আইন বলছে, আধারের সঙ্গে নাগরিকত্বের কোনও সম্পর্ক নেই। আইনজীবীরা বলছেন, আধার নিয়ে রাজ্যের হাতে কোনও ক্ষমতা নেই। আধারের নিয়ম বলছে, এক বছরের মধ্যে ১৮২ দিনের বেশি ভারতে থাকলে যে কোনও দেশের মানুষই আধার কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন। অসম সরকার বলেছে, আধার কার্ডের সঙ্গে এনআরসি-র কোনও সম্পর্ক নেই। সুপ্রিম কোর্ট বলছে, যত ক্ষণ না আরজিআই স্বীকৃতি দিচ্ছে, তত ক্ষণ অসমের এনআরসি স্বীকৃতই নয় এবং সবচেয়ে বড় কথা অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বারবার বলেছেন, এই এনআরসি তিনি মানেন না। অথচ সেই হিমন্তই ঘোষণা করলেন, এনআরসি-তে আবেদন না করলে মিলবে না আধার! যা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।
হিমন্ত জানিয়েছেন, এখন থেকে আধারে অনুমোদন দেওয়ার আগে ঠিকানা-পরিচয় যাচাই করা হবে। দেখা হবে, আবেদনপত্রের সঙ্গেও এনআরসি আবেদনের নম্বর আছে কি না ও আবেদনকারী বা তাঁর বাবা-মা এনআরসির জন্য আবেদন করেছিলেন কি না। রাজ্য সরকার ৪৫ দিনের মধ্যে আবেদনপত্র গ্রাহ্য বা অগ্রাহ্য হওয়ার বিষয়টি অনলাইনে জানাবে। পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে তৈরি হবে রাজ্যের এসওপি।
অসমে আধার ও এনআরসি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব বলেন, “আদালত বলছে আরজিআই নোটিফাই করলে তবেই এনআরসি মান্যতা পাবে। খোদ হিমন্ত বারবার বলেছেন, এই এনআরসি তিনি মানেন না। আজ সেই এনআরসি-র আবেদনকেই কী ভাবে তিনি আধার পাওয়ার শর্ত বলে নিয়ম চালু করলেন?”
এনআরসি ও আধার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চালানো বরিষ্ঠ আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেবের মতে, আধারের আইন বলছে, ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৮২ দিনের বেশি ভারতে থাকলেই আধার পাওয়া সম্ভব। রাজ্য আলাদা নিয়ম বানাতেই পারে না। তা ছাড়া অসমে আধার ও এনআরসির বিষয়টি এখনও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। এই পরিস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত আইন ও সংবিধান বিরোধী।
কংগ্রেসের মতে, এনআরসির বিষয়টি গত ছ’বছর ধরে ঝুলে রয়েছে। ১৯ লক্ষাধিক মানুষের ভাগ্য অনিশ্চিত। তা সমাধানের বদলে রাজনীতির স্বার্থে বিষয়টিকে আরও জটিলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন হিমন্ত। নাগরিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির রাজ্য সহ-সভাপতি অভিজিৎ মজুমদার বলেন, এই সরকারের কাজই হল বিভাজন ও মেরুকরণের রাজনীতি দিয়ে মানুষের নজর ঘোরানো। তাই বেআইনি ও অসাংবিধানিক জেনেও এমন সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন হিমন্ত।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)