Advertisement
E-Paper

ঢাকার প্রস্তাব দ্বিধায় দিল্লি

সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং জঙ্গিবাদের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলির প্রধান তুলসী গাবার্ড দিল্লিতে এসে যে ভাষায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তাতে যথেষ্ট চাপে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।

মুহাম্মদ ইউনূস।

মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৫ ১০:২২
Share
Save

সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং জঙ্গিবাদের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে আমেরিকা এবং ভারতের যৌথ চাপের মুখে ঢাকা। ভাবমূর্তি উদ্ধারের লক্ষ্যে এপ্রিলের গোড়ায় ব্যাঙ্ককে বিমস্টেক সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদী এবং মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে একটি পার্শ্ববৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা। বিষয়টি নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি নয়াদিল্লি। আজ সাউথ ব্লকের সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, “প্রত্যেক দিন গালি দেওয়া হবে, আবার বৈঠকও হবে— দু’টি বিষয় কী করে এক সঙ্গে চলতে পারে? এখনও পর্যন্ত এই বৈঠক হওয়া খুবই কঠিন বলে মনে হচ্ছে। তবে এখনও দু’সপ্তাহ বাকি। এর মধ্যে অনেক কিছু ঘটতে পারে। এখনই চূড়ান্ত কথা বলা যাচ্ছে না।”

সাউথ ব্লক সূত্রের বক্তব্য, বিষয়টি নিয়ে সরকারের নিজের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের একটা বড় অংশ মনে করছে, আলোচনার প্রস্তাব একেবারে প্রত্যাখ্যান করা হলে সে দেশে ভারত-বিরোধিতা আরও বাড়তে পারে কি না— তা আগে খতিয়ে দেখা হোক। সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন কমাতে ইউনূসকে চাপ দেওয়া যেতে পারে এক টেবিলে মুখোমুখি বসে। চিন এবং পাকিস্তান যে ভাবেভারত-বিরোধী প্রভাব তৈরি করতে ঢাকাকে ব্যবহার করছে, তাকেও প্রশমিত করা সম্ভব। পাশাপাশি ভারতের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার মনোভাব, বাংলাদেশ চাইল বলেই বসে যাওয়ার মতো কোনও কারণ ঘটেনি। তারা ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছে নিয়মিত। সাউথ ব্লকের দেওয়া নাশকতা এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি হিংসার কোনও তথ্যই মানতে চাইছে না। এখনও আলোচনার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি।

সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং জঙ্গিবাদের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলির প্রধান তুলসী গাবার্ড দিল্লিতে এসে যে ভাষায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তাতে যথেষ্ট চাপে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। উপমহাদেশে ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলতেপাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে দহরম-মহরম বাড়াচ্ছে মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার, ওয়াকিবহাল মহলের দাবি— যে সরকারের রাশ আসলে মৌলবাদী স্বাধীনতা-বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর হাতে। তুলসী গাবার্ড কড়া ভাষায় উদ্বেগ প্রকাশের পরে এ বার ভাবমূর্তি উদ্ধারে এই সরকার কিছু পদক্ষেপ করার কথা ভাবছে। কিছু জঙ্গিকে আটক করা এবং ভুয়ো মামলায় কারাবন্দি বিপক্ষের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে ইদের আগে সরকার জামিনে মুক্তি দিতে পারে বলে খবর ঘুরছে ঢাকায়।

তুলসীর বাংলাদেশ নিয়ে সতর্কবার্তা উচ্চারণের পরে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের প্রেস উইং পাল্টা বিবৃতিতে তার একটা জবাব দেয়। ইউনূসের দফতর দাবি করে, সংবাদ মাধ্যমের একাংশের ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আমেরিকার গোয়েন্দাপ্রধান সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে দুষেছেন। তাঁর মন্তব্যে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। তবে ঢাকার বিবৃতিতে সংখ্যালঘু নির্যাতন‌ের বিষয়টি মিথ্যা প্রমাণ করতে যত শব্দ খরচ করা হয়েছে, সন্ত্রাসের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে ততটা হয়নি। আমেরিকার বিদেশ দফতরের সাংবাদিক বৈঠকে মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এ দিন এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেন— বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট তাঁদের উদ্দেশ্য নয়। শ্রীমতী ব্রুস বলেন, “আমরা বিশ্বের যে কোনও দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে হিংসা ও অত্যাচারের নিন্দা করি এবং বাংলাদেশে সকলের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার যে সব ব্যবস্থা নিয়েছেন তাকে সাধুবাদ জানাই। এটাই আমরা দেখছি। এটাই আমরা প্রত্যাশা করি এবং এটা চলবে বলে মনে করি।”

ইউনূস সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বাংলাদেশে ‘সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কবর দিয়ে’ আফগানিস্তানে তালিবানের ধাঁচে খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিতে সরব হয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর ও কয়েকটি মৌলবাদী সংগঠন। নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও পুলিশের সামনেই তারা ঢাকার রাস্তায় নিয়মিত সমাবেশ ও সাংবাদিক বৈঠক করছে। কোথাও কোথাও তাদের কর্মসূচিতে পুলিশি পাহারাও দেখা গিয়েছে। জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানও সম্প্রতি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, তাঁদেরও আসল উদ্দেশ্য বাংলাদেশে ইসলামি শাসন চালু করা। তুলসী এই বিষয়টি উল্লেখ করে বল‌ছেন, জঙ্গিদের এই খিলাফত প্রতিষ্ঠার বিষয়টি ভারত, বাংলাদেশ, সিরিয়া, আমেরিকা-সহ গোটা বিশ্বের কাছে একটা উদ্বেগের কারণ হয়েছে। তিনি বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপসহীন।”

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের পাশাপাশি মোদী-ইউনূস বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছিল ঢাকা। কিন্তু তা হয়নি। নয়াদিল্লি জানিয়েছিল, নিউ ইয়র্কে একই সময়ে গেলেও মোদী সাধারণ পরিষদে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেননি, করেছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জযশঙ্কর। মোদী গিয়েছিলেন কোয়াড-এর শীর্ষ বৈঠকে। সেই সফরে ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের সময় বার করা সম্ভব নয়। এর পরে জয়শঙ্কর বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

বিমস্টেকে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হোক বা না হোক, ইউনূস মঙ্গলবার বলেছেন— “কক্সবাজারে প্রস্তাবিত একটি বন্দর হলে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলেও পণ্য পাঠানো হব‌ে।” এত দিন উত্তরপূর্বাঞ্চলকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুঙ্কার দিয়েছে তাঁর কিছু উপদেষ্টা ও অনুগত ছাত্রনেতা। এই প্রথম সদর্থক কথা বললেন ইউনুস। তাঁর প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ দিন নিয়মিত সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভাল চলছে।” তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের এই ৭ মাসে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আরও বেড়েছে। তবে ভিসার বিষয়ে কিছু জটিলতা আছে। সে বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। কিন্তু আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই।” শফিকুল অবশ্য ২৬ মার্চ ইউনূসের চিন সফরের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়েই ভারতের বিষয়টি তোলেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

dhaka Central Government

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}