সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
নির্বাচনী বন্ড মামলার প্রথম দিনের শুনানিতে ২০১৯ সালের অন্তর্বর্তী আদেশ বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। ওই আদেশে বলা হয়েছে, সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে প্রাপ্ত অনুদানের বিশদ নথি মুখবন্ধ খামে নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিতে হবে। মঙ্গলবার কমিশনের পক্ষ থেকে শীর্ষ আদালতকে জানানো হয়, ২০১৯-এর নথি তারা পেয়েছিল। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ তখন তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানায়, ওই অন্তর্বর্তী নির্দেশ বহাল থাকছে।
নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অনুদান সংগ্রহের ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক আবেদন জমা পড়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। রাজনৈতিক দল হিসেবে সিপিএম এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জয়া ঠাকুর আবেদন করেছেন। অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রাইটস (এডিআর) সংস্থার পক্ষ থেকেও জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। সব আবেদন একত্র করে আজ থেকে এই মামলার শুনানি শুরু হল। সাংবিধানিক বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের সঙ্গে রয়েছেন বিচারপতি সঞ্জীব খন্না, বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র। কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই তার বক্তব্য লিখিত হলফনামার আকারে জমা দিয়েছে। সেখানে কেন্দ্রের হয়ে সলিসিটর জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানি দাবি করেছেন, দলগুলির প্রাপ্ত অনুদানের উৎস সম্পর্কে জানার অধিকার নাগরিকদের থাকতে পারে না।
এ দিনের শুনানিতে আবেদনকারীদের তরফে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ, কপিল সিব্বল, শাদান ফরাসত এবং নিজাম পাশা সকলেই সওয়াল করেন যে, গণতন্ত্রের স্বার্থে অনুদানের উৎস সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা নাগরিকদের জন্য খুবই জরুরি। নচেৎ কারা কোন দলকে কী টাকা দিচ্ছে এবং তার বিনিময়ে সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে কি না, তা জানা যাবে না।
প্রশান্ত ভূষণ তাঁর সওয়ালে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কাদের থেকে টাকা পাচ্ছে, সেটা জানাটা নাগরিকের মৌলিক তথ্যের অধিকারের মধ্যে পড়ে। দলগুলোর প্রাপ্ত মোট অনুদানের তথ্য (দ্র.সারণি) বিশ্লেষণ করলেই দেখা যাচ্ছে, প্রশান্ত দাবি করেন, এই ব্যবস্থায় শাসক দলেরাই লাভবান হচ্ছে। যারা কেন্দ্রে বা রাজ্যে কোথাও ক্ষমতায় নেই, তাদের ঝুলি প্রায় শূন্য। প্রশান্তের মতে, অতএব শাসকের থেকে সুবিধা আদায়ের তাগিদেই টাকা দেওয়া হচ্ছে, এ কথা মনে করার কারণ আছে। সুতরাং এর ফলে দুর্নীতি প্রশ্রয় পাচ্ছে এবং শাসক ও বিরোধীর মধ্যে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, বর্তমান আইনে বিদেশি সংস্থাও তার অধীনস্থ দেশি সংস্থার মাধ্যমে বন্ড কিনতে পারে। এর ফলে ভুয়ো সংস্থা তৈরি করে বাইরে থেকে টাকা দেওয়ার রাস্তা খুলছে বলে দাবি করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আগে কোনও সংস্থা কোনও দলকে অনুদান দিলে তা জানাতে বাধ্য থাকত। সে ক্ষেত্রে সেই সংস্থা কোনও বাড়তি সুবিধা পেলে তা নিয়ে মামলা হতে পারত। এখন কে কাকে কী দিচ্ছে, তা জানারই উপায় নেই।’’
আইনজীবী সিব্বল প্রশ্ন তোলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় কর্পোরেট সংস্থা এবং নাগরিকের মধ্যে বৈষম্য থাকছে। কোনও নাগরিক ২০ হাজার বেশি মূল্যের নির্বাচনী বন্ড কিনলে নিজের নাম জানাতে বাধ্য। অথচ কর্পোরেট সংস্থার সে দায় নেই। সিব্বলের সওয়াল, ‘‘ভোট নাগরিক দেয়, কর্পোরেট সংস্থা দেয় না। তা হলে তারা নাম গোপন রাখার বাড়তি সুবিধা কেন পাবে? কর্পোরেট সংস্থা যে পরিচয় গোপন রেখে অনুদান দিচ্ছে, সে ব্যাপারে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি নেওয়া হয়েছে কি? যদি শাসক এবং অনুদানদাতার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ লেনদেন এবং তা থেকে আদায়ীকৃত সুবিধার ব্যাপারে নাগরিক জানতেই না পারেন, তা হলে তো তিনি গণতন্ত্রে অংশগ্রহণই করতে পারবেন না। অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন সে ক্ষেত্রে হবে কী করে?’’ শেয়ারহোল্ডারদের প্রসঙ্গ তুলেছেন আইনজীবী ফরাসতও। তাঁর মতে, এই ব্যবস্থা সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত চেতনার অধিকারের পরিপন্থী। তিনি সওয়াল করেন, নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থা কার্যক্ষেত্রে কালো টাকা ঠেকাচ্ছে না, বরং সাদা টাকাকে নামগোত্রহীন করে তুলছে।
শুনানি আগামী কালও চলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy