Advertisement
E-Paper
BB_2025_Lead Zero Banner

নিখরচার সুবিধা দিয়েই বাজিমাত কেজরীর

দিল্লির ভোটের ফল ঘোষণার পরে বিজেপি নেতারা বলছেন, অরবিন্দ কেজরীবালের এই ‘খয়রাতি’ বা বিনা মূল্যে নানারকম সুবিধার টানেই রাজধানীর মানুষ ভোট দিয়েছেন।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:৩৬
Share
Save

গত তিন মাসে দিল্লির অর্ধেক মানুষকে এক পয়সাও বিদ্যুতের বিল দিতে হয়নি। বিদ্যুতের বিল এসেছে। কিন্তু তাতে বকেয়া টাকার ঘরে ‘শূন্য’ লেখা।

আজ দিল্লির ভোটের ফল ঘোষণার পরে বিজেপি নেতারা বলছেন, অরবিন্দ কেজরীবালের এই ‘খয়রাতি’ বা বিনা মূল্যে নানারকম সুবিধার টানেই রাজধানীর মানুষ ভোট দিয়েছেন। কিন্তু দিনের শেষে বিজেপি থেকে কংগ্রেস বা বাম, সব দলের নেতারাই মানছেন, দিল্লির মতো শহর-কেন্দ্রিক রাজ্যেও যে গরিব, নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে নিখরচায় সুবিধা পৌঁছে দিয়ে বাজিমাত করা যায়, তা দেখিয়ে দিলেন কেজরীবাল।

গত পাঁচ বছরে আম আদমি পার্টির জমানায় দিল্লিতে সরকারি স্কুলের ভোল বদলেছে। পাড়ায় পাড়ায় মহল্লা ক্নিনিকে গেলে নিখরচায় চিকিৎসার সঙ্গে ওষুধও মিলেছে। আজ কেজরীবাল নিজে একে ‘কাম কি রাজনীতি’ বা ‘কাজের রাজনীতি’ আখ্যা দিয়েছেন। নিখরচায় দিনে পরিবার পিছু ৭০০ লিটার জল দিয়েছেন। ভোটের আগে শেষ বলে ছক্কার মতো কেজরীবাল ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ‘ফ্রি’ করে দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: বিভাজনকে হারিয়ে জন-প্রিয়তার রাজনীতির জয় দিল্লিতে

বিরোধীদের সমালোচনার মুখে মুখ্যমন্ত্রী যুক্তি দিয়েছিলেন, ‘‘বিনামূল্যে নানারকম সুবিধা অল্প পরিমাণে হলে অর্থনীতির জন্য ভাল। এতে গরিবদের সাশ্রয় হয়। হাতে টাকা থাকে। ফলে বাজারে কেনাকাটা বাড়ে।’’ জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক দ্বৈপায়ন ভটাচার্য বলেন, ‘‘এর মধ্যে একটা শ্রেণি রাজনীতিও রয়েছে। মানুষ এমনিতেই সরকারের থেকে সুবিধা পেতে চায়। কিন্তু সরকারি স্কুলে, মহল্লা ক্লিনিকে তো বড়লোক, মধ্যবিত্তরা যাচ্ছেন না। সরকারি স্কুলে পড়াশোনা ভাল হচ্ছে, ক্লিনিকে ভাল চিকিৎসা মিলছে বলে যদি গরিব মানুষের মনে বিশ্বাস তৈরি হয়, তা হলে ভোটে প্রভাব পড়বেই।’’

দেশে মাথা পিছু আয়ের নিরিখে দিল্লির স্থান গোয়ার পরেই। দিল্লিতে আর্থিক স্বাচ্ছল্য তুলনায় বেশি। দারিদ্রের মাত্রা কম। আপের নেতাদের মত, কেজরীবালের ফ্রি উপহারে সবচেয়ে বেশি লাভ হয়েছে ‘ঝুগ্গি-ঝোপড়ি’-র বাসিন্দাদের। দ্বৈপায়ন বলেন, ‘‘অর্থনীতির বেহাল অবস্থায় যখন চাকরি দূরের কথা, রোজগারের নিশ্চয়তা নেই, তখন এর গুরুত্ব আরও বেশি।’’

ভোটের ফলে ধাক্কা খেয়ে দিল্লির বিজেপি সাংসদ প্রবেশ বর্মা বলেছেন, দিল্লিবাসী ফ্রি উপহারের ঢেউয়ে ভেসে গিয়েছেন। পাশের রাজ্য হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজ আফশোস করেছেন, দিল্লিতে ‘মুফতখোরি’ জিতে গেল। গোয়ার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সবন্তের কথায়, ‘‘দিল্লির মানুষেরা বোধহয় এমন সরকার চেয়েছেন, যারা মানুষের করের টাকাতেই তাঁদের ফ্রি উপহার দেবে।’’

বাস্তব হল, বিজেপি নিজেও দিল্লিতে ভোটের ইস্তাহারে গরিবদের জন্য ২ টাকা কেজি দরে আটা, গরিব বাড়ির মেয়েদের জন্য ২ লক্ষ টাকা, কলেজ ছাত্রীদের জন্য স্কুটি, নবম শ্রেণির ছাত্রীদের জন্য সাইকেল, গরিব বিধবা মায়ের মেয়ের বিয়েতে ৫১ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দ্বৈপায়নের কথায়, ‘‘খয়রাতির প্রতিযোগিতায় সরকারি অর্থ অপচয় হয়। তার পরেও বলব, এ দেশে ধনীদের যে ভর্তুকি দেওয়া হয়, তার তুলনায় এ সব কিছুই নয়। ধনীদের বদলে গরিবদের সুবিধা দেওয়াটা বরং প্রগতিশীল নীতি।’’

উপহারের রাজনীতির শুরু দক্ষিণে, তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে। টেলিভিশন থেকে রান্নার সামগ্রী— ভোটের জন্য নানা উপহার বিলি হয়েছে সেখানে। কেজরীবাল দিল্লিতে কে কার ভোটার, তার মধ্যে ভেদাভেদ করেননি। ফ্রি-তে ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ, ৭০০ লিটার জলের ক্ষেত্রে গরিব-বড়লোক ভেদাভেদ করেননি। আপ প্রথম ক্ষমতায় এসেছিল ২০১৩-তে। পরের বছর, ২০১৪-১৫-য় বিদ্যুতে ভর্তুকি ছিল ২৯২ কোটি টাকা। চলতি বছরে তা ২ হাজার কোটি টাকা ছুঁইছুঁই। এ বছর ১৭৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বাকি রাজ্যগুলি যেখানে গড়ে মোট খরচের ১৪ শতাংশের মতো অর্থ শিক্ষায় খরচ করে, কেজরীবাল সেখানে ২৫ শতাংশের বেশি খরচ করেছেন। তা সত্ত্বেও দিল্লির রাজকোষ ঘাটতি একই থেকেছে। নতুন করও চাপাতে হয়নি। এর রহস্য কী? মুচকি হেসে কেজরীবালের জবাব, ‘‘আসলে বিনামূল্যে সুবিধা পরিমিত মাত্রায় হলে তার জন্য বাড়তি কর বসাতে হয় না।’’

Delhi Assembly Election 2020 Delhi Assembly Election Results 2020 Delhi Election Results Arvind Kejriwal AAP BJP

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।