নিজাম প্য়ালেসের সামনে ধর্নায় তৃণমূল সমর্থকেরা। ছবি পিটিআই।
পশ্চিমবঙ্গে ভোটকালীন হিংসার দিকে আঙুল তুলে বিজেপি দাবি করছিল, রাজ্যে আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে। এ বার নিজাম প্যালেসে মুখ্যমন্ত্রীর ধর্না ও তৃণমূল সমর্থকদের বিক্ষোভের পরে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, এতে দেশের সামনে স্পষ্ট হয়ে গেল, সিবিআইকে হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে কাজ করতে গেলেও রাজনৈতিক বাধার মুখে পড়তে হয় আর সোমবার রাতে কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে বিষয়টি নথিবদ্ধ হয়েছে বলে তাঁদের দাবি।
তৃণমূল নেতৃত্ব প্রথম থেকেই অভিযোগ তুলছে, বিজেপি ভোটে হেরে গিয়ে রাজ্যে অরাজকতা তৈরি করে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে চাইছে। মন্ত্রীদের গ্রেফতার করা সেই প্রতিহিংসামূলক পরিকল্পনার অঙ্গ।
কিন্তু বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতে, তাঁরা এত দিন আইনের শাসন ভেঙে পড়ছে বলে অভিযোগ তুলছিলেন। কলকাতা হাই কোর্ট কার্যত তাঁদের অভিযোগেই সিলমোহর বসিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সিবিআই অফিসে ধর্নায় বসে অফিসারদের উপরে চাপ তৈরি করেছেন। ধৃতদের জামিনের শুনানি চলাকালীন আদালতে বসে থেকে রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক আদালতের উপরেও চাপ তৈরির চেষ্টা করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, ধৃত মন্ত্রী-নেতাদের জামিনের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়ে তাই হাই কোর্ট জানিয়েছে, ‘যে ভাবে চাপ তৈরির চেষ্টা হয়েছে, তাতে মানুষের মনে আইনের শাসন সম্পর্কে আস্থা জাগাবে না।’ নেতারা এ-ও বলছেন, সিবিআইয়ের তদন্তে বাধা ও আদালতের উপরে চাপ তৈরি করার চেষ্টা হয়েছে বলেই হাই কোর্ট নারদ মামলা অন্যত্র
সরিয়ে নেওয়ার আর্জি বিবেচনায় রাজি হয়েছে।
বিজেপির সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষের দাবি, “হাই কোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর কাজকর্মের কড়া সমালোচনা করেছে।’’ তাঁর বক্তব্য, গুজরাতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় অমিত শাহকে যখন সিবিআই গ্রেফতার করেছিল, তখন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী কিছুই করেননি। শাহের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে বলেছিলেন, শাহ নিজের মতো আইনি লড়াই করবেন।
তৃণমূল শিবিরের অভিযোগ, মোদী সরকার তথা বিজেপি প্রথম থেকেই রাজনৈতিক ছক কষে সিবিআইকে মাঠে নামিয়েছে। তৃণমূলের অভিযুক্ত নেতাদের অন্যতম আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি রাজ্যপালের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে কি না, তা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সিবিআই আইনজীবীদের পাল্টা যুক্তি, সংবিধানের ১৬৩ ও ১৬৪ অনুচ্ছেদে রাজ্যপালের এই ক্ষমতা রয়েছে। ফিরহাদরা এখন বিধায়ক বলে রাজ্যপাল অনুমোদন দেননি। অপরাধের সময় তাঁরা রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন বলে রাজ্যপাল অনুমোদন দিচ্ছেন।
সিবিআইয়ের একটি সূত্রের বক্তব্য, অতীতে তামিলনাড়ু, বিহারের রাজ্যপালেরা মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা, লালুপ্রসাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে আইনি প্রক্রিয়া শুরুর অনুমোদন দিয়েছিলেন। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কংগ্রেসের এ আর আন্তুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। তিনি পদত্যাগ করার পরে রাজ্যপাল ‘প্রসিকিউশন স্যাংশন’ দিয়েছিলেন। মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে রাজ্যের মন্ত্রিসভা ‘প্রসিকিউশন স্যাংশন’ দেয়নি। কিন্তু রাজ্যপাল দেন। সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি সন্তোষ হেগড়ের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চ রাজ্যপালের সিদ্ধান্তে সিলমোহর বসিয়েছিল। শীর্ষ আদালতের মত ছিল, যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার অনুমোদন না দিতে চাইলে রাজ্যপালের হাতে সেই ক্ষমতা থাকা দরকার। না হলে আইনের শাসন ভেঙে পড়বে।
সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, “সোমবারের ঘটনায় প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের কাছে প্রসিকিউশন স্যাংশন চাওয়া হলেও মন্ত্রিসভা তাতে সায় দিত না। তাই রাজ্যপালের কাছে অনুমোদন চেয়ে সিবিআই ঠিক করেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy