সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের মুখ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম সামনে নিয়ে এসেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বিধানসভা ভোটগুলিতে ধাক্কা খাওয়ার পরে শিবসেনা, এসপি, আপ, আরজেডি, এনসিপি-র মতো শরিকদের মধ্যেও কংগ্রেস সম্পর্কে সমীহ কমেছে। ঘুরিয়েফিরিয়ে মমতার নাম বিরোধী মঞ্চের নেত্রী হিসাবে নিয়ে এসেছেন তাঁরাও। বাজেট অধিবেশন শুরুর মুখে এবং দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই চিত্রনাট্যে নয়া চমক। দিল্লির ভোটে আপ-কে সমর্থনের সিদ্ধান্ত আগেই জানিয়েছিল তৃণমূল। এ বার আপ-এর হয়ে প্রচারেও যোগ দিতে চলেছে তারা।
তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে, আপ-এর বাছাই করা তারকা প্রার্থীর জন্য প্রচার করবে তৃণমূল। আগামী মাসের ১ এবং ২ তারিখ তৃণমূলের লোকসভার সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হা আপ-এর তিন নেতার নির্বাচনী ক্ষেত্রে গিয়ে প্রচারসভা করবেন। এই তিন জন হলেন অরবিন্দ কেজরীওয়াল, মণীশ সিসৌদিয়া এবং অতিশী। দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে— দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রগুলিতে দাঁড়িয়ে শুধুমাত্র বিজেপিকেই আক্রমণ করবে না তৃণমূল, আক্রমণের নিশানায় থাকবে কংগ্রেসও।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ কি তা হলে ভেঙেই পড়ছে? না কি এই ঐক্যবন্ধন শুধুমাত্র লোকসভা ভোটের জন্যই, বিধানসভা ভোটে যার অস্তিত্ব নেই? না কি অকংগ্রেসি দলগুলিকে নিয়ে তৈরি হচ্ছে জিঞ্জার-গোষ্ঠী, যারা ‘ইন্ডিয়া’র রাশ হাতে রাখতে চাইছে? প্রশ্ন করা হলে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের বক্তব্য, “আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৩ সালের জুন মাসেই বলেছিলেন, যে রাজ্যে যে দল সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী, বাকি বিরোধীরা যেন সেই দলের প্রার্থীদের পাশে থাকে। বিজেপিকে হারানোর এটাই সেরা কৌশল। দিল্লিতে বিরোধী শক্তির মধ্যে অবশ্যই আপ শক্তিশালী। তা ছাড়া ‘ইন্ডিয়া’ ব্লকে একমাত্র তৃণমূলই সেই দল, যার সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও নির্বাচনী সমঝোতা নেই।”
রাজনৈতিক শিবির বলছে, এই প্রথম কোনও রাজ্যে তৃণমূল নিজে না লড়াই করলেও কংগ্রেসের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারে নামতে চলেছে। জাতীয় স্তরেও তার অভিঘাত রয়েছে। এখনও পর্যন্ত স্থির রয়েছে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে শত্রুঘ্ন সিন্হাই প্রচার করবেন আপ প্রার্থীদের হয়ে। হিন্দি ভাষায় তাঁর দখল, অভিনেতা হিসেবে সর্বভারতীয় পরিচিতিকে কাজে লাগাবেন কেজরীওয়ালরা। এর পরে আরও এক অথবা দু’জন তৃণমূল নেতা আসতে পারেন প্রচারে। এই বিষয়ে কোনও স্থির সিদ্ধান্ত এখনও নেননি দলীয় নেতৃত্ব। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, আপ-এর পক্ষ থেকে তৃণমূলের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছিল ভোটযুদ্ধে পাশে থাকার জন্য। মমতার সঙ্গে কেজরীওয়ালের ব্যক্তিগত সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই সুমধুর। স্বাভাবিক ভাবেই হাত বাড়িয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তবে প্রচারে যোগ দিতে তিনি নিজে আসছেন না।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)