প্রতীকী ছবি।
জ্বর? সর্দি-কাশি? পেটের অসুখ? অন্য কোনও অসুস্থতা বা জটিল ব্যাধি?
নিয়ম অনুসারে ডাক্তারের কাছে যাওয়াই দস্তুর।
কিন্তু এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যেতে হলে নিজের ঠিকুজি-কুষ্ঠি সঙ্গে রাখতে হবে। তা না থাকলেও চিন্তা নেই। হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসক হাতের রেখা, জন্মকুণ্ডলী দেখে রোগ এবং তার গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান ও রাশি বিচার করে প্রতিকারের উপায় বাতলে দেবেন! দেবেন ওষুধও।
বিহারের দারভাঙার সরকারি আয়ুর্বেদিক কলেজে এমন চিকিৎসাই শুরু হয়েছে। তার জন্য সদ্য চালু হওয়া আউটডোরে ডাক্তার বসছেন। কয়েক জন রোগীও এসেছেন গত কয়েক দিনে। চমকে উঠলেও
সরকারি এই হাসপাতালের অধ্যক্ষের দাবি, লুপ্ত হয়ে যাওয়া অতি প্রাচীন এই চিকিৎসা বিধি তাঁরাই এ দেশে প্রথম চালু করলেন।
বিহারের সরকারি আয়ুর্বেদিক কলেজের এমন অদ্ভুত চিকিৎসা পদ্ধতি চালুর খবরে স্তম্ভিত চিকিৎসকমহল। তাঁদের বক্তব্য, এই ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি ‘অবৈজ্ঞানিক’ এবং ‘নীতিবিরোধী’। এই ধরনের চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হলে তাকে জ্যোতিষের দোহাই দিয়ে পার পেয়ে যাবেন সংশ্লিষ্ট ‘ডাক্তার’।
কিন্তু এমন সব অভিযোগের কথা মানতে নারাজ দারভাঙার সরকারি আয়ুর্বেদিক কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ দীনেশ্বর প্রসাদ। পটনা থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, ‘‘প্রাচীন এই চিকিৎসা পদ্ধতি বহু যুগ আগে এ দেশে প্রচলিত ছিল। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের ধাক্কায় তা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল। আমাদের হাসপাতাল সেই পদ্ধতিকেই ফিরিয়ে এনেছে।’’ হাতের রেখা, জন্মকুণ্ডলী বিচার করে, গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান দেখে শরীরের বিভিন্ন রোগ নির্ণয় এবং তার নিরাময় সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি। কিন্তু কী ধরনের ওষুধ তাঁরা দেন? দীনেশ্বর প্রসাদের বক্তব্য, পঞ্চগব্য, ধাতু বা বিভিন্ন প্রাণীর দেহাংশ থেকে তৈরি ওষুধ দেওয়া রোগীদের। তবে তার জন্য খতিয়ে দেখা হয় অনেক কিছুই।
বিহারের সরকারি আয়ুর্বেদিক হাসপাতালের এমন চিকিৎসা পদ্ধতিতে বেশ অবাক কলকাতার আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক অবন্তিকা পাল। এমন পদ্ধতি ‘অপবিজ্ঞান’ বলে মন্তব্য করে তিনি জানান, এ সবের পিছনে গবেষণা নয়,
রয়েছে রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েকশোবছর আগে ভারত-সহ বিশ্বের নানা দেশেই এই মেডিক্যাল অ্যাস্ট্রোলজি চিকিৎসা পদ্ধতি চালু ছিল। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতি প্রমাণ করেছে, এর কোনও ভিত্তি নেই। ফলে এগুলো লুপ্ত হয়ে গিয়েছে স্বাভাবিক বিজ্ঞানের নিয়মেই। এখন রাজনৈতিক কারণেই এগুলোকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। তার বদলে প্রকৃত আয়ুর্বেদ গবেষণাকে সরকার সাহায্য করলে মানুষ উপকৃত হতেন।’’
কলকাতার ক্যান্সার-বিশেষজ্ঞ সোমনাথ সরকার একে সরাসরি ‘বেআইনি ও অনৈতিক’ বলে দাবি করে বলেন, ‘‘ঐতিহ্যশালী একটা হাসপাতালের পক্ষে এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা। ভবিষ্যতের জন্যও খুব খারাপ উদাহরণ।’’ তাঁর বক্তব্য, আয়ুর্বেদ একটা বহু প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতি। তার নাম করে এ সব অপবিজ্ঞান মানা যায় না।
ক্ষুব্ধ চিকিৎসকমহলের একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার আসার পর থেকে অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি চালু করার চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি তাতে মদতও দিচ্ছে।
যে দেশে খোদ প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর দল ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা হাততালি দিয়ে, থালা বাজিয়ে, মোমবাতি জ্বালিয়ে করোনা তাড়ানো, গোবর-গোমূত্রে রোগ সারানো বা অননুমোদিত ওষুধ বা পাঁপড়কে করোনার দাওয়াই বলে জনসমক্ষে প্রচার করেন, সে দেশে এই ধরনের অপবিজ্ঞান আরও দেখা যাবে। এবং সেটাই উদ্বেগের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy