কর্নাটক হারের পরে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ের মতো ভোটমুখী রাজ্যের মুষড়ে পড়া কর্মীদের চাঙ্গা করতে তৎপর হল বিজেপি। ফাইল চিত্র।
কর্নাটক হারের পরে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ের মতো ভোটমুখী রাজ্যের মুষড়ে পড়া কর্মীদের চাঙ্গা করতে তৎপর হল বিজেপি।
কর্নাটকে দলের পর্যুদস্ত হওয়া রীতিমতো ধাক্কা দিয়েছে বিজেপিকে। মুষড়ে পড়েছেন কর্মীরা। তাই দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে ভোটমুখী রাজ্যে দ্রুত কার্যনির্বাহী বৈঠক সেরে ফেলে নতুন উদ্যমে মাঠে নামতে চাইছে দল। এর মধ্যে গত কাল মধ্যপ্রদেশে দলের কার্যনির্বাহী বৈঠক হয়। মাস তিনেকের মধ্যে ওই রাজ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। বিজেপি সূত্রের মতে, কাল ওই বৈঠকে বিজেপি কর্মীদের দলকে বিধানসভার প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়ার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। বৈঠকে শিবরাজ বলেন, কর্নাটকে বিজেপি নিজের ভোট ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু যে হেতু জেডিএস-এর ভোটের একটি বড় অংশ কংগ্রেসে গিয়েছে, তাই সিদ্দারামাইয়াদের জয় সম্ভব হয়েছে। কিন্তু মধ্যপ্রদেশে তেমন কোনও আঞ্চলিক দল নেই, যার ভোট পেতে পারে কংগ্রেস। রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি লড়াই হবে বিজেপির। দলীয় কর্মী-নেতাদের সমস্ত ধরনের অন্তর্দ্বন্দ্ব ভুলে তাই মাঠে নেমে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়ার অভিমুখ ঘোরাতে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজকে সামনে রেখে গোটা রাজ্য জুড়ে সফর করার পরিকল্পনানিয়েছে দল।
পার্শ্ববর্তী ছত্তীসগঢ়ে এ বার কংগ্রেসকে হটিয়ে ক্ষমতায় ফেরার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিজেপি। দল ওই রাজ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহকে সামনে রেখে এগোনোর পরিকল্পনা নিয়েছে। সূত্রের মতে, ওই রাজ্যে দু’হাজার কোটি টাকার যে আবগারি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেই বিষয়টি সামনে রেখে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রচারের পরিকল্পনা নিয়েছে দল। ওই রাজ্যের কার্যনির্বাহী বৈঠকেও কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে পথে নামার জন্য দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দেন রমন সিংহ। রাষ্ট্রপতি হিসাবে জনজাতি সমাজের প্রতিনিধি দ্রৌপদী মুর্মুর নিয়োগের বিষয়টিজনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচারের পরিকল্পনা নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
রাজস্থানেও ক্ষমতা ফিরে পেতে মরিয়া বিজেপি নেতৃত্ব। ওই রাজ্যে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ দলীয় দ্বন্দ্বের কারণে জেতার সম্ভাবনা যথেষ্ট বলে মনে করছে বিজেপি। ওই রাজ্যে কংগ্রেস সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদে দলীয় কর্মীদের আগামী মাস থেকে পথে নামার নির্দেশ দিয়েছে দল। দলের এক নেতার কথায়, “কর্নাটকের হারের ধাক্কা কম-বেশি সব রাজ্যেই পড়েছে। ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে দলীয় কর্মীরা কিছুটা হলেও মুষড়ে পড়েছেন। তাঁদের চাঙ্গা করতে রাজস্থানে আগামী মাস থেকে সরকারের বিভিন্ন জনবিরোধী নীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণআন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
কর্নাটকের হারের পরে দলের পর্যবেক্ষণ হল, কংগ্রেসের জেতার পিছনে দলের দেওয়া ভোট প্রতিশ্রুতি একটি বড় কারণ। মানুষ কংগ্রেসের দেওয়া প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বাস করে তাঁদের ক্ষমতায় এনেছে। তাই নরেন্দ্র মোদী বিভিন্ন জনসভায় পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হলেও, ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রদেশে দলের কার্যনির্বাহী বৈঠকে শিবরাজ সিংহ উচ্চমাধ্যমিক স্তরে মেধা তালিকায় শীর্ষে থাকা পড়ুয়াদের ই-স্কুটি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি জিতে এলে কর্নাটকের ধাঁচে ডিগ্রি ও ডিপ্লোমাধারীদের জন্য বেকার ভাতা, কৃষকদের ডিজ়েলে ভর্তুকি, মহিলাদের আর্থিক সাহায্য দেওয়া যায় কি না, তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন শিবরাজ। পাঁচ বছর আগে রাজস্থানে কৃষকদের ঋণ মাফ ও বেকার ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কংগ্রেসের অশোক গহলৌত সরকার। কিন্তু বিজেপির অভিযোগ, সেই প্রতিশ্রুতি আদৌ পালন করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। একই সঙ্গে রাজ্যবাসীর মন জয় করে ক্ষমতায় ফেরার প্রশ্নে কৃষকদের ঋণ মাফ, ডিজ়েলে ভর্তুকি, পড়ুয়াদের আর্থিক সাহায্য করার মতো বিষয়গুলি নিয়ে প্রচারের সময়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে ওই রাজ্যের কার্যনির্বাহী বৈঠকে আলোচনা হয়। বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছে, রাজ্যে ভোটারদের মন জয়ে কর্নাটকে যে ভাবে কংগ্রেস পাঁচ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেই কৌশলের প্রতিফলন ঘটবে রাজস্থানে। তাই পাল্টা পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতির পথে না হাঁটলে দলের ক্ষমতায় ফের বেশ কঠিন। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেবে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy