মহারাষ্ট্রের ফলাফল মনমতো না হওয়ায় ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যতা, শেষ মুহূর্তে ভোটার তালিকায় নাম সংযোজন, ভোটগ্রহণের দিন শেষ বেলায় আচমকাই প্রাপ্ত ভোট শতাংশ বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলি নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। জবাবে আজ নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সব অভিযোগই ভিত্তিহীন। তবে প্রধান বিরোধী দলের তোলা প্রতিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখতে আগামী ৩ ডিসেম্বর কংগ্রেস প্রতিনিধিদলকে নিজেদের দফতরে আহ্বান করেছেন কমিশন কর্তারা।
মহারাষ্ট্রে সরকার গড়ার আশা নিয়ে নির্বাচনে নেমেছিলেন কংগস নেতৃত্ব। শাসক শিবিরের মতে, প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় এখন হারের যাবতীয় দায় নির্বাচন কমিশনের উপর ঠেলে দেওয়ার কৌশল নিয়েছে কংগ্রেস। প্রশ্ন তোলা হয়েছে ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে। ফের ব্যালট ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার দাবিতে সরব হয়েছে তারা। এ ছাড়া তাদের দাবি, ভোটের ঠিক আগে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে ভুয়ো নাম তালিকায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে বিজেপি তথা মহায্যুতি জোটের সুবিধে হয়। কংগ্রেস নেতৃত্বের অভিযোগ, সব মিলিয়ে গত ছয় মাসে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে প্রায় ৫০ লক্ষের কাছাকাছি নতুন নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দেখ্য গিয়েছে একাধিক আসনে গড়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজারের কাছাকাছি ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছে। মহারাষ্ট্রের একাধিক আসনে জয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান যেখানে মাত্র কয়েকশো ভোটে হয়েছে, সেখানে ওই নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্তি সামগ্রিক ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে বলেই মনে করছে রাহুল গান্ধীর দল।
অভিযোগ উঠেছে, চূড়ান্ত ভোট শতাংশ বৃদ্ধি নিয়েও। কংগ্রেসের অভিযোগ, ভোটগ্রহণের দিন বিকাল পাঁচটায় ৫৮ শতাংশ ভোট পড়েছিল। অথচ কমিশন রাত পৌনে বারোটা নাগাদ জানায়, চূড়ান্ত ভোটের হার ৬৫ শতাংশের সামান্য বেশি। ওই সময়ের মধ্যে ভোটদান সাত শতাংশ বৃদ্ধি কী ভাবে হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
জবাবে কমিশন জানিয়েছে, ইভিএম ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা সুপ্রিম কোর্ট মেনে নিয়েছে। তা ছাড়া ইভিএম যে হ্যাক করা যায় না, তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। ফলে ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তোলা অর্থহীন। ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রসঙ্গে কমিশনের বক্তব্য- ওই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সমস্ত রাজনৈতিক দলই ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িয়ে থাকে। ফলে এ ক্ষেত্রে কারচুপির অভিযোগ তোলা উচিত নয়। আর চূড়ান্ত ভোট শতাংশ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কমিশনের বক্তব্য, বহু ক্ষেত্রেই বিকাল পাঁচটার পরে ভোটগ্রহণ চালু থাকে। ভোট শেষ করে প্রান্তিক এলাকাগুলি থেকে ভোটকর্মীরা ফিরে আসার পরেই চূড়ান্ত ভোট শতাংশের গণনা সম্ভব হয়। সে কারণেই বিকেল পাঁচটা ও রাত পৌনে ১২টার সময়ে যে চূড়ান্ত ভোটের হার প্রকাশিত হয়, তার মধ্যে অনেকটাই পার্থক্য লক্ষ করা যায়। লোকসভা ভোটেও এমন ঘটেছিল। কংগ্রেসকে লেখা চিঠিতে কমিশন জানিয়েছে, এই বিষয়গুলি নিয়ে অতীতে একাধিক বার ব্যাখ্যা দিয়েছে কমিশন। তা সত্ত্বেও কংগ্রেস নেতৃত্বের সংশয় থাকলে কংগ্রেস নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল আগামী ৩ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় কমিশন দফতরে এলে তাঁদের সঙ্গে বিষয়গুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে ধোঁয়াশা দূর করবেন কমিশন কর্তারা।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)