠিক মতো পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি। আমরা চাই মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশকর্মীদের বরখাস্ত করুন।’’

দুর্ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে ট্রাক বা ম্যাটাডর করে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। সেখানেই ঠাঁই হচ্ছে আহতদেরও। চারপাশে শুধু রক্ত-কান্না-চিৎকার। সবাই একে অপরকে শুধু প্রশ্নই করছেন, কিন্তু উত্তর পাচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী থেকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— সবাই হাথরসের ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন। ক্ষতিপুরণও ঘোষণা করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, সৎসঙ্গের আয়োজকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। তদন্তের জন্য পুলিশের বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বুধবার সকালেই সেই দল পৌঁছেছে ঘটনাস্থলে। সেখান থেকে সব মৃতদেহ এবং আহতকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে সৎসঙ্গের চারপাশ এখনও থমথমে।

অন্য বিষয়গুলি:

Hathras Stampede Incident Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE