Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Jairam Ramesh

কাজের সন্ধানে ইজ়রায়েলমুখী, কেন্দ্রকে তোপ কংগ্রেসের

ইজ়রায়েলে নির্মাণ শ্রমিক হতে ২৫ থেকে ৪৫ বছর বয়স এবং তিন বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকলেই চলছে। কাজ মূলত নির্মাণ, সেরামিকের টালি বসানো, ধাতু ঝালাই এবং কাঠের।

jairam ramesh

জয়রাম রমেশ। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:১১
Share: Save:

গত কাল দ্য হেগ-এর আন্তর্জাতিক আদালত তার অন্তর্বর্তী রায়ে গণহত্যা থামাতে বলেছে ইজ়রায়েল সরকারকে। বিপদ জেনেও যুদ্ধে বিধ্বস্ত সেই দেশে যেতে মরিয়া হয়ে ওঠা ভারতীয় শ্রমিকদের জন্য ‘ন্যায়’ চেয়ে মোদী সরকারকে তোপ দাগল কংগ্রেস। আর পাঁচ দিন পরে, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রের বর্তমান বিজেপি সরকারের শেষ বাজেট। তার আগে, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এবং দলের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের আজ এক্স হ্যান্ডলে অভিযোগ, বিজেপির আমলে দেশে আর্থিক দুরবস্থার জন্য দেশে কোনও কাজ নেই। তাই কাজের খোঁজে হন্যে হয়ে থাকা মানুষ জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত নিতে প্রস্তুত।

গাজ়ায় যুদ্ধ শুরুর আগে, গত বছর মে মাসে ইজ়রায়েলে ৪২ হাজার ভারতীয় নির্মাণ শ্রমিক ও নার্স নিয়োগের ব্যাপারে দু’দেশের চুক্তি হয়েছিল। ইজ়রায়েলের ভারতীয় দূতাবাসের ওয়েবসাইটের দেওয়া ঠিক এক বছর আগের তথ্য অনুযায়ী, পরিযায়ী হয়ে প্রায় ১৮ হাজার ভারতীয় ইজ়রায়েলে রয়েছেন। মূলত বয়স্কদের দেখাশোনার কাজে বা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার চাকুরে হিসেবে নয়তো হিরের ব্যবসার জন্য বা ছাত্রছাত্রী হিসেবে। গত অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পরে প্যালেস্টাইনিদের কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছে ইজ়রায়েল। তা ছাড়াও, দেশ ছেড়ে যাওয়া, যুদ্ধে ডাক পাওয়া বা উদ্বাস্তু হয়ে পড়া প্রচুর মানুষের শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে। আমেরিকার এক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের দাবি, প্রায় ৯০ হাজার প্যালেস্টাইনি কর্মীর শূন্যস্থান পূরণের লক্ষ্য নিয়ে ভারতের দ্বারস্থ ইজ়রায়েল সরকার।

কেন্দ্রের ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল (এনএসডিসি) এবং পপুলেশন অ্যান্ড ইমিগ্রেশন অথরিটি ইজ়রায়েলে কর্মখালির জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারভিউ নেওয়ার সূচি দিয়েছে। লোকসভা ভোটের মুখে তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি মাস জুড়ে বিজেপি-শাসিত দুই রাজ্য, উত্তরপ্রদেশ এবং হরিয়ানার প্রায় কুড়িটি জায়গায় সাড়ে চার হাজারেরও বেশি লোকের ওই ইন্টারভিউ দেওয়ার কথা। গত ডিসেম্বরে হরিয়ানা কুশল রোজগার নিগম ইজ়রায়েলে দশ হাজার নির্মাণশ্রমিক চেয়ে কর্মখালির বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। রোহতকের তেমনই একটি শিবিরে এক সপ্তাহ ধরে রোজ গড়ে পাঁচশো-ছ’শো লোক ইন্টারভিউ দিয়েছেন বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।

ইজ়রায়েলে নির্মাণ শ্রমিক হতে ২৫ থেকে ৪৫ বছর বয়স এবং তিন বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকলেই চলছে। কাজ মূলত নির্মাণ, সেরামিকের টালি বসানো, ধাতু ঝালাই এবং কাঠের। প্রতি মাসে বেতন ভারতীয় মুদ্রায় ১.৩৭ লক্ষ টাকা। বিভিন্ন শিবিরে লাইন দেওয়া শ্রমিকদের মুখে মুখে ফিরছে একটাই কথা, ‘‘সারা মাসের কাজ, লাখ টাকা বেতন।’’ এ দিকে, ইজ়রায়েলে প্যালেস্টাইনিদের কাজ যাওয়ার পাশাপাশি তাইল্যান্ড থেকে আসা হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে যাচ্ছেন। শূন্যস্থান হচ্ছে তাতেও। ইজ়রায়েল সরকার আগামী কয়েক মাসে দশ থেকে কুড়ি হাজার ভারতীয় পরিযায়ী শ্রমিকের পথ চেয়ে রয়েছে বলে আমেরিকার একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

গত নভেম্বরে বড় বড় শ্রমিক সংগঠনগুলি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি বিবৃতি দিয়ে। গাজ়ার যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মানবিক এবং নৈতিক কারণে ভারতীয়দের ইজ়রায়েলে কাজ করতে না পাঠানোর জন্য তারা আর্জি জানিয়েছিল কেন্দ্রকে। তার আগে, অক্টোবরে রাষ্ট্রপুঞ্জে আনা ওই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যে ১৪টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল, ভারত তাদের মধ্যে অন্যতম। গত এক দশকে মোদী সরকারকে ইজ়রায়েলের দিকে ঝুঁকতে লক্ষ করা গিয়েছে। বিরোধীদের দাবি, এর মধ্যে ইজ়রায়েলে শ্রমিক পাঠিয়ে প্যালেস্টাইনিদের কর্মচ্যুত করার অভিযোগে আন্তর্জাতিক পরিসরে অপ্রস্তুত হতে পারে ভারত।

আজ বিকেলে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘প্যালেস্টাইনিদের বদলি হিসেবে উত্তরপ্রদেশ আর হরিয়ানার প্রচুর যুবক বিশেষ ভাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইজ়রায়েলে যেতেই উৎসাহী।’ তাঁর বক্তব্য, ‘আন্তর্জাতিক আদালতের গত কালের রায়ের নৈতিক, আদর্শগত এবং রাজনৈতিক দিকগুলি যদি সরিয়েও রাখা হয়, আমাদের দেশের ভয়াবহ বেকারত্ব ফুটে উঠছে। এটা কি প্রচুর কর্মসংস্থানের দাবিকে উপহাস করছে না?’ কেন এমন পরিস্থিতি, সেই প্রশ্ন তুলে খড়্গে তাঁর পোস্টে গ্রামীণ এলাকার অর্থনৈতিক দুরবস্থা, স্থায়ী কর্মসংস্থান না থাকায় একশো দিনের কাজের চাহিদা বাড়তে থাকা এবং ওই প্রকল্পেই সরকারি বরাদ্দ কমানো, পঞ্চায়েত স্তরে বরাদ্দে টান, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের আকাশ ছোঁয়া দাম, করের অসাম্যের মতো বিভিন্ন কারণের উল্লেখ করেছেন। তাঁর কটাক্ষ, ‘সাধারণ মানুষের যে ভোগান্তি ক্ষমতামত্ত বিজেপি তৈরি করেছে, আসন্ন বাজেটে তার কোনও প্রতিবিধান কি তারা করবে?’

সম্প্রতি হরিয়ানার রোহতকের শিবিরে বিহার থেকে আরও জনা চল্লিশ শ্রমিকের সঙ্গে এসেছিলেন বছর তেতাল্লিশের প্রমোদ শর্মা। শীতের তিনটি রাত বাসের ভিতরে কোনও রকমে ঘুমিয়ে কাটাতে হয়েছে। তাঁর কথায়, “এমন সুযোগ জীবনে বারবার আসে না।” প্রমোদ আগে কাজ করতেন দিল্লিতে। কোভিডে ২০২০ সালে বেকার হয়ে পড়েন। ইদানীং মাঠে পাঁচ ঘণ্টা কাজ করে দিনে আড়াইশো টাকা মতো জোটে। ঘরে স্ত্রী, দুই সন্তান, বোন। ইজ়রায়েলে কাজ করে সন্তানদের শিক্ষা থেকে বোনের বিয়ে, সব কিছুর সহজেই হয়ে যাবে বলে তাঁর আশা।

রোহতকে লাইনে দেখা গেল গত বছর সৌদি থেকে কাজ করে ফেরা চল্লিশ ছুঁইছুঁই শিব প্রকাশকে। তাঁর বক্তব্য, ইজ়রায়েলে বেতন আগের জায়গার থেকে প্রায় তিন গুণ বেশি। বারো ঘণ্টা প্লাস্টারের কাজ করে হরিয়ানার পানিপতের বিকাশ কুমার মাসে হাজার দশেক টাকা আয় করেন। বছর বত্রিশের ওই যুবকের আশা, ইজ়রায়েলে কাজে গেলে ছ’জনের সংসারে টানাটানি কেটে যাবে।

শুধু এমন নির্মাণ শ্রমিকেরাই নন, ইজ়রায়েলে যাওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন উচ্চ শিক্ষিত যুব প্রজন্মও। হরিয়ানার একটি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের চূড়ান্ত বর্ষের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া শচীন তাঁদেরই এক জন। তিনিও ইন্টারভিউ দিয়েছেন। বলছিলেন, “মাথার উপর দিয়ে রকেট ওড়ে, এমন জায়গায় কেউই যেতে চায় না। কিন্তু ভারতে কতটুকুই বা আর সুযোগ রয়েছে!”

শিবিরগুলির আয়োজন হচ্ছে যে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন মন্ত্রকের উদ্যোগে, সেটির দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এ সবের মধ্যেই আজ মুম্বইয়ে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, “নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী যুব প্রজন্মকে নিজের জন্য কাজের খোঁজের বদলে অন্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে উদ্যোগী হতে হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Jairam Ramesh Congress PM Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy