ইরফান হাবিব। ফাইল চিত্র।
গেরুয়া শিবিরের আক্রমণে বার বার ‘বিদ্ধ’ হতে হয়েছে তাঁকে। শুধু তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ নয়, ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিবের ধর্মীয় পরিচয় নিয়েও কুকথার অন্ত নেই। এ বার ইরফানের ৯০ বছর পূর্তিতে ইতিহাসকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করতে নামলেন দেশের প্রথিতযশা ইতিহাসবিদেরা।
বৃহস্পতিবার ৯০ বছর পূর্ণ করলেন ইরফান। সেই উপলক্ষে একটি অনলাইন আলোচনাসভায় উঠে এল বিজেপির আমলে ঘটে চলা নানা ইতিহাস-বিকৃতির প্রসঙ্গ। সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার, শিরিন মুসবি, আদিত্য মুখোপাধ্যায়, অর্থনীতিবিদ অমিয় বাগচী এবং প্রভাত পট্টনায়ক। শুধু আলোচনা নয়, এই সাম্প্রদায়িক ইতিহাস রচনা এবং ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে পেশাদার ইতিহাস গবেষকদের ভূমিকার কথাও উঠে এসেছে বক্তাদের জবানিতে। হাবিবের বক্তব্য, ফ্যাসিবাদী শক্তি এ ভাবেই ইতিহাসকে বিকৃত করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। শুধু তা-ই নয়, সাম্প্রদায়িক বিভাজন এবং জাতিবিদ্বেষও এই শক্তির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই প্রসঙ্গে তিনি তুলে ধরেন নাৎসি আমলে ইহুদি বিদ্বেষের প্রসঙ্গ।
গেরুয়া শিবিরের ‘ইতিহাসে’ অনেকখানি জুড়ে রয়েছে আর্য-তত্ত্ব। যার কেন্দ্রে রয়েছে হিন্দু জাতির গৌরবগাথা। কিন্তু বৈদিক সাহিত্য, জিনতত্ত্ব এবং ভাষাতত্ত্বের সূত্র ধরেই রোমিলা থাপার এ দিন ফের জানিয়ে দেন, আর্য-জাতি তত্ত্ব আসলে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী চিন্তার উত্তরাধিকার। বস্তুত, আর্য কোনও জাতি নয়, ভাষাগোষ্ঠী। এমনকি, সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গেও যে আর্যদের মিশিয়ে দেওয়া হয়, তারও কোনও প্রমাণ নেই বলে জানান তিনি। ইতিহাস হল নির্ভরযোগ্য সূত্রের ভিত্তিতে অতীতের যুক্তিনির্ভর বিশ্লেষণ, বলেন থাপার।
ইতিহাস গবেষকদের একাংশের মতে, বিংশ শতকের প্রথমার্ধে যে-জাতীয়তাবাদী ইতিহাস চর্চার শুরু হয়েছিল, তার ভিতরে অনেকটাই ছিল গৌরবান্বিত অতীত গঠনের চেষ্টা। তৎকালীন সাম্রাজ্যবাদী ইতিহাস চর্চার নিরিখে যা গ্রহণ করা হলেও দ্বিতীয়ার্ধে ভারতে মার্ক্সবাদী ইতিহাস চর্চার ঘরানা নতুন দিক উন্মোচন করে। রাজরাজড়াদের গল্পের বাইরে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক গোষ্ঠী ও শ্রেণিকে ইতিহাসের আঙিনায় নিয়ে আসা হয়। যার ভিত্তিতে ব্রহ্মণ্যবাদী ধর্মশাস্ত্র এবং অতীতের অনেক গৌরবগাথাই প্রশ্নের মুখে পড়ে। তাই মার্ক্সবাদী এবং প্রগতিশীল ইতিহাসবিদেরা বার বার হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণ সয়েছেন।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার প্রণীত ইতিহাসের পাঠ্যসূচি নিয়ে এ দিন সরব হয়েছেন ইতিহাসবিদ আদিত্য মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, এই ধরনের ইতিহাস বিকৃতিকে ‘বৌদ্ধিক উগ্রপন্থা’ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। কারণ, যাঁরা ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেননি এবং যাঁরা সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন, তাঁরাই পাঠ্যক্রম তৈরি করেছেন। কী ভাবে সরকারি স্তর থেকে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি তুলে ধরেন মুসলিমদের উদ্দেশে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘উইপোকার মতো ছড়িয়ে পড়া’ মন্তব্যকেও। আদিত্যবাবুর মতে, ফ্যাসিবাদের ইতিহাস প্রমাণ করে, দেশের প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে ‘এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স’-এ ডিগ্রিধারী লোক বসে থাকলে গণেশের প্লাস্টিক সার্জারি বা অর্জুনের ‘পরমাণু শক্তিধর’ তিরের মতো ইতিহাস রচনা সম্ভব!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy