প্রতীকী ছবি।
শহরে আপেক্ষিক আর্থিক সচ্ছলতার সুবাদে ছাত্রছাত্রীদের হাতে হাতে স্মার্টফোন। নেট-সংযোগও তুলনায় মসৃণ। গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ পড়ুয়ার স্মার্টফোন নেই। উপরন্তু সেখানে দ্রুত গতির নেট-সংযোগও দুর্লভ।
এই ধরনের পরিকাঠামোগত ফারাকের ফলে করোনাকালে শহরের পড়ুয়াদের থেকে গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই তথ্য উঠে এসেছে দেশের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সর্বভারতীয় সমীক্ষায়। এমনকি বিশেষজ্ঞদেরও বক্তব্য তা-ই। ওই সমীক্ষা রিপোর্ট জানাচ্ছে, নিয়মিত অনলাইন ক্লাস করছে, এমন পড়ুয়ার সংখ্যা শহরাঞ্চলে ২৪ শতাংশ। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে মাত্র আট শতাংশ পড়ুয়া নিয়মিত অনলাইন ক্লাস করছে।
সমীক্ষা চালাতে দেশের কয়েকটি নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়েছে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। প্রতিটি রাজ্যের বেশ কয়েকটি স্কুলের পড়ুয়াদের কাছ থেকে নেওয়া নানা তথ্যের ভিত্তিতে ওই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। সমীক্ষার সময়কাল করোনার শুরু থেকে গত অগস্ট পর্যন্ত।
সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, করোনা আবহে অনলাইন ক্লাস করতে না-পারায় পড়াশোনার সঙ্গে সম্পর্ক একেবারেই চলে গিয়েছে, শহরাঞ্চলে এমন পড়ুয়ার হার ১৯ শতাংশ, গ্রামাঞ্চলে ৩৭ শতাংশ। শেষ তিন মাসে কোনও পরীক্ষা দেয়নি, এই ধরনের পড়ুয়ার হার শহরাঞ্চলে ৫২ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলে ৭১ শতাংশ।
অনলাইন ক্লাস ছাড়াও টেলিভিশনে শিক্ষা, দূরভাষে শিক্ষা, রেডিয়োয় শিক্ষার মতো নানা ধরনের ক্লাস চালু করেছিল সরকার। ওই সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, সেই সব ক্লাসের উপরে নয়, প্রাইভেট টিউশনের উপরেই ভরসা করেছে বহু পড়ুয়া। সার্বিক ভাবে শহরাঞ্চলে অনলাইন ক্লাস করছে ৩১ শতাংশ পড়ুয়া। সেখানে প্রাইভেট টিউশন নিচ্ছে ৩০ শতাংশ। আবার নিয়মিত ও অনিয়মিত মিলিয়ে গ্রামাঞ্চলে অনলাইন ক্লাস করছে মোট ১৬ শতাংশ পড়ুয়া এবং প্রাইভেট টিউশনে ভরসা করছে ১৮ শতাংশ ছাত্রছাত্রী। যার অর্থ, গ্রামাঞ্চলে অনলাইন ক্লাসের থেকে টিউশনের উপরে ভরসা করেছে বেশি সংখ্যক পড়ুয়া।
তবে শহর থেকে গ্রাম, সর্বত্রই পড়ুয়াদের দাবি, স্কুল খুলুক। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, স্কুল খোলার পক্ষে মত দিয়েছে শহরের ৯১ শতাংশ এবং গ্রামের ৯৭ শতাংশ পড়ুয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনাকালে গ্রামের পড়ুয়ারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই তারাই বেশি করে চাইছে, স্কুল অবিলম্বে খোলা হোক। “অধিকাংশ গ্রামে নেট সংযোগ খারাপ। অনলাইন ক্লাস হবে কী করে,” প্রশ্ন হাওড়ার ডোমজুড়ের কেশবপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপক দাসের।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির সম্পাদক তরুণ নস্কর বলেন, “ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ স্কুল খোলার পক্ষে মত দিয়েছে। তারা জানাচ্ছে, কোভিড স্কুলপড়ুয়াদের ক্ষেত্রে বিপদ নয়। স্কুল দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় পড়ুয়াদের মধ্যে মানসিক সমস্যাও তৈরি হচ্ছে।”
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর বক্তব্য, পড়ুয়ারা তো দোকান-বাজার থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই যাচ্ছে। এমনকি টিউশনও নিচ্ছে অফলাইনে। অধিকাংশ অভিভাবকই স্কুল খোলার পক্ষে। বিশেষ করে গ্রামের দিকে যেখানে নেটওয়ার্কের জন্য অনলাইন ক্লাস ঠিকমতো হয় না, সেখানে তো প্রাইভেট টিউশনের উপরে পড়ুয়াদের অনেকটাই নির্ভর করতে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy